জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরসূরি বাঙালির আস্থা ও বিশ্বাসের শেষ ঠিকানা জননেত্রী শেখ হাসিনা। পিতার মতোই সাহসী তিনি। তার সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে প্রচন্ড সংকটের মধ্যে ও তিনি ধৈর্য ধরতে পারেন আর বিপদে ও দূরদর্শী সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে ভুল না করা।
শেখ হাসিনা যদি সমস্ত রক্তচক্ষুকে ভয় না করে, নিষেধাজ্ঞা অমান্য না করে ৭ মে দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত না নিতেন তাহলে স্বাধীন বাংলাদেশের গণতন্ত্র আজো অবরুদ্ধ থাকতো। এ কারনেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশেকে এগিয়ে নিতে ২০০৭ সালের ৭ মে মুজিবাদর্শের সৈনিকদের কাছে একটি একটি ঐতিহাসিক দিন। এইতো সেদিনের কথা। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশার ছায়া। দলের শীর্ষনেতারা অনেকেই অন্তরীণ, অনেকে আবার নানা কারণে সিন্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে তথাকথিত সংস্কারের নামে চলছে নেতাকর্মীদের হয়রানী। প্রিয় নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা চিকিৎসার জন্য বিদেশে। চারদিকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার জন্য দেশি-বিদেশি যড়যন্ত্রের জাল। নেত্রী দেশে ফিরবেন তো? যদি না ফেরেন? কী হবে? আওয়ামী লীগের রাজনীতির ভবিষ্যত কী? গণতন্ত্র কী নির্বাসনে যাবে ? নেতাকর্মীরা কোথায় যাবে? নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মনে।
সকল প্রশ্নের জবাব মেলে ২০০৭ সালের ৭ মে। গণতন্ত্রপ্রিয় বাঙালির কাছে একটি স্মরণীয় দিন। ২০০৭ সালের এই দিনে তৎকালীন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষিত জরুরি অবস্থা চলাকালীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা শেষে শত প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে বাংলাদেশে ফিরে আসেন বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষা, বিশ্বাস আর আস্থার প্রতীক প্রিয়নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সে সময় যাতে বাংলাদেশে ফিরতে না পারেন সেজন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার এক অবৈধ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না দেয়ার নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কিন্তু বাবার মতোই সাহসী ও দেশের মানুষের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত শেখ হাসিনা তৎকালীন সরকারের বেআইনি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রিয় জন্মভূমিতে ফেরার ঘোষণা দেন। অবৈধ নিষেধাজ্ঞার বিরূদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে বিশ্বব্যাপী। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে শেখ হাসিনার ঐকান্তিক দৃঢ়তা, সাহস ও গণতন্ত্রকামী দেশবাসীর চাপে তদানীস্তন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বাধ্য হয়।
২০০৭ সালের ৭ মে জননেত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় ফিরে এলে লাখো জনতার ঢল নামে বিমানবন্দরে। ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মিছিল শোভাযাত্রা সহকারে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে নিয়ে আসা হয়। দেশে ফিরে জনগণের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় নতুন সংগ্রাম শুরু করেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরূদ্ধারে ঐক্যবদ্ধ হয় দেশবাসী। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভীত- সশস্ত্র হয়ে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনাকে সাজানো মামলায় গ্রেফতার করে।
২০০৮ সালের ১১ জুন প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁকে কারান্তরীণ রাখা হয়। প্যারোলে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশ গমন এবং চিকিৎসা শেষে ৪ ডিসেম্বর স্বদেশে ফিরে আসেন প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা । তারপর আর থেমে থাকা নয় , নয় পিছনের দিকে তাকানো। শেখ হাসিনার সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে ব্যাপক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়। আন্দোলনের মুখে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয় জোরপূর্বক রাষ্ট্রক্ষমতায় চেপে বসা তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদের নির্বাচনে জনগণের অন্তহীন ভালাবাসায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে গণমানুষের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন জননেত্রী হাসিনা। শুরু করেন সংকটের আবর্তে তলিয়ে যাওয়া দেশকে পুনরুদ্ধার করে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গড়ে তোলার সংগ্রাম। দিন বদলের অভিযাত্রায় তাঁর ইতিবাচক নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম এবং উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জনের ইতিহাসে ৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। শেখ হাসিনা সেদিন সাহস করে দেশে ফিরে আসার কারণেই গণতন্ত্রের বিজয় হয়। তা না হলে সামরিক শাসন আর ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে হয়তো এখনো অন্ধকারে থাকতে হতো আমাদের। পাল্টে যেতো ইতিহাসের চাকা।
২০০৭ সালের ৭ মে জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসার কারণেই ২০০৮ , ২০১৪, ২০১৯ ও ২০২৪ সালে সরকার গঠন করে টানা চতুর্থ মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার । জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথ ধরেই তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন উন্নয়নের মহাসড়কে।
বর্তমানে সারাদেশে চলছে ব্যাপক উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ। মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, মাতার বাড়ি ও পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর , ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও কর্ণফুলী টানেল আজ আর স্বপ্ন নয়। দৃশ্যমান বাস্তবতা।যে প্রকল্প গুলো শেষ হয়েছে তার সুফল ভোগ করছে দলমত নির্বিশেষে আপামর জনগন। বাকী কাজ চলেছে দ্রুত গতিতে। বর্তমান সরকারের চতুর্থ মেয়াদে সকল মেগা প্রকল্প গুলোর সফল বাস্তবায়ন ও আরো নতুন মেগা প্রকল্প গ্রহণে পাল্টে যাবে দেশের অগ্রগতির দৃশ্যপট। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতায় গোটা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল ।
দেশকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি সাধারণ জনগণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তাদের জীবন মান উন্নয়ন, দেশের অসহায়,বৃদ্ধ, গৃহহীন , বিধবা সহ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সামাজিক বেষ্টনীর আওতায় এনে তাদের জন্য ভাতা”র ব্যবস্থা করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। করোনা সংক্রমণের মধ্যেও দু-দু’টি ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও সময়পোযোগী সিদ্ধান্তের ফলেই সম্ভব হয়েছে। এর ফলে দুর্ভিক্ষের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে বাংলাদেশ। আর এই সব অসম্ভব সম্ভব হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর কন্যার সাহস করে ২০০৭ সালের ৭ মে দেশে ফিরে আসার কারণে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা বলেই হয়তো তিনি পেরেছিলেন এমন সাহসী সিন্ধান্ত নিতে নিজের জন্য নয়, দেশের মানুষের জন্য , গণতন্ত্রের জন্য।
মানিক লাল ঘোষ : ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সহ সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য