প্রকাশ: রোববার, ১৮ জুলাই, ২০২১, ৩:৫৭ পিএম |
রাজধানীর তোপখানা এলাকায় ১২ বছর বয়সী শিশু গৃহকর্মী সুইটিকে নির্যাতনের ঘটনায় শাহবাগ থানার মামলায় আসামি তানভীর আহসান পায়েল ও তার স্ত্রী নাহিদ জাহান আখির একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রোববার ঢাকা মহানগর হাকিম আবু সাঈদের আদালত শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ৫ জুলাই রাজধানীর শাহবাগ থানায় ভুক্তভোগীর বাবা শহিদ মিয়া বাদী হয়ে আসামি তানভীর আহসান পায়েল ও তার স্ত্রী নাহিদ জাহান আখির বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর আদালত মামলার এজাহার গ্রহণ করে আগামী ২ আগস্ট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত ৩ দিবাগত রাতে সেগুনবাগিচার বাসা থেকে তাদের গ্রেফতার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। তার পরদিন ৪ জুলাই ফৌজদারি কার্যবিধি ৫৪ ধারায় আসামিদের গ্রেফতার দেখিয়ে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এরপর আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মামলার বাদী শহিদ মিয়া সংসারের অভাব অনাটনের কারণে গত ৯ মাস আগে তার মেয়ে সুইটিকে গৃহ পরিচালিকা হিসেবে কাজ করার জন্য মাসিক তিন হাজার টাকা ধার্য করে আসামি তানভীর আহসান পায়েল ও তার স্ত্রী নাহিদ জাহান আখি নিয়ে যায়। এরপর বাদী আসামিদের থেকে দুই মাসে মোট ছয় হাজার টাকা গ্রহণ করেন। কিন্তু এরপর থেকে আসামিরা বিগত সাত মাসে বাদী বা ভুক্তভোগী সুইটিকে কোন টাকা পয়সা দেয়নি। এরই মধ্যে মামলার বাদী ও ভুক্তভোগীর বাবা শহিদ মিয়া তার মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে যায়। কিন্তু তার সঙ্গে আসামিরা ভুক্তভোগী সুইটির দেখা ও মোবাইলে কথা বলতে দেয়নি। গত ৩ জুলাই রাতে শাহবাগ থানার পুলিশ বাদীকে ফোন জানায়, গত ১ জুলাই তার মেয়ে সুইটিকে আসামি তানভীর আহসান পায়েল ও তার স্ত্রী নাহিদ জাহান আখি মারপিট করে গুরুতর জখম করেছে। বর্তমানে সুইটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
চিকিৎসাধীন সুইটি জানান, সে ঠিকমতো কাজ না করার অযুহাতে আসামি তানভীর ও তার স্ত্রী নাহিদ বিভিন্ন কারণে অকারণে তাকে দীর্ঘদিন যাবৎ অমানবিকভাবে মারপিট করতো। কিন্তু মারপিটের ঘটনা আসামি নাহিদের পিতা, মাতা ও ভাইবোনকে জানালেও তারা কোন কর্ণপাত করেনি।
এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, গত ১ জুলাই বেলা ১১ টার দিকে আসামিরা বিভিন্ন কাজের অজুহাতে ঘরে থাকা লাঠি দিয়ে সুইটির হাতে, পায়ে, পিঠে ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের মাধ্যমে জখম করে। একইদিন রাত ১০ টার দিকে সুইটির পরিহিত কাপড় খুলে ওড়না দিয়ে হাত বেধে ইলেকট্রনিক মশা মারার ব্যাট দিয়ে তার পশ্চাতদেশে শক দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে। রুটি তৈরির কাঠের বেলুনি দিয়ে সুইটির দুই হাটু, পা, পিঠে এবং দুই হাতের বিভিন্ন জায়গায় ও বাম চোখের উপরে ও যৌনাঙ্গে আঘাত করে। যার ফলে সুইটির যৌনাঙ্গ বিকৃতসহ ক্ষতবিক্ষত হয়। আসামি নাহিদ ভুক্তভোগী সুইটির চোখে, মুখে ও যৌনাঙ্গে মরিচ লাগিয়ে দেয়। সুইটি জীবন বাঁচানোর জন্য আসামিদের বাসা থেকে পালানোর চেষ্টা করলে ভাত খেতে না দিয়ে তাকে বাথরুমে আটকিয়ে রাখা হয়। গত ৩ জুলাই বাথরুম থেকে সুইটি বের হয়ে ঘরে রাখা বিস্কুট খাওয়ার কারণে আসামিরা রাগান্বিত হয়ে তাকে মারধর করে। এরপর ভুক্তভোগী সুইটি জীবন বাঁচানোর জন্য পালিয়ে পাশ্ববর্তী এলাকায় আশ্রয় নেয়।