প্রকাশ: শুক্রবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৫, ৯:০০ পিএম (ভিজিট : ৪৮)
গারোদের বিশ্বাস, ‘মিসি সালজং’ বা শস্যদেবতার ওপর নির্ভর করে শস্যের ভালো ফলন হয়। নতুন ফল ও ফসল ভক্ষণ করার আগে শস্য দেবতাকে কৃতজ্ঞতা জানানো আদিবাসী গারো সম্প্রদায়ের শত বছরের রেওয়াজ।
এই শস্যদেবতাকে কৃতজ্ঞতা জানাতে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার মরিয়মনগর গারো পল্লীতে ২১ নভেম্বর শুক্রবার থেকে তিন দিনব্যাপী সাধু জর্জের ধর্মপল্লীতে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় ওয়ানগালা উৎসব উদ্বোধন হয়েছে।
এ ওয়ানগালা উৎসব উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি কার্ডিনাল বিশপ প্যাট্রিক ডি. রোজারিও। এসময় সভাপতিত্ব করেন মরিয়মনগর ধর্মপল্লীর পাল পুরহিত ফাদার লরেন্স রিবেরু সিএসসি।
তিন দিনব্যাপী এই ওয়ানগালা উৎসবে প্রথম দিন রয়েছে গারো শিশুদের নিয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং গারো ভাষায় ছড়া পাঠ ও ছড়া গান প্রতিযোগিতা এবং অতিথিদের স্টল পরিদর্শন। এছাড়া রয়েছে গারো ভাষায় নাচ প্রতিযোগিতা এবং পুরস্কার বিতরণ।
দ্বিতীয় দিন রয়েছে কিশোর-কিশোরী এবং মহিলাদের পৃথক নৃত্য প্রতিযোগিতা, মিস ওয়ানগালা প্রতিযোগিতা, বিভিন্ন খেলাধুলা, পুরস্কার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
তৃতীয় ও শেষ দিন রয়েছে গারোদের খ্রিস্ট পর্বের ওয়ানগালার মূল অনুষ্ঠান আচারাদী। এদিন তারা শস্য দেবতাকে উৎসর্গ করবেন এবং তাকে ধন্যবাদ জানাবেন শস্য ভাণ্ডার ভরে দেওয়ার জন্য।
ঐতিহ্যবাহী ওয়ানগালা ওই দেবতার কাছে নতুন ফসল ভোজনের অনুমতির জন্য নেচে-গেয়ে উদযাপন করা হয়। এই উৎসবে পরিবারে ভালোবাসা, আনন্দ, বিশ্বের সব পরিবারের মঙ্গল কামনা করা হয় শস্যদেবতার কাছে। উৎসবকে ঘিরে কয়েকদিন ধরেই পাহাড়ের গারো খ্রিস্টানদের মধ্যে আনন্দের উপলক্ষ দেখা গেছে।
গারো ভাষায় ‘ওয়ানা’ শব্দের অর্থ দেবদেবীর দানের দ্রব্যসামগ্রী আর ‘গালা’ অর্থ উৎসর্গ করা। শস্য ভোজনের জন্য দেবদেবীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও মনোবাসনার নানা নিবেদন থাকে এ উৎসবে। সাধারণত বর্ষার শেষে ও শীতের আগে, নতুন ফসল তোলার পর এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এই উৎসবের আগে নতুন খাদ্যশস্যের ভোজন একদম নিষেধ থাকে এ সম্প্রদায়ের জন্য।
ওয়ানগালা উৎসব শেষ হলেই নবান্নের ফসলের তৈরি করা ভোজন প্রভুকে ধন্যবাদের সাথে বৈধ হয়ে যায়। তাই অনেকেই একে নবান্ন বা ধন্যবাদের উৎসবও বলে থাকেন।