![](https://www.dainiksangbadpratidin.com:443/2024/05/14/sp_1715705280.jpg)
নিজে করেছেন ছাত্রশিবিরের রাজনীতি। বাবা ছিলেন বিএনপি নেতা। কিন্তু চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যের আশীর্বাদ নিয়ে। এই প্রার্থীর নাম ওমর ফারুক রুমী। তিনি উপজেলা নির্বাচনে আনারস প্রতীকের প্রার্থী হয়েছেন। যা নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে। কিন্তু সংসদ সদস্য মেজর (অব.) রফিকুল ইসলামের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। শুধু তাই নয়, নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনী হলফনামায় প্রার্থীকে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা আছে কিনা, কিংবা কোনো মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন কিনা তা উল্লেখ করার কথা। কিন্তু চলমান ষষ্ঠ দফা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোটে প্রতারণাসহ একাধিক মামলার তথ্য লুকিয়ে প্রার্থী হয়েছেন ওমর ফারুক রুমী। এমন অবস্থায় আগামী ২১ মে অনুষ্ঠ্যেয় এই নির্বাচনকে সামনে রেখে ওমর ফারুকের প্রার্থীতা বাতিল চেয়ে আবেদন জমা পড়েছে খোদ নির্বাচন কমিশনে। জানা গেছে, ওমর ফারুক পড়াশোনা করেছেন কুমিল্লার ইবনে তাইমিয়া স্কুলনএন্ড কলেজে। তার বাবা মো. নুরুল ইসলাম ছিলেন চিতশীপূর্ব ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি। পুরো পরিবার বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও হঠাৎ সংসদ সদস্যের আশীর্বাদ নিয়ে ভোটের মাঠে নামায় নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। অভিযোগ উঠেছে, ইঞ্জিনিয়ার মকবুল হোসেন পাটোয়ারী ঘোড়া প্রতীক নিয়ে এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। কিন্তু তার অসংখ্য নেতাকর্মীকে সংসদ সদস্যের লোকজন হুমকি ধামকি দিয়ে আনারসের প্রতীকের পক্ষে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে সংসদ সদস্য মেজর (অব.) এম রফিকুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। এদিকে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া ২৬ পাতার অভিযোগপত্রের সঙ্গে মামলার কপি, হলফনামায় তথ্য গোপনের কাগজও জুড়ে দেয়া হয়েছে। শাহরাস্তির বাসিন্দা মো. সফিউল আজম স্বপন নামে একজন ভোটার নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দেয়ার আগে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক, রিটানিং কর্মকর্তার (অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক) কাছেও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ ও অন্যান্য দলিলপত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওমর ফারুক রুমীর বিরুদ্ধে ঠিকাদারি কাজে অংশীদারির নামে প্রতারণাসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআইয়ের) তদন্তে প্রতারণা মামলার করা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
আদালত সমন জারি করার পরও এই ব্যক্তি হাজির হননি বলেও দাবি করা হয়েছে অভিযোগপত্রে।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার গাজীখালী নদীর ১৫ কিলোমিটার খাল খননের ঠিকাদারি কাজে অংশীদারির নামে ওমর ফারুক ২ হাজার ২০ সালে বিয়ন্ড মিডিয়ার কাছ থেকে বিভিন্ন সময় মোট সাড়ে তিন কোটি টাকা নেন। পরে কাজটি না হলেও সেই টাকা ফেরত দেননি ওমর ফারুক। টাকা পরিশোধে এক পর্যায়ে বিয়ন্ড মিডিয়াকে ২৫ লাখ টাকার দুটি চেক দেন তিনি। তবে চেকের বিপরীতে তহবিল অপ্রতুল উল্লেখ করে চেক ফেরত দেয় আইএফআইসি ব্যাংকের বনানী শাখা।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মো. ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা-৪০৬, ৪২০ ও ৫০৬ এর অধীনে বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট নং-৬, ঢাকায় একটি চলমান প্রতারণার মামলা নং- সি, আর মামলা- ৭৮৯/২০২২ ও দি নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট এ্যাক্ট, ১৮৮১ এর ধারা-১৩৮ এর অধীনে আরো একটি চলমান মামলা নং-সি, আর মামলা-২৪২১/২০২২ এর সত্যতা পাওয়া যায়। উক্ত প্রতারণার মামলায় বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে পিবিআই ওমর ফারুককে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সার্বিক তদন্তে উক্ত প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত পিবিআই গতবছরের ৫ এপ্রিল উক্ত প্রতিবেদনটি দাখিল করলে তা আদালতে গৃহীত হয়।
বিষয়টি নিয়ে মামলার বাদিপক্ষের আইনজীবী তুহিন হাওলাদার বলেন, ওমর ফারুক তুহিনের বিরুদ্ধে চলমান অর্থ আত্মসাৎ মামলায় পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। তার জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। আদালত ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছে এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, আসামি আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় কোর্টের আগামী কার্য দিবসে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন করা হবে। অন্যদিকে অভিযুক্ত ওমর ফারুক রুমির কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এই বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না, আদালতের সমনও তার কাছে আসেনি।
ওমর ফারুক রুমির বিরুদ্ধে মামলা দুটি চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ঢাকায় বিচারাধীন রয়েছে। শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাচনে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগকারী মো. সফিউল আজম স্বপন বলেন, ‘বিবেকের তাড়নায় আমি অভিযোগ দিয়েছি। কারণ যে আমার এলাকার জনপ্রতিনিধি হবেন সে শুরুতেই মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। হলফনামায় নিজের মামলার কথা এড়িয়ে গেছেন। তাই আমি নিজের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করেছি। এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়ার কোনো নজির দেখছি না। সে তো নির্বাচন করছে।’
অভিযোগ দেয়ার কারণে বিভিন্নভাবে তাকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, কেন অভিযোগ করলাম তা নিয়ে বিভিন্নভাবে আমার কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে।’
অবশ্য অভিযোগের বিষয়ে একাধিকবার ওমর ফারুকের ব্যক্তিগত নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। অভিযোগের বিষয় নিয়ে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও রিটানিং কর্মকর্তা বশির আহমেদ অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে অভিযোগ দেয়ার সময় অতিক্রম হয়ে যাওয়ায় এ নিয়ে আইন অনুযায়ী তার কিছু করার সুযোগ নেই বলে জানান এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘আইন অনুযায়ী প্রার্থীতা ঘোষণার তিনদিনের মধ্যে কোনো অভিযোগ জমা পড়লে তা নিয়ে রিটানিং কর্মকর্তার কাজ করার সুযোগ থাকে। কিন্তু সময় পার হওয়ার পর অভিযোগ দিলে প্রার্থীতা বৈধ-অবৈধতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত পুরোপরি নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে চলে যায়।