প্রকাশ: বুধবার, ৩০ আগস্ট, ২০২৩, ৮:০৩ PM
এবারের বন্যায় শিক্ষাক্ষেত্রে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চট্রগ্রাম ও সিলেট বিভাগে প্রায় ১ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস পরীক্ষাসহ একাডেমিক সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকে ৭ দিন থেকে ২ মাস পর্যন্ত। প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থী এ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান করে। বন্যার করাল গ্রাসে ক্ষতিগ্রস্থ হয় ঘরবাড়ি, গবাদি পশু, রাস্তাঘাট, ব্রিজ কালবার্ট, হাট বাজারসহ নানা স্থাপনা। ফলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে কিন্ডারগার্টেন, উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসাগুলো প্রায় ৭ দিন থেকে ২ মাস পর্যন্ত বন্ধ বন্ধ রাখা হয়। তাই এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোন ক্লাস ও পরীক্ষা হয় নি। এদিকে আর মাত্র ৩ মাসের মধ্যেই স্ব স্ব ক্লাসের বার্ষিক তথা ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রনালয়। ফলে সময়মতো ক্লাসের কোর্স সম্পন্ন হওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে শিক্ষার্থীরা।
ফারহান শাহরিয়ার অর্ক নামের তৃতীয় শ্রেণীর এক ছাত্র বলেন, আমাদের স্কুল প্রায় ২ মাস বন্ধ ছিলো। আমরা পড়াশোনা করতে পারিনি। আমাদের কোর্স কিভাবে সম্পন্ন করবো। বন্যায় আমাদের স্কুলেরও অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমরা আমাদের স্কুলের সংস্কার চাই। পাশাপাশি আমাদের লেখাপড়ার যে ক্ষতি হয়েছে তার সমাধান চাই। রাকিব উদ্দিন নামের নবম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের কারণে সৃষ্ট বন্যায় চট্টগ্রাম বিভাগের ৩ জেলায় অন্তত ৫৭৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বন্যার পানি কমে গেলেও এখনো পর্যন্ত অনেক স্কুলে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলায় প্রায় ৮৮ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, দেড় সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ ছিল এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাতকানিয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাসহ মোট ২৭০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৩৪টিতে একাডেমিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছে। পানি নেমে গেলেও বেশিরভাগ স্কুলের ভবন এখনো শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার উপযোগী নয়। ক্লাস শুরু হতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তারা।
সাতকানিয়া উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মাহবুব বলেন, আমাদের উপজেলার অধিকাংশ স্কুল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক ভবন এখনো একাডেমিক কার্যক্রমের উপযোগী না। স্কুল ভবনগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিম উদ্দিন বলেন, কিছু প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে। সেগুলোতে আবার ক্লাস শুরু করতে বেশি সময় লাগবে।
এদিকে, চট্টগ্রাম নগরীসহ কয়েকটি উপজেলায় প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম খীসা। বন্যায় কক্সবাজারে ২৩৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সবগুলোতেই ইতোমধ্যে ক্লাস শুরু হয়েছে। চকরিয়া উপজেলার এইচএম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, কোমরসমান পানির কারণে আমরা স্কুল বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলাম। এক সপ্তাহ পর গত শনিবার আমরা আবার স্কুল খুলেছি। স্কুলের অধিকাংশ আসবাবপত্র পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
রাঙামাটিতে ৭১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন, আসবাব ও অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে এখনো পর্যন্ত ক্লাস শুরু করা যায়নি। রাঙ্গামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, স্কুল চত্বর থেকে পানি নেমে যাচ্ছে। কিন্তু ভবনে গর্ত ও কাদা রয়ে যাওয়ায় এসব স্কুলে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। ২-৩ দিনের মধ্যে সবগুলো স্কুলে আবার পাঠদান শুরু হবে বলে জানান তিনি। রাঙামাটির বেলাইছড়ি উপজেলার চাপচর বয়া বলেন, আমাদের বাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমার ছেলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। তার সব পাঠ্যবই ভেসে গেছে। জুলাইছড়ি উপজেলার উৎপল চাকমা বলেন, আমার মেয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। বন্যার কারণে তার স্কুল এখনো খোলা হয়নি। এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ সংবাদ প্রতিদিনকে বলেন, বন্যায় যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে সে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সে সব প্রতিষ্ঠানে সংস্কার কাজও শুরু হয়েছে বলে জানান শিক্ষার এ কর্তাব্যাক্তি। আমরা শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি।