ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘিরে দেশে গত কয়েকদিনে বেশ কিছু সহিংস ঘটনা ঘটেছে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ দলটি ‘লকডাউন’, ‘শাটডাউনের’ মতো কিছু কর্মসূচিও দিয়েছে। নির্বাচন ঘিরে এক ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতাও বিরাজ করছে দেশে। সবমিলিয়ে এর প্রভাব পড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্যে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও তারা উদ্বিগ্ন। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার সঙ্গে চলমান সহিংসতা প্রভাব ফেলছে ব্যবসায়। এমনিতেই গত কয়েক বছরের উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অনেক মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। এর মধ্যে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণের আতঙ্কে পণ্যের চাহিদার গতি আরও কমেছে। কমে গেছে বেচাকেনাও। সবমিলিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি অনুকূলে নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, গত ১২ নভেম্বর আওয়ামী লীগের ডাকা ‘লকডাউন’ কর্মসূচি এবং ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনার রায়ের দিন এবং এর পরের দিন ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ছিল। বাসে আগুন, পেট্রোলবোমা, ককটেল বিস্ফোরণ বেশি আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ঢাকা শহরের অনেক মানুষ বাইরে বের হওয়ার সাহস করেননি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া।
চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব ব্যবসা-বাণিজ্যে
এসব ঘটনার প্রভাবে খুচরা ও পাইকারি বাজারে কেনাকাটায় কিছুটা স্থবিরতা ছিল। ঢাকার অনেক পাইকারি বাজারে কেনাকাটা কম হয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা আসতে পেরেছেন কম।
এখন আমিও যখন বাসা থেকে বের হই, বাসায় বলে আজ যেও না, গণ্ডগোল হতে পারে। এই যে মানুষের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা, সেটা কাটছে না।- মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বশির উদ্দিন
ঢাকার ব্যবসাকেন্দ্র পুরান ঢাকার ইংলিশ রোড, বংশাল, শ্যামবাজার ও মৌলভীবাজার ঘুরে কেনাবেচায় বেশ স্থবিরতা দেখা যায়। পাশাপাশি রাজধানীর বসুন্ধরা শপিংমল, পল্টনের চায়না টাউন মার্কেট, মৌচাক মার্কেট ও খিলগাঁও এলাকার বিপণিবিতানগুলোতে ক্রেতা ছিল কম। ক্রেতার অপেক্ষায় অলস সময় পার করেছেন বেশিরভাগ বিক্রেতা। একই অবস্থা ছিল হোটেল-রেস্তোঁরা, বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেও।
চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব ব্যবসা-বাণিজ্যে
মৌচাক মার্কেটে নিউ জড়োয়া ফ্যাশনের কর্ণধার ফিরোজ আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের তৈরি আতঙ্কে বাজারে আসছেন না মানুষ। আমাদের বিক্রি কমে গেছে। আগে দিনে ১০-১২ হাজার টাকার কেনাবেচা হলেও এখন অর্ধেকও হচ্ছে না। মানুষ নিছক প্রয়োজন ছাড়া মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসছে না।’
বিক্রি কমেছে ফুটপাতেও। নিউমার্কেটের ফুটপাতে শীতের পোশাক বিক্রেতা এজাজুল বলেন, ‘এখন শীতের পোশাকের রমরমা বিক্রির সময়। কিন্তু হুটহাট ককটেল আর বাসে আগুন দেওয়ায় অনেকে ভয়ে মার্কেটে আসছে না। বিক্রিও হচ্ছে না। পুরো নিউমার্কেট এলাকায় এখন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ক্রেতা অর্ধেক থাকে।’
আমরা যাদের কাছ থেকে পণ্য কিনছি, বিক্রি করছি- সবখানে স্থবিরতা রয়েছে। তবে এটি একটি ট্রানজিশন পিরিয়ড। আশা করছি দ্রুত এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠবে দেশ।- বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী
একইভাবে বিক্রি কমেছে পাইকারি বাজারেও। ঢাকার সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বশির উদ্দিন বলেন, ‘এখন আমিও যখন বাসা থেকে বের হই, বাসায় বলে আজ যেও না, গণ্ডগোল হতে পারে। এই যে মানুষের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা, সেটা কাটছে না।’
তিনি বলেন, ‘এ কারণে ঢাকার বাইরে থেকে অনেক পাইকারি ক্রেতা বাজারে আসছে না। গাড়ি-ঘোড়াও কম চলে। বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে। শুধু ঢাকার কিছু লোকজন আসছে।’
চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব ব্যবসা-বাণিজ্যে
একই ধরনের বিক্রি কমার কথা বলেছেন নিত্যপণ্যের অন্যতম বাজার পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিনও।
কারওয়ান বাজারের আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘অস্থিতিশীলতায় সরবরাহ কমায় এখন অনেক সবজির দাম বাড়ছে এই কথিত লকডাউন আর শাটডাউনে।’
বড় বড় করপোরেট ব্যবসায়ীরাও কথা বলছেন একই সুরে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশের অন্যতম শীর্ষ ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যাদের কাছ থেকে পণ্য কিনছি, বিক্রি করছি- সবখানে স্থবিরতা রয়েছে। তবে এটি একটি ট্রানজিশন পিরিয়ড। আশা করছি দ্রুত এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠবে দেশ।’