প্রকাশ: বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৬:৫৩ PM
পরিবারে চার সদস্য নিয়ে রথি কস্তার সুখের সংসার। দিন দিন তার জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। গ্রামের বিভিন্ন প্রান্থ থেকে অনেকেই ঝাল মুড়ি খেতে ও কিনতে ভিড় করছে প্রতিনিয়ত রথি কস্তার ভ্রাম্যমাণ দোকানে। তাইতো রথির দোকানের নাম দিয়েছে ঝাল মুড়ির দোকান। ঝাল মুড়ির দোকান প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, হাসপাতালের গেইট, শপিংমলের সামনে বিক্রি করে থাকে। আনন্দঘন মুহুর্তে ভেসে উঠে ঝাল মুড়ি খেতে আসা ঝাল-মুড়ি প্রেমিরা। আর এই দিকে দোকানের বিভিন্ন রসদ যুগিয়ে যাচ্ছে তার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্বামী। সরেজমিনে রথি কস্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি একজন শ্রমজীবি মানুষ। জীবন যুদ্ধে হার না মানা একজন এক নারী। তার মনের মাধূরি দিয়ে চানাচুর,মুড়ি,কাঁচা মরিচ,পেঁয়াজ,ছোলা,ক্ষিরা সহ বিভিন্ন রকম মসলা দিয়ে অত্যন্ত মুখরোচকভাবে মুড়ি মাখিয়ে গ্রাহকদের মণ আকৃষ্ট করে চলেছে। ঝাল মুড়ি বিক্রি করেই আজ তিনি স্বাবলম্বী। বর্তমানে তিনি কালীগঞ্জ পৌর এলাকার উত্তর ভাদার্ত্তী গ্রামের ছোট একটি বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবাস করেন। এত কর্মব্যস্ততার পরও মানুষটির মুখে যেন সার্বক্ষণিক আনন্দের ছাপ। রথি কস্তার পিতা প্রভুদাস বাড়ই গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকার ২নং ওয়ার্ডের উত্তর ভাদার্ত্তী গ্রামের বাসিন্দা। তার স্বামীর পংকজ কস্তা প্রতিবন্ধি জীবন যাপন করছে।
রথি কস্তার সংসারে দুই সন্তান। বড় ছেলে অরেন কস্তা ও ছোট ছেলে অন্তর কস্তা ।
ছোট ছেলে অস্তর কস্তা বোয়ালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্র। উভয়েই মায়ের কাজে সহযোগীতা করে থাকেন। প্রতিবন্ধি স্বামীর আর্থিক সংকটের কারণে ২০০৭ সাল থেকে রেল গাড়ীতে চড়ে ঝাল মুড়ি বিক্রি শুরু করে। জীবন-জীবিকার তাগিদে বাড়ির পাশে আড়িখোলা রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে প্রায় ১৭ বছর যাবৎ বিভিন্ন ট্রেনে ঝাল মুড়ি বিক্রি শুরু করে আসছে। এখন ট্রেনে প্রচন্ড ভিড় ও বয়সের কারনে ট্রেনে উঠতে সাহস পায় না। আড়িখোলা রেল ষ্টেশনই তার নিত্বদিনের ঠিকানা। সেই থেকে আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে সংসারে স্বামী,দুই ছেল বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে বেশ সুখেই দিন কাটছে তার। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঝাল মুড়ি বিক্রি করে হাজার থেকে পনেরশত টাকা বেচা-কেনা হয়। সকল খরচ বাদে কমপক্ষে ৬-৮ শত টাকা তার লাভ হয়। সেই আয়েই তিনি সংসার চালান। ষ্টেশনে ট্রেন থামতেই তার দোকানে ঝাল মুড়ি প্রেমিদের উপচে পড়া ভিড় জমে।
রথি কস্তার সাথে আলাপকালে প্রতিবেদককে জানান, আমার জন্ম চট্রগ্রামে এক অসহায় পরিবারে। আত্বীয়ের মাধ্যমে ঢাকার মিশনারী স্কুলে ভর্তি হয়ে বটমূল হোস্টেলে থেকে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপড়া করি। পরবর্তীতে অসুস্থ আপন খালাকে দেখাশোনা জন্য গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের সাতানীপাড়া গ্রামে চলে আসি। দারিদ্রতার কারনে লেখাপড়া করা আর সম্ভব হয়নি। ২০০৪ সালে কালীগঞ্জ পৌর এলাকার দক্ষিন ভাদার্তী গ্রামের বুদ্ধি প্রতিবন্ধি পংকজ কস্তাকে বিয়ে করি। মানুষের কাছে হাত পাতার চাইতে খেটে খাওয়া উত্তম। প্রতিদিন মানুষ আমাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করবে না। যে কোন কাজকেই ছোট করে দেখার কোন কারন নেই। তাই ঝাল মুড়ি বিক্রি আমি পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমি নিজেকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে পারব।
মোঃ ইকবাল হোসেন ভ‚ইয়া