শিরোনাম: |
নিজস্ব প্রতিবেদক :
খাল-বিলে অবহেলায় পড়ে থাকা জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানা থেকে নারীদের তৈরি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। বন্যার ভাঙনে শত শত পরিবারের নিঃস্ব গৃহিণী আর স্কুল-কলেজপড়ুয়া ছাত্রীরা এবার ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে কচুরিপানার ওপর ভর করে। ফেলনা উদ্ভিদ কচুরিপানাকে অর্থকরী পণ্যে রূপান্তরের মধ্যদিয়ে স্বনির্ভর জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখছেন গাইবান্ধা সদর ও ফুলছড়ি উপজেলার নারীরা। নদীভাঙনে সর্বহারা বাড়ির কর্তারা মাছের আশায় ভেসে বেড়ান ব্রহ্মপুত্র নদীতে। তখন গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার হঠাৎপাড়ায় নারী শিশুরা ব্যস্ত ফুলের টব তৈরিতে। আর এই টবের উপকরণ খাল-বিলের জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানা। বাড়ির গৃহিণী আর মেয়েদের অলস সময় লাগিয়ে তাদের হাতে কর্মের জোগানদাতা উদ্যোক্তা সুবাস চন্দ্র জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে কচুরিপানা দিয়ে তৈরি করা এসব ফুলের টব। টব তৈরি করে সদর ও ফুলছড়ি উপজেলার দুই শতাধিক নারী এখন সংসারের উপার্জনক্ষম মানুষ। তিনি জানান, বিদেশি ক্রেতাদের আগ্রহে মাস খানেক আগে ফুলছড়ির মদনের পাড়ায় পানা থেকে ফুলের টব তৈরির এই কাজ শুরু করেন তিনি। সদরের গিদারী ইউনিয়নের বাসিন্দা শাহরিয়ার হোসেন বলেন, দুই দিন আগেও শুধু স্বামীর আয়ের ওপর নির্ভরশীল নারীরা যখন অকেজো কচুরিপানা দিয়ে নিজেরাই আÍনির্ভর তখন তার মতো অনেকেই বিস্মিত। ঢাকার প্রতিষ্ঠান ইকো বাংলা জুট লিমিটেডের মাধ্যমে পানা থেকে তৈরি করা এসব ফুলের টব পাঠানো হয় ডেনমার্ক, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। গ্রাম-গঞ্জের খাল-বিলে অযতœ-অবহেলায় পড়ে থাকা জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানার এখন কদর বেড়েছে।
প্রতি কেজি কচুরিপানা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে। সুভাষ চন্দ্র প্রতি মাসে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার কচুরিপানা কিনে নারীদের সরবরাহ করেন। সদর ও ফুলছড়ি উপজেলার চারটি কেন্দ্রে আড়াইশ’ নারী ও কিশোরী এসব কচুরিপানার শুকনো ডাটা থেকে তাদের হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় তৈরি করেন ফুলের টব।
হঠাৎপাড়ার স্কুলছাত্রী সোমা জানান, করোনার কারণে স্কুল বন্ধ। অবসর সময়টা নষ্ট না করে তিনি কচুরিপানার টব তৈরি করেন। একটা টব তৈরি করে ২০ টাকা আয় করেন। সারাদিনে ১০টা টব তৈরি করলে ২০০ টাকা আয় করা সম্ভব। মাস শেষে অনায়াসে ছয় হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। এখানে কাজ করতে আসা গৃহিণীরা জানান, গৃহস্থালির কাজকর্ম সেরে তিনি কচুরিপানা দিয়ে ফুলের টব বানান। এই আয় থেকে নিজের হাত খরচ ছাড়াও সংসারের টুকটাক খরচ করতে পারছেন।