বাজারে চড়া দামের দেওয়াল তুলে দিয়েছে মাছ ও দেশি মুরগি। বিপরীতে ব্রয়লার মুরগির দাম তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর বাজারগুলোতে দেশি মুরগির দাম প্রতি কেজি ৬০০ টাকা আর সোনালি মুরগি ৩২০ টাকার ঘরে, অন্যদিকে ব্রয়লার মাত্র ১৭০ টাকায় কেজি বিক্রি হচ্ছে। এমন অবস্থায় মধ্যবিত্ত থেকে নিম্ন-আয়ের মানুষের প্রাণিজ প্রোটিনের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে এটি।
সকালে সরেজমিনে রাজধানীর উত্তরার সমবায় বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি মোরগ-মুরগির দাম প্রতি কেজি প্রায় ৫৫০-৬০০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা কেজি দরে। আর সোনালী ক্রসের দাম ২৯০ টাকা। আর ব্রয়লার মুরগির বর্তমান বাজারদর কেজিপ্রতি ১৭০ টাকা। যা অন্য যেকোনো মুরগির চেয়ে প্রায় অর্ধেক বা তারও কম।
অপরদিকে মুরগি বিক্রেতারাও জানালেন চাপে থাকার কথা। বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ব্রয়লারের দাম কম, তাই বিক্রিও বেশি। কিন্তু আমাদের লাভের মার্জিন খুবই কম। পরিবহন ও অন্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় মুনাফা থাকে না। তবুও চাহিদা থাকায় ব্যবসা ধরে রাখা যাচ্ছে।
আলমগীর হোসেন নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, সোনালী-দেশি মুরগির খাবার ও রাখার খরচ অনেক বেশি। সেই তুলনায় ব্রয়লারের উৎপাদন খরচ কম, বিক্রিও দ্রুত। তাই এখন অনেকেই দেশি মুরগির বদলে ব্রয়লার ফার্মে বিনিয়োগ করছেন। যার কারণে এর বাজারদর কিছুটা কম। সামনে শীতকাল আসছে। হয়তো দাম আরও কমে যাবে।
এই বিক্রেতা আরও বলেন, ক্রেতারা আসেন, মুরগির দাম শুনে চলে যান। আবার ফিরে আসেন ব্রয়লার নিতে। মাছের চেয়ে ব্রয়লারের দাম কম থাকায় চাহিদাও বেশি।
এর বিপরীতে ক্রেতারা বলছেন, সবকিছুর চড়া দামের মধ্যে ব্রয়লার মুরগির দামই কিছুটা কম। যার কারণে অধিকাংশ মানুষই ব্রয়লার বেশি নিচ্ছেন।
জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ক্রেতা বলেন, পরিবারে প্রতি সপ্তাহে একবার মাংস তো চাই-ই। দেশি মুরগি কিংবা মাছ কেনার সামর্থ্য আমার নেই। ব্রয়লার দামে স্বস্তি থাকতেই আমি এটা কিনি। স্বাদ কম হলেও পেট ভরাতে পারছি এটাই বেশি।
অন্যদিকে প্রোটিনের আরেক উৎস মাছের দামও এখন আকাশছোঁয়া। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব ধরনের মাছের দামই প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। এর মধ্যে বড় রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, মাঝারি রুই ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা ও ছোট রুই ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি। কাতল মাছের দাম ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, শিং মাছ ৫৫০ টাকা, মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা এবং তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২২০ টাকা, সিলভার কার্প মাছ ২৫০-৩০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৫০০-৭০০ টাকা, কালিবাউশ মাছ ৪৫০ টাকা, আইড় মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া, অন্যান্য মাছের মধ্যে ছোট চিংড়ি ৩০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৪৫০ টাকা, মলা মাছ ৩০০ টাকা, পাবদা মাছ আকারভেদে ৩০০-৬০০ টাকা, গলদা চিংড়ি আকারভেদে ৬৫০-৭৫০ টাকা কেজি দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
একই বাজারের ফিশারিজ মার্কেটের বিক্রেতা আব্দুস সালাম বলেন, গত কয়েক মাস ধরে প্রায় সব মাছের দাম স্থির আছে, কিন্তু এটাই সমস্যা। পাইকারি দাম কমেনি, জ্বালানি ও পরিবহন খরচ বেড়েছে। রুই-কাতলার দাম ৩৫০-৪৫০ টাকা, এটা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। এখন শিং-মাগুর ৫০০ টাকার উপর, সেটাও মধ্যবিত্তের কেনার ক্ষমতায় নেই। পাঙাশ-তেলাপিয়াই এখন বিক্রি বেশি, কারণ সেটা ২০০ টাকার আশপাশে আছে।
আরেকজন মাছ বিক্রেতা রেজাউল করিম জানান, মাছের চাহিদা কমেছে। মানুষ এখন ব্রয়লার মুরগির দিকে ঝুঁকছে। গলদা চিংড়ি ৭০০ টাকা কেজি, বোয়াল ৬০০ টাকা। এসব এখন শুধু উচ্চবিত্ত বা বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্যই কেনা হয়। সাধারণ দিনে ক্রেতারা ১৫০-২০০ টাকার তেলাপিয়া বা পাঙাশই দেখছেন।