শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৫ ৩০ কার্তিক ১৪৩২
 
শিরোনাম:


বিনোদন
ব্যক্তি জীবনে কেমন ছিলেন অভিনেতা রাজীব
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৫, ৬:১১ পিএম   (ভিজিট : ১৮)
গম্ভীর ঝাঁজালো কণ্ঠ, রহস্যভরা চোখের চাহনি এবং বৈচিত্র্যময় অভিব্যক্তি-এই সমস্ত গুণই দর্শকের মনে উত্তেজনা আর ভয়ের মিশ্র অনুভূতি সৃষ্টি করত। ঢাকাই সিনেমার নিয়মিত দর্শকরা সহজেই চিনে যেতেন এই অভিনেতাকে- রাজীব, যার আসল নাম ওয়াসীমুল বারী রাজীব। ২০০৪ সালের ১৪ নভেম্বর ৫২ বছর বয়সে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে চলে যান তিনি। আজ তার মৃত্যুর দুই দশক পূর্ণ হলো। পর্দায় খল চরিত্রে অভিনয় করলেও, বাস্তব জীবন ও ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।

রাজীব চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। পর্দায় খলনায়ক হলেও পরিবার, বন্ধু, সহকর্মী ও ভক্তদের কাছে তিনি ছিলেন মিশুক, হাস্যোজ্জ্বল এবং আড্ডাবাজ। তার সন্তানরা বর্তমানে ঢালিউডের সঙ্গে যুক্ত নন। তবে গণমাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তার ছেলে বলেছিলেন, “বাবা চলচ্চিত্র নিয়ে বাসায় কখনো কথা বলতেন না। পারিবারিক জীবন ও চলচ্চিত্রজগৎ তার জন্য আলাদা ছিল। খোলামনের একজন সাদামাটা মানুষ ছিলেন তিনি।”

রাজীবের ব্যক্তিগত জীবনও দৃষ্টিকর্ষণীয়। মার্শাল আর্টের ওস্তাদ জাহাঙ্গীর আলমের চাচাতো বোন ইসমত আরাকে বিয়ে করেন তিনি। জাহাঙ্গীর আলম এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “সিনেমায় দেখানো চরিত্রগুলো থেকে বিপরীত ছিলেন রাজীব। শুটিং সেটে কখনো উচ্চস্বরে বা চড়া মেজাজে কথা বলতেন না।”

অভিনয়ের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮২ সালে কাজী হায়াতের ‘খোকন সোনা’ ছবির মাধ্যমে। ২২ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি চারশোরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন। পর্দায় তার উপস্থিতি প্রমাণ করত যে, কোনো চরিত্রই ছোট বা বড় নয়- রাজীব নিজেই সেটিকে শক্তিশালী করে তুলতেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে আছে ‘দাঙ্গা’, ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’, ‘ভাত দে’, ‘জীবন দিয়ে ভালোবাসি’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘প্রেম পিয়াসী’, ‘বুকের ভেতর আগুন’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘বাবার আদেশ’ এবং ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’।

রাজীবের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল নিজস্ব ‘ছাপ’ রাখতে পারা। কোনো চরিত্র ততটা গভীরভাবে লেখা না থাকলেও, তিনি নিজের অভিনয় দক্ষতায় সেটিকে দর্শকের মনে জীবন্ত করে তুলতেন। দর্শকরা প্রায়শই বলতেন, রাজীবের উপস্থিতিই ছবিকে অন্য মাত্রা দিত। সেই প্রভাব এতটাই দৃঢ় ছিল যে, তিনি উপস্থিত হলে শুটিং সেটেও অন্যদের মনোযোগ সহজে আকৃষ্ট করতেন।

চলচ্চিত্রের বাইরে, রাজীব ছিলেন বন্ধুবৎসল, সহানুভূতিশীল এবং সহকর্মীদের প্রতি অত্যন্ত সহমর্মী। হাস্যোজ্জ্বল এবং খোলামেলা স্বভাব তাকে শুটিং সেটে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। চলচ্চিত্রের কড়া এবং কঠোর খলনায়ক চরিত্রের বাইরে তিনি ছিলেন একান্ত মানবিক এবং দয়া ময় মানুষ।

অভিনয়জগতে তার অবদান কেবল চরিত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং নতুন প্রজন্মের অভিনেতাদের জন্য তিনি ছিলেন দৃষ্টান্ত। অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি, সততা এবং পেশাদারিত্ব-এই তিনটি গুণই রাজীবের কর্মজীবনের সঙ্গে মিশে ছিল।

বয়স মাত্র ৫২ বছরে চলে গেলেও, ঢাকাই সিনেমার দর্শকরা আজও তার অভিনীত চরিত্রগুলো মনে ধরে রেখেছেন। যদি আরও দীর্ঘ জীবন হতো, রাজীব নিঃসন্দেহে আমাদের আরও বৈচিত্র্যময় চরিত্রে চোখে পড়তেন। তার স্মৃতি ও অভিনয় ঢালিউডের ইতিহাসে চিরকাল অমর থেকে যাবে, আর ব্যক্তিত্বের মানবিক দিকও সবার মনে গেঁথে থাকবে। 







আরও খবর


 সর্বশেষ সংবাদ

এক হাসিনা যাওয়ার পর আরেক হাসিনা আসার প্রস্তুতি চলছে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
জীবদ্দশায় আর কোনো রাজনৈতিক দল করব না: লতিফ সিদ্দিকী
ভোলার গ্যাস দিয়েই নতুন সার কারখানা স্থাপন করা হবে: আদিলুর রহমান
ভোলার গ্যাস দিয়েই নতুন সার কারখানা স্থাপন করা হবে: আদিলুর রহমান
মহাকাশে ২০৪ দিন কাটিয়ে পৃথিবীতে ফিরলেন চীনা নভোচারীরা
আরো খবর ⇒


 সর্বাধিক পঠিত

আলোকিত ব্যক্তিত্ব প্রিয় শিক্ষক আব্দুল মতিন
জনপ্রিয় জাদুশিল্পী প্রিন্স হারুন ফের আন্তর্জাতিক মঞ্চে
গাজীপুর সদরে পেট্রোল বোমা সহ আটক -৩
ফ্যাসিস্ট গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার কোনো লকডাউন বাংলাদেশে চলবে না” — বাউফলে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের ঘোষণা
ত্রিশালে আহলে হাদিসের ৪৪ তম জাতীয় ইজতেমা শুরু আজ
প্রকাশক: এম এন এইচ বুলু
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মাহফুজুর রহমান রিমন  |   উপদেষ্টা সম্পাদক : রাজু আলীম  
বিএনএস সংবাদ প্রতিদিন লি. এর পক্ষে প্রকাশক এম এন এইচ বুলু কর্তৃক ৪০ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বুলু ওশেন টাওয়ার, (১০তলা), বনানী, ঢাকা ১২১৩ থেকে প্রকাশিত ও শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ফোন:০২৯৮২০০১৯-২০ ফ্যাক্স: ০২-৯৮২০০১৬ ই-মেইল: spnewsdesh@gmail.com