আমি জিপিএ ৫ পেয়ে যতটা না খুশি হয়েছি তার চেয়ে বেশি খুশি হবো যদি আমি আমার পছন্দের কলেজ ভর্তি হতে পারি। ভর্তি হওয়া নিয়ে এভাবেই নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করলেন মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থী সাকিব। গতকাল মঙ্গলবার তিনি সংবাদ প্রতিদিনকে বলেন, আমার দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ঢাকা কলেজে ভর্তি হওয়া। জানিনা ভর্তি হতে পারবো কিনা। একই মত ব্যক্ত করলেন রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী সামসুল হক খান স্কুল এন্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞানে জিপিএ ৫ পাওয়া আরেক শিক্ষার্থী রেদোয়ান সিদ্দিক। তিনি সংবাদ প্রতিদিনকে বলেন, আমার ইচ্ছা নটরডেম কলেজে ভর্তি হওয়া। আমার এলাকার এক বড় ভাই নটরডেম কলেজে পড়াশোনা করেছে। মূলত তার কাছ থেকেই আমি নটরডেমে পড়ার অনুপ্রেরণা খুজে পাই। এছাড়াও এখানের লেখাপড়ার মানও অনেক ভালো। তাই আমি এখানেই ভর্তি হতে চাই। কেবল এই দুই শিক্ষার্থীই নয় সারাদেশের পাস করা মেধাবীদের মনেও একই শঙ্কা কাজ করছে। জানা গেছে, একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি ফরম বিতরণ শুরু হচ্ছে আজ বুধবার থেকে। এবার উচ্চ মাধ্যমিক বা একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির ক্ষেত্রে আসনের কোন সংকট নেই। তবে মানসম্পন্ন কলেজের সংকট রয়েছে। বিশেষ করে জিপিএ ৫ প্রাপ্তরাই রয়েছে বেশি টেনশনে। কারন সারাদেশে ভালো কলেজের আসন সংখ্যা থেকে প্রায় তিনগুন শিক্ষার্থীই জিপিএ ৫ পেয়েছে। এছাড়াও ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিবে এ গ্রেড প্রাপ্তসহ অন্যরাও। গতবারের মতো এবারও জিপিএর ভিত্তিতেই কলেজে ভর্তি করা হবে। কোন ধরনের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেয়া যাবে না। তবে এক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম কেবল নটরডেম। তারা শিক্ষার্থীদেরকে ভর্তি পরীক্ষার ভিত্তিতে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করবেন। জানা গেছে, এবার ১১টি শিক্ষা বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ৪ হাজার ৮৬ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন। কিন্তু রাজধানী, বিভাগীয় শহরগুলোসহ সারা দেশে জেলা পর্যায়ে ভাল কলেজ খুবই সামান্য। ফলে মেধাবী হয়েও ভাল কলেজে শিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হবে তারা।তবে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য শহর পর্যায়ের কলেজে বাধ্যতামূলকভাবে ১০ ভাগ আসন সংরক্ষণ করার জন্য কলেজগুলোয় দেয়া নির্দেশ এবারও বহাল রয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, দেশে সাধারণ কলেজ, মাদ্রসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ৯ হাজার ৩১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আসন সংখ্যা রয়েছে প্রায় ২৭ লাখের বেশি। সে হিসেবে এসএসসি ও সমমান উত্তীর্ণ সব শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার পরেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ১৪ লাখ আসন খালি থাকবে।
ব্যানবেইসের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে ৭০টি, রংপুর বিভাগে ২৯টি, বরিশাল বিভাগে ১২টি, রাজশাহী বিভাগে পাঁচটি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭টি, খুলনা বিভাগে ১১টি এবং সিলেট বিভাগে ২২টি মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কলেজে স্ব-স্ব বিভাগের জিপিএ-৫-ধারীরাও ভিড় করলে সবার স্থান হবে না। আবার রাজধানীতে মোট ১৪৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণী রয়েছে। এসব কলেজে আসন আছে ৪৩ হাজার ৫১৯টি। এর মধ্যে ভাল মানের কলেজ আছে মাত্র ২০-২২টি, যেখানে আসন সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার কলেজগুলোর মধ্যে ভাল মানের কলেজ হিসেবে পরিচিত নটর ডেম কলেজে ২ হাজার ১৪০টি, ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৯৯০টি, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৬৫০টি, ঢাকা কলেজে ১ হাজার ১০০টি, হলিক্রস কলেজে ৪৯০টি, ঢাকা কমার্স কলেজে ৯০০টি, সরকারি বিজ্ঞান কলেজে ৪৭৫টি, বদরুন্নেসা মহিলা কলেজে ৮২০টি, ঢাকা সিটি কলেজে ১ হাজার ১৮০টি ও রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে ৪৫৫টি আসন রয়েছে। এ ছাড়া লালমাটিয়া গার্লস কলেজে ৬১৫টি, মতিঝিল মডেল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে ৪৩২টি, ঢাকা বিজ্ঞান কলেজে ৩৭০টি, বিএএফ শাহীন কলেজে ৬০৬টি, তেজগাঁও কলেজে ৪০২টি, শেখ বোরহানউদ্দিন কলেজে ১৯৯টি, রাইফেলস পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৫৬৫টি, অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজে ১৯৮টি, সরকারি গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে ১৪০টি, নবকুমার ইনস্টিটিউশনে ১০০টি, এসওএস হারম্যান মেইনার স্কুল অ্যান্ড কলেজে ১০৩টি, সরকারি বাঙলা কলেজে ৯৭২টি, মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় ইউনিভার্সিটি কলেজে ২০৭টি, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২০৯টি, সেন্ট জোসেফ স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৩৪টি, নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজে ২১৪টি, ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৬০টি, সিদ্ধেশ্বরী কলেজে ৬৭১টি, সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে ৬৫১টি, শেরেবাংলা বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৩০৯টি, সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজে ১ হাজার ৪৮৫টি এবং ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজে ৫১৪টি আসন রয়েছে। আসন্ন শিক্ষাবর্ষে (২০২৫-২৬) একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু হবে আজ বুধবার। যা চলবে ১১ আগস্ট পর্যন্ত। নির্ধারিত আবেদন ফি জমা দিয়ে সর্বনিু ৫টি ও সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ বা সমমানের প্রতিষ্ঠানের জন্য পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করতে হবে। একজন শিক্ষার্থী যতগুলো কলেজে আবেদন করবে, তার মধ্য থেকে শিক্ষার্থীর ফল, কোটা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও পছন্দক্রমের ভিত্তিতে ভর্তির জন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তার অবস্থান নির্ধারণ করা হবে। এরপর প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করা হবে ২০ আগস্ট। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়েও আবেদন করা যাবে। যাচাই-বাছাই শেষে ভর্তির কাজ হবে ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। আর একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হবে ১৫ সেপ্টেম্বর। এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, ঢাকার সচিব অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম সংবাদ প্রতিদিনকে বলেন, কলেজে জন্য পাস করা শিক্ষার্থীদের আসনের কোনো সংকট হবে না। কিন্তু সবাই তো তাদের পছন্দের কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে না। তাই আবেদনে কলেজ চয়েস দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে ভর্তিচ্ছুদের।