শিরোনাম: |
নতুন বই হাতে পাওয়ার অনন্দটাই আলাদা
নিজস্ব প্রতিবেদক :
নতুন করে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচতে দেশের প্রত্যেক নাগরিককে কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে টিকাদান অভিযান সহজলভ্য করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে কেউ আবার করোনাভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত না হয় এবং কেউই যেন টিকাদান কাভারেজের বাইরে না থাকে।’ গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তার সরকারের টিকাদান কার্যক্রমের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষকদের প্রথমে দিয়েছি, এখন শিক্ষার্থীদের দিচ্ছি এবং ১২ বছর বয়স পর্যন্ত যারা, তাদের সবাইকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’ টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকের অনীহার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কথা বলে ব্যবস্থা নিয়েছি, সারাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর মাধ্যমে যেন এই টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত থাকে। একদম তৃণমূল পর্যায়ের মানুষও যেন দ্রুত টিকা নিতে পারে। কারণ, নতুনভাবে যাতে আবার সংক্রমিত না হয়, সে ব্যবস্থা আমাদের এখন থেকেই নিতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি আহ্বান জানাবো, আমরা এই টিকাদান কার্যক্রমটা একদম তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যেতে চাচ্ছি। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমেই দেওয়া হবে বা অন্যান্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমেও দেওয়া হবে। কিন্তু যারা টিকা নেননি, এখনই তাদের টিকাটা নিতে হবে।’ পরিবারের শুধু অভিভাবককে নয়, শিক্ষার্থীরাও যাতে টিকা নেয় সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
নতুন বই হাতে পাওয়ার অনন্দটাই আলাদা: বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে আজকের শিক্ষার্থীরা সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ছোট্ট সোনামনিরা নতুন বছরে নতুন বই পেতে যাচ্ছে। নতুন বই হাতে পাওয়ার অনন্দটাই আলাদা। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ পাওয়া, হাতে নেওয়া-এ একটা আলাদা অনুভূতি।’ প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, তারাও যেন পিছিয়ে না থাক এ জন্য আমরা ব্রেইল পদ্ধতিতে বই তৈরি করে দিচ্ছি। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদেরও তাদের নিজেদের ভাষায় বই তৈরি করে দিচ্ছি। এ রকম ৫টি ভাষায় আমরা বই তৈরি করে দিয়েছি। যাতে তারা তাদের ভাষাটা ভুলে না যায়।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘করোনার কারণে বই উৎসব আমরা করতে পারছি না। কিন্তু আমরা বই বিতরণ করছি। গতবারও করোনার কারণে উৎসব করতে না পরলেও বই পৌঁছে দিয়েছি। তাছাড়া সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে আমরা শিক্ষাকার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। ছেলেমেয়েদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা নিতে ব্যবস্থা নিয়েছি। তারা যেন পিছিয়ে না থাকে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করার সময় এই অনুষ্ঠান করছি। যার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি, বাঙালি জাতি হিসেবে আÍপরিচয় পেয়েছি, বাংলাদেশ নামক একটা দেশে পেয়েছি। তাকেই ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে হত্য করা হয়। একই দিনে আমরা মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, আমার তিন ভাই, সেইসঙ্গে আমার পরিবারের অনেক সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে একসময় মানুষের শিক্ষার সুযোগ ছিল না। আমাদের মাতৃভাষার অধিকার পর্যন্ত তারা কেড়ে নিতে চেয়েছিল। যখন আমাদের ভাষা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল, তখন বঙ্গবন্ধু আন্দোলন করেন। তিনি কারাবরণও করেন। মানুষ যতে উন্নত জীবন পায়, শিক্ষা পায়, এ জন্য তিনি কাজ করে গেছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুদ্ধপরবর্তী একটি বিধ্বস্ত দেশে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন। তিনি বিনামূল্য পাঠ্যপুস্তক বিতরণ এবং শিক্ষার্থীদের কাপড় বিতরণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষাকে সম্পূর্ণভাবে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করেন। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায়ও গুরুত্ব দেন। বিজ্ঞানী ড. কুদরাত-এ খুদাকে প্রধান করে একটি কমিশিন গঠন করে দেন। যেন একটা উন্নত শিক্ষার ব্যবস্থা হয়। কিন্তু তিনি তা বস্তবায়নের সুযোগ পাননি। তাকে হত্যা করা হলো। পরে যারা সরকারে আসে তারা আর এটি এগিয়ে নিতে পারিনি। ২১ বছর এভাবে চলতে থাকে। ২১ বছর পর সরকারে এসে আমরা আবার শিক্ষা কমিশন গঠন করি এবং ভকেশনাল ও বিজ্ঞান শিক্ষাকে গুরুত্ব দিই।’
বাচ্চারা মাস্ক খুলে রাখছে কেন, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর: শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার সময় বাচ্চাদের মুখের মাস্ক নামানো দেখে উদ্বেগ জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী হাততালি দিয়ে উৎসাহ দেন এবং অভিনন্দন জানান। এ সময় প্রাথমিকের কয়েকজন শিক্ষার্থী মুখের মাস্ক নামিয়ে বই নিতে মঞ্চে গেলে প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। তিনি বলেন, বাচ্চাদের মাস্ক খুলে রাখছে কেন? এটা তো ঠিক হয়নি। ছোট ছোট বাচ্চাদের কিন্তু (কোভিড) হচ্ছে।
মহামারীর কারণে নিজ হাতে বাচ্চাদের হাতে বই তুলে দিতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করে অনুষ্ঠানে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন সরকার প্রধান। মহামারীর কারণে এবারও বছরের প্রথম দিন স্কুলে স্কুলে বই উৎসব হবে না। উৎসব না হলেও ৪ জানুয়ারি থেকে সারা দেশে যাতে শিক্ষার্থীরা বই পায়, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে জানান।