ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, অন্য যেকোনো সংস্থার কর্মঘণ্টা আছে, কিন্তু পুলিশের কোনো কর্মঘণ্টা নেই। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা জনগণের সেবায় নিয়োজিত থাকতে হয়।
মঙ্গলবার (২১ মে) রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, পুলিশের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, জনগণের জানমাল, সরকারি সম্পদ হেফাজত করা। অন্য যেকোনো সংস্থার কর্মঘণ্টা আছে কিন্তু পুলিশের কোনো কর্মঘণ্টা নেই। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা জনগণের সেবায় নিয়োজিত থাকতে হয়। পরিবারকে সময় দেওয়া এবং পরিবারের খোঁজখবর নেওয়ার সময়টুকুও হাতে থাকে না। তারপরও তোমরা কিন্তু থেমে নেই, তোমাদের এই কৃতিত্বই তারই প্রমাণ।
![](https://www.dainiksangbadpratidin.com:443/2024/05/21/sp_1716295694.jpg)
হাবিবুর রহমান বলেন, মোবাইল ফোন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক কথা সমাজে প্রচলিত রয়েছে। মোবাইল ফোন মানুষকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমি মোবাইল ফোনের বিষয়ে স্পষ্ট করে বলতে চাই, মোবাইল ফোন হাতের মুঠোয় একটি বিশ্বকোষ বা জ্ঞানভাণ্ডার। এটিকে যদি ইতিবাচকভাবে তোমরা ব্যবহার করতে পার তাহলে তা থেকে অনেক কিছু শিখতে ও জানতে পারবে। মোবাইল ফোনকে নেতিবাচক হিসেবে ব্যবহার না করে ইতিবাচক হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, তোমরা যারা এখানে রয়েছ, তোমাদের পিতা যারা পুলিশে কাজ করছেন তাদের পূর্বসূরিরা অকুতোভয় সৈনিক, যারা দেশ মাতৃকার জন্য পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সামান্য থ্রি নট থ্রি রাইফেল নিয়ে। দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা যুদ্ধ করেছিলেন এবং বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশের বাঙালিদের অস্তিত্ব জানান দিয়েছিলেন, সেই সব বীর সদস্যদের উত্তরসূরি আমরা। আর তোমরা সেই উত্তরসূরি গর্বিত পিতাদের গর্বিত সন্তান। এখানে ১ হাজার ১৩১ জন কৃতি শিক্ষার্থী রয়েছে, এখানে হাজার তারার মেলা বসেছে। তোমাদের যে অর্থ দেওয়া হয়েছে এটা বড় কথা নয়, তোমাদের যে কৃতিত্ব দেওয়া হচ্ছে এটাই সম্মানের বিষয়।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা যখন শিক্ষা গ্রহণ করি তখন শিক্ষার উদ্দেশ্য কী তা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর উদ্দেশ্য থাকে বড় হয়ে একটি ভালো চাকরি করবে। তারা চাকরিকেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি ঝুঁকে থাকে। কিন্তু শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মনুষ্যত্ববোধ অর্জন করা, সংরক্ষণ করা ও জীবনে তা প্রতিফলিত করা। সেই বিষয়টি সব সময় তোমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে। শুধু চাকরির সংকীর্ণ চিন্তাভাবনা থাকা উচিত নয়।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ডিএমপির এই শিক্ষাবৃত্তি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার জন্য এই শিক্ষাবৃত্তি বৃত্তিপ্রাপ্তদের উদ্বুদ্ধ করবে। বৃত্তিপ্রাপ্তরা দেশপ্রেমিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠলে সেটাই হবে আমাদের সফলতা।
কৃতি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) মহা. আশরাফুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।