বুধবার ২৬ মার্চ ২০২৫ ১২ চৈত্র ১৪৩১
 
শিরোনাম:


ট্রাম্প এর প্রভাব পড়বে দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে
রাজু আলীম
প্রকাশ: শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৪, ৫:২৫ PM আপডেট: ১৬.১১.২০২৪ ৫:২৮ PM

নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ এবং তার প্রশাসনের পদক্ষেপগুলো শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, সারা বিশ্বের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশেও ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। ক্ষমতায় গ্রহণের পর নীতি, বিদেশনীতি, বৈশ্বিক সম্পর্ক, বাণিজ্য এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এক নতুন রূপ পেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও অর্থনীতি- ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে "আমেরিকা ফার্স্ট" নীতির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, কর্মসংস্থান, এবং আমেরিকান অর্থনীতির পুনর্গঠনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি এবার সম্ভবত এটি আরও কড়া ভাবে অনুসরণ করবেন।
অভিবাসন বিষয়ে ট্রাম্পের কঠোর অবস্থান তার ক্ষমতায় ফেরার সঙ্গে আরও জোরদার হতে পারে। বিশেষত, সীমান্ত নিরাপত্তা বাড়ানো ও অভিবাসন সীমাবদ্ধ করার নীতিতে তিনি আরও জোর দিতে পারেন। এতে অভিবাসনপ্রত্যাশী দেশগুলোতে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাব পড়তে পারে। ট্রাম্পের ঘরোয়া নীতির ফলে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভাজন আরও বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে বর্ণবাদ, সমকামিতা এবং নারীবাদ সম্পর্কিত বিতর্ক আরও তীব্র হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, অর্থনীতি এবং বৈদেশিক সম্পর্কের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়তে পারে। তার কঠোর জাতীয়তাবাদী এবং রক্ষণশীল নীতিগুলির পুনঃপ্রবর্তন মার্কিন সমাজে বিভাজন এবং বৈশ্বিক মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে কিছু বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে। ২০২০ সালের নির্বাচনের পর ট্রাম্প এবং তার সমর্থকরা নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, যার ফলে ২০২১ সালের ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার মতো ঘটনা ঘটেছিল। আবারও তিনি ক্ষমতা নেয়ার পর এই বিষয়ে বিতর্ক পুনরায় তীব্র হতে পারে, এবং তার প্রশাসন হয়তো গণতন্ত্র ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে আরও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে। ট্রাম্পের সময় রক্ষণশীল এবং উদারনৈতিকদের মধ্যে বিভাজন আরও তীব্র হতে পারে, কারণ তিনি অনেক সময় বিতর্কিত মন্তব্য করেন যা বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। ট্রাম্পের "আমেরিকা ফার্স্ট" নীতি হয়তো আবারও অর্থনৈতিক নীতিতে প্রভাব ফেলবে। এর ফলে তিনি হয়তো আবারও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য আমদানি শুল্ক আরোপ বা বিদ্যমান চুক্তিগুলোর পুনর্মূল্যায়ন করবেন। তার প্রশাসন সম্ভবত দেশীয় উৎপাদন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে জোর দেবে। তবে, তার কঠোর অভিবাসন নীতি এবং আমদানি নীতির ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে কিছু খাতে শ্রম সংকট দেখা দিতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তাদের ব্যয় বাড়তে পারে।
ট্রাম্পের সময় যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক নেতৃত্ব কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল। এবার আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। তার জাতীয়তাবাদী নীতিগুলো মিত্রদের সাথে সম্পর্ক জটিল করতে পারে এবং ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যগত বিশ্বনেতৃত্বের ভূমিকা সংকটে পড়তে পারে। ট্রাম্পের প্রশাসন চীনের বিরুদ্ধে অনেক শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেছিল। আবার ক্ষমতায় এলে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়তো আরও জোরালো হবে। বাণিজ্যিক সংঘাত বাড়লে বিশ্ববাজারে তা আরও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। ট্রাম্পের প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্কও কিছুটা টানাপোড়েনের মধ্যে ছিল। ন্যাটো নিয়ে তার সমালোচনা ও আর্থিক অংশীদারিত্বের ব্যাপারে কড়া অবস্থানের কারণে ইউরোপীয় দেশগুলো নিরাপত্তা নীতিতে স্বনির্ভর হওয়ার দিকে আরও এগোতে পারে। ট্রাম্পের প্রশাসন রাশিয়ার বিষয়ে তুলনামূলক নমনীয় ছিল। তার প্রশাসন হয়তো রাশিয়ার প্রতি আরও সমর্থনমূলক পদক্ষেপ নিতে পারে। তবে এতে ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ইউরোপে স্থিতিশীলতার ওপর কী প্রভাব পড়বে, তা নজর দেওয়ার বিষয়। ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য নীতি ইসরায়েলকে প্রাধান্য দিয়েছে এবং আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে। দ্বিতীয়বার তার প্রশাসন হয়তো এই উদ্যোগগুলোকেই আরও এগিয়ে নিতে চাইবে।

ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে একটি কৌশলগত মিত্র হিসেবে দেখে। দ্বিতীয় মেয়াদে এলে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিবেশে পরিবর্তন আসতে পারে। উত্তর কোরিয়ার সাথে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে কিছু বিতর্কিত আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তার পুনরায় ক্ষমতায় আসা এই পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করতে পারে, বিশেষত পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ইস্যুতে। ট্রাম্প প্রথমবার প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়েছিলেন। দ্বিতীয়বারও তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, যার ফলে বৈশ্বিক জলবায়ু নীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং বিভিন্ন দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ক্ষেত্রে ভিন্ন অবস্থান নিতে পারে।
নির্বাচনে জয়ী  ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক রাজনীতিতে অনেক পরিবর্তন আসতে পারে। তার প্রশাসনের শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী ও রক্ষণশীল নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিবেশ আরও বিভক্ত হতে পারে।

লেখক : রাজু আলীম, কবি, সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব।







আরও খবর


 সর্বশেষ সংবাদ

স্বাধীনতা দিবসে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে বিএনপির শ্রদ্ধা
মেসিকে ছাড়াই ব্রাজিলকে এক হালি গোল দিল আর্জেন্টিনা
টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করতে পারলেই রেল লাভের মুখ দেখবে: রেলপথ উপদেষ্টা
সংস্কার ও বিচারবিহীন নির্বাচন মেনে নেওয়া হবে না: নাহিদ
বাংলাদেশের জনগণকে অভিনন্দন জানালেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
আরো খবর ⇒


 সর্বাধিক পঠিত

"ফিলিস্তিনের জনগণের সঙ্গে সংহতি এবং গাজার উপর ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ"
সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির ফ্ল্যাট জব্দ, ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ
ত্রিশালে বিএনপির দোয়া ও ইফতার মাহফিল
যুবদলের পরিচয় দিয়ে সিরিয়াল চাঁদাবাজি করা হাফিজ ওরফে ময়লা হাফিজ নামে এক চাঁদাবাজ গ্রেফতার
সোনারগাঁ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টয়লেটের পাইপ থেকে নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার
প্রকাশক: এম এন এইচ বুলু
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মাহফুজুর রহমান রিমন  |   উপদেষ্টা সম্পাদক : রাজু আলীম  
বিএনএস সংবাদ প্রতিদিন লি. এর পক্ষে প্রকাশক এম এন এইচ বুলু কর্তৃক ৪০ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বুলু ওশেন টাওয়ার, (১০তলা), বনানী, ঢাকা ১২১৩ থেকে প্রকাশিত ও শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ফোন:০২৯৮২০০১৯-২০ ফ্যাক্স: ০২-৯৮২০০১৬ ই-মেইল: spnewsdesh@gmail.com