শিরোনাম: |
দেশে এখন জেলায় জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। এভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ইতিমধ্যেই প্রায় অর্ধশতে পৌঁছে গেছে। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জ্ঞান-বিজ্ঞানে উনড়বতি বা বিশেষ অবদানের জন্য নয়, প্রশাসনের দুর্নীতি এবং শিক্ষার মান সংকট নিয়েই বছরজুড়ে আলোচনায় থাকছে। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি এর মধ্যে অন্যতম। এছাড়া উনড়বয়ন প্রকল্পের আর্থিক দুর্নীতি, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে ঘুষবাণিজ্য ও স্বজনপ্রীতির একের পর এক ঘটনা নিয়মিতই আসছে সংবাদমাধ্যমে। আরও দুঃখজনক বিষয় হলো ইদানীং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতির অভিযোগগুলোতে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ সামনে আসছে উপাচার্যদের নামেই। সংগত কারণেই প্রশড়ব উঠছে, উপাচার্যরাই যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হন, আর শিক্ষক নিয়োগেই যদি অনিয়ম ও দুর্নীতি হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কীভাবে বাস্তবায়িত হবে? যে উপাচার্য অনিয়মের মাধ্যমে আÍীয় বা নিজ পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে নেতৃত্ব দিয়ে কোথায় নিয়ে যাবেন? আর যে প্রার্থীরা অনিয়মের মধ্য দিয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান, তারা কোন নৈতিকতা নিয়ে শিক্ষকতা করবেন? এসব প্রশড়ব আবারও সামনে এসেছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) বিধি ভেঙে শিক্ষক নিয়োগের তোড়জোড়ের অভিযোগে। গত রবিবার গণমাধ্যমে 'বিধি ভেঙে শিক্ষক নিয়োগে তোড়জোড়' শিরোনামের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৩ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর আটটি বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকের স্থায়ী ও অস্থায়ী ১২টি পদে শিক্ষক নিয়োগের যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, তাতে নিয়োগবিধিতে নেই এমন সব শর্ত উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু নতুন শর্ত কিংবা শর্ত শিথিল করে শিক্ষক নিয়োগের আগে সেটি অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদিত হতে হয়। নিয়োগ নীতিমালা সংশোধনের ক্ষেত্রেও কমিটি গঠন এবং সেই কমিটির সুপারিশ অ্যাকাডেমিক ও সিন্ডিকেটে অনুমোদন নিতে হয়। অথচ বেরোবির ওই শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে অনুমোদনহীনভাবে শর্ত শিথিল করা হয়েছে এবং বিধিবহির্ভূত শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত উপাচার্যের নেতৃত্বে প্রশাসন নিজের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতেই এমন করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে গণিত বিভাগে সহকারী অধ্যাপক (স্থায়ী) পদের ঠিক নিচে ব্র্যাকেটে 'কনসিকোয়েন্সি ভেকান্সি উইথ ফিলাপ'-এর মাধ্যমে 'শূন্য পদ' লেখা হয়েছে। আবেদনের শর্তে প্রতিটি স্তরে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ প্রার্থীর ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করা যেতে পারে। তবে একজন প্রার্থীর ক্ষেত্রে কয়টি বিষয় বা কী কী বিষয়ে শর্ত শিথিল হবে তা উল্লেখ করা হয়নি। ইতিমধ্যে বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রার্থীদের আবেদনের দিন শেষ হয়েছে গত ১৩ ডিসেম্বর। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, নতুন করে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে 'কনসিকোয়েন্সি ভেকান্সি উইথ ফিলাপ' নামে যে প"তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তা রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক নিয়োগের বিধানে নেই। তাছাড়া আটটি বিভাগের অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদের বিপরীতে যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগ পদে এখন কেউ না কেউ কর্মরত। অনেক শিক্ষককে অর্জিত ছুটি দিয়ে সেগুলো শূন্যপদ দেখানো হয়েছে, যা স্পষ্ট নিয়োগবিধির লঙ্ঘন। কারণ একজন শিক্ষক অর্জিত ছুটি নিলে ওই পদ শূন্য হয় এমন কোনো বিধি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ নীতিমালায় নেই। লক্ষ্য করবার মতো বিষয় হলো, বেরোবি'র উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশিদ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে না থাকা এবং সিন্ডিকেটের অনুমোদন না নিয়ে শর্ত শিথিলের অভিযোগ স্বীকার করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, 'এটি এমন কোনো বিষয় নয় যে সিন্ডিকেটে তুলে আইন পাস করতে হবে। ... আমি আছিই তো সমস্যা সমাধানের জন্য। যারা সমস্যায় আছেন, তাদের সুবিধার জন্যই এসব করা হয়েছে।' একজন উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বিধি অমান্য করতে পারেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মঙ্গলজনক কিছু করতে হলেও সেটা আইন-বিধি মেনেই করতে হবে। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, কেবল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরাও আজকাল নিয়ম-বিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রায় একই ভাষায় কথা বলছেন। উপাচার্যের পদের মানমর্যাদা রক্ষা এবং সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের এমন কর্মকান্ড আর বচন-বাচন এই সত্যই মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, জবাবদিহি না থাকা এবং অপরাধের বিচার না হওয়ার কারণেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনগুলো এমন লাগামহীন হয়ে পড়ছে।
কক্সবাজারের পর্যটন