প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৫, ৪:৫১ পিএম (ভিজিট : ৩৬)
‘আমি জেলে না। দিনমজুরি কাজ করে সংসার চালাই। রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে আমার নামে একটি জেলে কার্ড করিয়েছি। এই বছর আমার এলাকার আকতার মেম্বারকে তিন হাজার টাকা দিয়ে উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে একটি বকনা বাছুর পেয়েছি।’ এই কথাগুলো অকপটে স্বীকার করেছেন চরফ্যাশন উপজেলার আমিনাবাদ ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আলী আকবর। আকতার একই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। টাকার বিনিময়ে বকনা বাছুর দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কারো কাছ থেকে টাকা নেইনি। এসব তালিকা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হয়েছে। এসবের সাথে আমি জড়িত না।’
জেলে না হয়েও জেলে তালিকায় নাম উঠেছে কৃষক বাবুল রাড়ীর। পেয়েছেন বকনা বাছুর। তিনি আমিনাবাদ ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। এমন তথ্য অনুসন্ধানে সরজমিনে দেখা গেছে বকনা বাছুরটি তার গোয়াল ঘরে বাঁধা রয়েছে। বাছুরটি কোথা থেকে এবং কিভাবে পেয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রায় নয় মাস আগে মৎস্য অফিস থেকে একটি বাছুর দিয়েছে। মৎস্য অফিসে স্ট্যাম্প বাবত ৬০০ টাকা দিয়েছি ও নিজাম ভাইকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। আমাকে চাল দিবে বলে আমার নামের জেলে কার্ডটি নিজাম ভাই নিয়ে গেছে। আমাকে চাল দেয়নি এবং কার্ডটিও ফেরত দেয়নি। আমি ২০ বছর যাবত কৃষি কাজ করছি।’ কার্ডটি কিভাবে আপনার নামে হয়েছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকার মিঠু চেয়ারম্যান জেলে তালিকায় আমার নাম লেখাইছে এবং আমর নামে জেলে কার্ড হয়।’
কৃষক বাবুলের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কিভাবে বকনা বাছুর দিয়েছেন? জানতে চাইলে নিজাম বলেন, আমি বাবুলের কাছ থেকে টাকা নেইনি। তবে অন্য লোকের মাধ্যমে মৎস্য অফিসে তার কাগজপত্র পাঠিয়েছি। পরবর্তীতে সে কিভাবে অফিস থেকে বাছুর এনেছে তা আমার জানা নাই।
দিনমজুর আলী আকবর ও কৃষক বাবুলের মতো অনেকেই টাকার বিনিময়ে বকনা বাছুর বিতরণ তালিকায় নাম লিপিবদ্ধ করেছেন। তবে এদের মধ্যে অধিকাংশই জেলে নয়, অন্য পেশার মানুষ। জেলে তালিকায় দেখা গেছে ওয়ার্ড নম্বর বিহীন কিছু জেলের নাম রয়েছে। যদিও সরজমিনে ওই জেলেদের কোন হদিস পাওয়া জায়নি।
উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে পৌরসভাসহ ২১ ইউনিয়নে ১৭৪ জন তালিকাভুক্ত জেলেদের মাঝে ৪ কিস্তিতে বকনা বাছুর বিতরণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর জানায়, মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় জেলেদের বিকল্প কর্মস্থানের লক্ষ্যে উপকরন হিসেবে বকনা বাছুর বিতরণ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞায় জেলেরা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকে, তখন তারা বেকার হয়ে যায়। পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে সরকার এই উদ্দ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, ‘বকনা বাছুর বিতরণ হয়েছে কয়েক মাস আগে। টাকার নেয়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। তবে এই বিষয়ে আমাকে কেউ অভিযোগ করেনি।’
এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথির মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ না করায় কোন বক্তব্য জানা যায়নি।