
দেশের সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এতে আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া প্রাথমিকের বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। একইসঙ্গে মাধ্যমিক স্তরের চলমান বার্ষিক পরীক্ষা এবং মাধ্যমিকের নির্বাচনী পরীক্ষা না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকরা। দুই স্তরের শিক্ষকদের পৃথকভাবে ৩ দফা ও ৪ দফা দাবি নিয়ে টানা কর্মবিরতির ফলে সারা দেশে পরীক্ষার সূচি ভেঙে পড়েছে। দীর্ঘমেয়াদি এই অচলাবস্থা শিক্ষাপঞ্জিকে নতুন করে বিপর্যস্ত করে তুলছে। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা, যারা সারা বছর প্রস্তুতি নিয়ে শেষ মুহূর্তে এসে পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
একদিকে শিক্ষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে বেতন-গ্রেড, পদোন্নতি, কর্মপরিবেশসহ নানা দাবি সরকারি পর্যায়ে উপেক্ষিত হচ্ছে। এসব দাবি না মানায় তারা কর্মবিরতিতে যেতে বাধ্য হয়েছেন। অন্যদিকে অভিভাবকরা বলছেন, দাবি থাকতেই পারে কিন্তু সেটার জন্য বছরের সবচেয়ে জরুরি মূল্যায়ন বন্ধ করে দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এতে শিক্ষার্থীদের ওপর যে মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে, তার দায় কেউ নিতে চাইছে না।
সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পৃথক দাবিতে আন্দোলন করলেও এখন পরিস্থিতি এমনভাবে জটিল হয়েছে যে, দুই স্তরের শিক্ষকরাই কার্যত একই সময়ে কর্মবিরতি ও পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচিতে একাট্টা হয়ে পড়েছেন। একদিকে ৩ দফা দাবিতে সাড়ে তিন লাখ প্রাথমিক শিক্ষক টানা কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন, অন্যদিকে ৪ দফা দাবিতে সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকরাও আজ থেকে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। দুই স্তরের শিক্ষকদের এই সমান্তরাল কর্মসূচির ফলে সারা দেশে বার্ষিক পরীক্ষা ও এসএসসির নির্বাচনী পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। যাতে বিপর্যস্ত হচ্ছে শিক্ষাপঞ্জি।
মাধ্যমিক শিক্ষকদের আন্দোলন গত সপ্তাহ থেকে তীব্র আকার ধারণ করে। ৯ম গ্রেডে এন্ট্রি, ক্যাডারভুক্তি, টাইমস্কেল, পদোন্নতি ও বকেয়া আর্থিক সুবিধা– এ চার দফা দাবিতে শিক্ষাভবন ঘেরাও করে টানা দুই দিনের অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সদস্যরা। সরকারের কাছ থেকে কোনো সমাধান বা স্পষ্ট আশ্বাস না পেয়ে তারা ঘোষণা দিয়েছেন– ১ ডিসেম্বর থেকে (আজ থেকে) চলমান বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন করবেন, এসএসসির নির্বাচনী পরীক্ষা নেবেন না এবং খাতা মূল্যায়নেও অংশ নেবেন না।
মাধ্যমিকের শিক্ষক নেতারা বলেছেন, দাবি নিয়ে বছরের পর বছর শুধু আশ্বাস পাওয়া গেছে, বাস্তবায়ন হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই কঠোর কর্মসূচিতে যেতে হচ্ছে। তারা জানান, সরকার দাবিগুলো দ্রুত পূরণ করলে সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও পরীক্ষা নিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যেই ফল প্রকাশে প্রস্তুত তারা। তবে দাবি মানা না হলে আরও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবারও (২৭ নভেম্বর) একই দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা দিয়ে আলটিমেটাম দিয়েছিলেন সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকরা। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় অবশেষে তারা পূর্ণ দিবস কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেন।
অন্যদিকে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন লাখের বেশি সহকারী শিক্ষকও একই সময়ে কর্মবিরতিতে রয়েছেন। বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণ, ১০ ও ১৬ বছরপূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড সমস্যার সমাধান এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি– এই তিন দফা দাবিতে ২৭ নভেম্বর থেকে সারা দেশের ৬৫ হাজারের বেশি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষকরা জানিয়েছিলেন, ৩০ নভেম্বর রাতের মধ্যে দাবি পূরণ করা না হলে সোমবার থেকে বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন করবেন।
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মু. মাহবুবর রহমান বলেন, সারা দেশে লাগাতার কর্মবিরতি চলছে। সরকার সময়মতো দাবি পূরণ না করলে পরীক্ষাও বর্জন ছাড়া উপায় নেই।
সংগঠনের আরেক আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দিন মাসুদ বলেন, পে-কমিশনের সঙ্গে আমাদের দাবির সম্পর্ক নেই। সরকার চাইলে একদিনেই সমাধান সম্ভব, অর্থ বিভাগের সচিব নিজেই তা বলেছেন। এ অবস্থায় সরকার এখনো আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের কথা বললেও শিক্ষক সংগঠনগুলো বলছে, প্রতিশ্রুতির চেয়ে বাস্তব পদক্ষেপ জরুরি।