প্রকাশ: বুধবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৫, ৫:১৬ পিএম (ভিজিট : ৫৪)
উদ্যম ও সংগ্রামের অন্য নাম-নারী উদ্যোক্তা অজিফা জামান পুথি। লৈঙ্গিক বৈষম্যের কাঁটা পেরিয়ে সফলতার নতুন সংজ্ঞা লিখছেন এ যুগের নারীরা।
আমাদের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে নারীদের ভূমিকা আজ অনস্বীকার্য। কিন্তু ঘরের দোরগোড়া থেকে শুরু করে ব্যবসার কঠিন মঞ্চ পর্যন্ত— নারী উদ্যোক্তাদের পদে পদে মোকাবিলা করতে হয় অদৃশ্য এক সংগ্রামের, যা প্রায়শই পুরুষের পথের চেয়ে অনেক বেশি বন্ধুর। এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সেই চ্যালেঞ্জগুলো, যা প্রতিটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী নারীকে ছুঁয়ে যায়।
সবার আগে নারী উদ্যোক্তাকে মোকাবিলা করতে হয় বহু পুরোনো সামাজিক প্রত্যাশা ও লৈঙ্গিক ভূমিকার ধারণা।নারীর হাতে কাঁচি-খুন্তির বদলে ব্যবসার ফাইল দেখতে সমাজ এখনও দ্বিধাগ্রস্ত। ব্যবসা বাড়লে পারিবারিক ও সন্তানের যত্নের ভার সামলানোর 'দ্বৈত দায়িত্বের' কারণে তাদের মনস্তাত্ত্বিক চাপ বহুগুণ বেড়ে যায়। এই দ্বন্দ্বে অনেকেই মাঝপথে স্বপ্ন ত্যাগ করতে বাধ্য হন।পুরুষ-অধ্যুষিত শিল্পে, একজন নারীর ব্যবসায়িক বুদ্ধি, দৃঢ়তা এবং ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতাকে প্রায়শই সহজভাবে মেনে নেওয়া হয় না। তাদের সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব না দিয়ে কেবল 'আবেগপ্রবণ' আখ্যা দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়।ব্যবসার প্রয়োজনে ভ্রমণ, মিটিং বা গভীর রাতে কাজ করার ক্ষেত্রে নারীদের নিরাপত্তা জনিত উদ্বেগ তাদের স্বাভাবিক গতিশীলতাকে (Mobility) সীমিত করে, যা নেটওয়ার্কিং ও বাজারের প্রসারে বাধা দেয়।
ব্যবসার প্রাণভোমরা হলো পুঁজি, আর নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এই প্রাণশক্তি জোগাড় করাই সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা।অধিকাংশ নারীর নামে স্থাবর সম্পত্তির অভাব থাকে, যা ব্যাংক ঋণের প্রধান শর্ত। ফলস্বরূপ, তারা সহজ শর্তে ঋণ পান না| ব্যবসার প্রসার ঘটে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। কিন্তু ক্ষমতাশালী ব্যবসায়িক মহলে নারীদের প্রবেশাধিকার কম থাকায় তারা বড় অর্ডার, সরবরাহকারী বা বাজারের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থেকে বঞ্চিত হন।
সঠিক প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা না পেলে নারীর উদ্যোগ ছোট পরিসরেই থেকে যায়।ই-কমার্স ও প্রযুক্তিনির্ভর এই যুগেও বহু নারী উদ্যোক্তা আধুনিক প্রযুক্তি, ডিজিটাল মার্কেটিং বা ডেটা অ্যানালিটিক্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ পান না।সরকারি সুযোগ-সুবিধা, লাইসেন্স বা ব্যবসা নিবন্ধনের জটিল ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া অনেক নারীর জন্য নিরুৎসাহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রতিবন্ধকতা থাকবে, কিন্তু এগিয়ে যাওয়ার পথও তৈরি করতে হবে। এই সংগ্রামকে জয় করতে প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা। আমি মনে করি সরকারের উচিত নারী উদ্যোক্তাদের জন্য জামানতবিহীন স্টার্ট-আপ ফান্ড এবং তাদের পণ্যের জন্য বিশেষ বাজারের (Market Linkage) ব্যবস্থা করা।পরিবার এবং সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে, নারীর উদ্যমকে সম্মান জানাতে হবে এবং গৃহস্থালির দায়িত্ব ভাগ করে নিতে হবে।