অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জুলাই অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া আন্দোলনকারীদের আহত অবস্থায় গুলি করা, লাশ পুড়িয়ে ফেলা, নিরস্ত্র মানুষের ওপর হামলাসহ বিভিন্ন নৃশংসতার বর্ণনা দিয়ে বলেন, শেখ হাসিনা এবং তার দোসররা যে অপরাধ বাংলাদেশে করেছে, আমার মনে হয় ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীও এত জঘন্য অপরাধ করেনি।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘জুলাই গণহত্যার বিচার আলোচনা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনী’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এসব কথা বলেন।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠান সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের কয়েকজন সদস্য।
ড. আসিফ নজরুল জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যাকারীদের বিচারের ব্যাপারে সরকারের ওপর বিশ্বাস রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখেন। আমরা আমাদের দায়িত্বে বিন্দুমাত্র অবহেলা করি না। এটা শুধু আপনাদের প্রতি দায় না, এটা আল্লাহর প্রতি দায় আমাদের। এরকম হত্যাকাণ্ডের বিচারের দায়িত্ব যারা পায়, তারা যদি বিচার না করে তাহলে আল্লাহ তাদের বিচার করবে।
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এত বড় গণহত্যা হয়েছে। বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই। একটা দল ১৫টা বছর শুধু মিথ্যার নির্যাতন করে চালিয়েছে। এখনো তাদের মিথ্যাচার বিন্দুমাত্র থামেনি। এখনো নির্যাতনের ইচ্ছা বিন্দুমাত্র থামেনি। আপনারা যখন শেখ হাসিনার অডিও শোনেন, দেখবেন এখনো তার নির্যাতন করার ইচ্ছা পুরোমাত্রায় আছে। এই বিচারের কোনো রকম যদি গাফিলতি থাকে, কোনো রকম ফল্ট থাকে বা যদি নাও থাকে, তারা সেটা এক্সপ্লোর করার চেষ্টা করবে।
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সঙ্গে বিচারিক পদ্ধতি মেনেই বিচার করা হচ্ছে। যাতে করে এই বিচার নিয়ে কখনো কোনো নেতিবাচক কথা উঠতে না পারে।
শহীদ ইয়ামিনের মৃত্যুর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ইয়ামিনের শ্বাস নেওয়ার শেষ মুহূর্ত আমাকে শুধু মনে করিয়ে দেয় যে আসলে কি রকম একটা দেশে আমরা বসবাস করতাম। যে একটা মানুষ বেঁচে আছে, তাকে বাঁচানোর চেষ্টা না করে যারা দেশ চালায় তারা তাকে মেরে ফেলতে চায়। তারা নাগরিকদেরকে পুড়িয়ে ফেলতে চায়।
দেশকে গোষ্ঠী আর দলীয় স্বার্থের ওপরে প্রাধান্য দিতে হবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন যদি দেশকে আমরা ব্যক্তি, গোষ্ঠী আর দলীয় স্বার্থের ওপরে রেখে পরিবর্তন না করি তাহলে বিচার শুধু একটা প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন হয়েই থাকবে। আর এই অন্যায়গুলো বারবার হয়তো হবে। কাজেই প্রাতিষ্ঠানিক বিচারের পাশাপাশি দেশ বদলানোর যে একটা বাসনা আছে, আমাদের সবাইকে সবসময় সজাগ থেকে ওই পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যেতে হবে।