এর আগে ইসলামাবাদ পুলিশ সতর্ক করে দিয়ে বলে, শহরে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে এবং যেকোনো অবৈধ জমায়েতের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
শনিবার নির্বাচন কমিশন তিনটি জাতীয় ও প্রাদেশিক আসনের ৪৩টি ভোটকেন্দ্রে পুনরায় ভোট গণনার নির্দেশ দেয়।
সরকার গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা
এখন পর্যন্ত নির্বাচনের ফলাফলে পিটিআই এগিয়ে থাকলেও এই মুহূর্তে প্রশ্ন হলো, কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন না করায় জোট সরকারের রূপরেখা কেমন হতে পারে? এরইমধ্যে যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছে পিএমএলএন এবং পিপিপি।
সাবেক ফেডারেল মন্ত্রী এবং পাকিস্তান মুসলিম লিগ এন (পিএমএলএন) এর নেতা মারিয়াম আওরঙ্গজেব জানিয়েছেন, মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এমকিউএম) পাকিস্তান আজ তাদের নেতা নওয়াজ শরিফের সাথে বৈঠক করেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং পাকিস্তান মুসলিম লিগের প্রধান সমন্বয়ক মারিয়াম নওয়াজ শরিফও এতে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকটি আধা ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, এই বৈঠকে নতুন সরকার কেমন হবে ও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশল নিয়েও আলোচনা হয়।
এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলে জানা যাচ্ছে, পিএমএলএন ৭৫টি আসনে জিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে, আর এমকিউএম জিতেছে ১৭টি আসন।
নির্বাচনী প্রচারণায় একে অন্যের সমালোচনা করলেও জোট সরকার গঠনে বদলে যাচ্ছে অনেক সমীকরণ।
পিএমএলএন নেতা নওয়াজ শরিফ নির্বাচনে নিজেদের বিজয় ঘোষণা করে তার ছোটভাই শাহবাজ শরিফকে পাকিস্তান পিপলস পার্টি-পিপিপি, মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-এমকিউএম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং অন্যান্য দলের সাথে জোট বোঝাপড়া করে সরকার গঠনের নির্দেশনা দিয়েছেন।
অন্যদিকে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গওহর খান দাবি করেছেন, জাতীয় পরিষদের বেশিরভাগ আসন তারা জিতেছেন এবং ঘোষণা দেন তার দল কেন্দ্র, খাইবার পাখতুন ও পাঞ্জাবে সরকার গঠন করবে।
শুক্রবার বিবিসির নিউজনাইট প্রোগ্রামে ইমরান খানের সাবেক বিশেষ সহকারী জুলফিকার বুখারী বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে ইমরান খানকে এবং আমার দল পিটিআই-এর নৈতিকতা সম্পর্কে যতটুকু জানি, তা থেকে আমার মনে হয় না যে, আমরা প্রধান কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে একজোট হয়ে সরকার গঠন করব।’
তবে পিটিআই ইঙ্গিত দিয়েছে, তাদের বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা একটা ছোট রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে পারে, যাতে সংসদের সংরক্ষিত আসনগুলো পাওয়া যায় এবং সরকার গঠন করা যায়।
২০২২ সালে পিটিআই ক্ষমতাচ্যুত হলে নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লিগ, পিপিপি, এমকিউএম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং অন্যান্য দল মিলে প্রায় দেড় বছর সরকারে ছিল।
তবে নির্বাচনী প্রচারাণার সময় এই দলগুলোকে একে অপরের বিপক্ষে সমালোচনা করতে দেখা যায়।
পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জানিয়েছেন, সরকার গঠনের ব্যাপারে পিএমএলএন বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সাথেই তাদের কোনো রকম আলোচনা হয়নি।
শনিবার পাকিস্তানের টিভি চ্যানেল জিও নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেন, ‘পাকিস্তান পিপলস পার্টি পিএমএল-এন, পিটিআই বা অন্য কোনো দলের সাথেই সরকার গঠন নিয়ে কোনো আলোচনা করেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সমস্ত কেন্দ্রের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছি।’ নির্বাচনের আগে পিপিপির কেন্দ্রীয় কমিটি বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী মনোনীত করে।
তিনি ইচ্ছে প্রকাশ করেন, একটা ‘রাজনৈতিক ঐক্য’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশকে স্থিতিশীল করার। তিনি যোগ করেন, কোনো কোনো দলের নেতারা নিজ উদ্যোগে তাদের সাথে যোগাযোগ করছে, তবে পিটিআইয়ের পক্ষে থেকে কেউ এখনো তাদের সাথে কোনো যোগাযোগ করেনি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যারাই সরকার গঠন করতে যাক পিটিআই হবে সেখানে প্রধান ফ্যাক্টর।
এমনিতে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের মোট আসনসংখ্যা ৩৩৬টি। তার মধ্যে ২৬৬ আসন হলো সাধারণ আসন, যেগুলোতে সরাসরি ভোট হয়। বাকি ৭০টি আসন সংরক্ষিত। সেগুলোর ৬০টি নারীদের ও ১০টি অমুসলিমদের। পাকিস্তানে সরকার গঠন করার জন্য কোনো দলকে ন্যূনতম ১৩৪টি আসনে জয়লাভ করতে হবে। কিন্তু প্রাথমিক ফলাফল বলছে, কেউই সরকার গঠনের জন্য এককভাবে প্রয়োজনীয় সংগরিষ্ঠতা পায়নি।
লাহোরভিত্তিক সাংবাদিক ও বিশ্লেষক আজমল জামি বিবিসিকে বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি নতুন সরকার গঠনে এখন একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। বল এখন তার কোর্টেই আর তিনি তার ছেলে বিলাওয়াল ভু্ট্টো জারদারিকে প্রধানমন্ত্রিত্ব গ্রহণের জন্য আহ্বান জানাতে পারেন। তবে কোনো বিশ্লেষকই আশ্বস্ত হতে পারছেন না যে, সহসাই পাকিস্তানে কোনো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসতে যাচ্ছে। -বিবিসি বাংলা