সমাজের সবাই অভিনেতা হবেন, ছবি আঁকবেন, গাইবেন, নাচবেন; সেটা হয় না। সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে সেটার দরকারও নেই বলে মনে করেন দেশের অন্যতম গুণী অভিনেতা মোশাররফ করিম।
তার ভাষায়, ‘সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশের জন্য মূলত দরকার শিল্পবোধ সম্পন্ন মানুষ। সে মানুষটি শিল্পীও হতে পারেন, সাধারণ পেশাজীবীও হতে পারেন। আমি বিশ্বাস করি শিল্পবোধ সম্পন্ন মানুষ সুন্দরকে ভালোবাসে। সে কখনও ধ্বংসের পক্ষে থাকে না। সোজা কথায়, শিল্প যে বোঝে সে ধ্বংসবিরোধী মানুষ। এই মানুষগুলোর সংখ্যা আমাদের সমাজে ও রাষ্ট্রে বাড়াতে হবে।’
৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে দাঁড়িয়ে এমনটাই বলেন অভিনেতা। এদিন বাংলাদেশ কালচারাল রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিসিআরএ)-এর ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত হয় ‘সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা এবং গুণীজন সম্মাননা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আলোচনা সভা শেষে ‘বিসিআরএ অ্যাওয়ার্ড-২০২৫’ নামের এই আয়োজনে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয় বিশ্বনন্দিত যাদুশিল্পী জুয়েল আইচ এবং কিংবদন্তি অভিনেত্রী আনোয়ারা বেগমকে। এছাড়া চলচ্চিত্র, টিভি ও ওটিটি মাধ্যমে তুমুল জনপ্রিয়তার কারণে ‘মোস্ট পপুলার অ্যাক্টর’-এর সম্মাননা পান মোশাররফ করিম। মোস্ট পপুলার অ্যাক্ট্রেস পুরস্কার অর্জন করেন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস। মোস্ট পপুলার মিউজিক ডিরেক্টর অ্যান্ড কম্পোজারের অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন প্রিন্স মাহমুদ।
‘রঙ্গিলা কিতাব’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পান পরীমণি, ‘জিন-৩’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পান আবদুন নূর সজল, একই ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ গায়িকার পুরস্কার পান দিলশাদ নাহার কণা, শ্রেষ্ঠ গীতিকারের পদক পান রবিউল ইসলাম জীবন। ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার পান আবু রায়হান জুয়েল।
‘স্যালুট’ নাটকের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পান রাশেদ সীমান্ত, ‘খোয়াবনামা’ নাটকের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা তৌসিফ মাহবুব। ‘সাদী মুবারক’ নাটকের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পান রোবেনা রেজা জুঁই, ওটিটি বিভাগে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পান (পেট কাটা ষ-২) কাজী নওশাবা আহমেদ। শ্রেষ্ঠ পরিচালক হন রাইসুল তমাল (নাটক: শ্যাওলা ফুল), শ্রেষ্ঠ পরিচালক অনন্য ইমন (নাটক: অভাব), সেরা গানের অনুষ্ঠান বৈশাখীর গোল্ডেন সংয়ের জন্য প্রযোজক লিটু সোলায়মান। নৃত্যশিল্পীর পুরস্কার পান মো. মোফাসসাল আল আলিফ ও উম্মে তাবাসসুম খান মিতিন। শ্রেষ্ঠ গায়ক ফাহিম ইসলাম।
এছাড়াও বিশেষ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পান অভিনেতা শামীম জামান, লুমিনো পিকচার্সের স্বত্বাধিকারী রাকিবুল হাসান তানভীর, মডেল নওরিন, শাখাওয়াত হোসেন শুভ, রোস্তম মল্লিক ও ডালিম রহমান।
বিসিআরএ-এর ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সাংবাদিকতায় অনন্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী এবং বৈশাখী টিভির হেড অব প্রোগ্রাম জিয়াউল কবির সুমনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। কবিতায় অনন্য অবদানের জন্য সম্মাননা পান জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক রেজাউদ্দিন স্টালিন। বিশেষ সম্মাননা পান তাশিক আহমেদ, চিত্রনায়ক শাকিল খান, কণ্ঠশিল্পী সায়েরা রেজা, প্রযোজক ধ্রুব গুহ, আসিফ ইকবাল আহমেদ ও রাজু আলীম।
এছাড়াও বিনোদন সাংবাদিকতা ও সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে বিশেষ অবদানের জন্য পুরস্কার পান বাচসাস সাধারণ সম্পাদক রাহাত সাইফুল (সাংগঠনিক), মাসুম অপু (সাংবাদিকতা), মোস্তফা মতিহার (সাংবাদিকতা), মাহমুদ মানজুর (সাংবাদিকতা ও গীতিকবিতা), জনি হক (সাংবাদিকতা), অনিন্দ্য মামুন (সাংবাদিকতা) ও মো.জাহিদুল ইসলাম (সাংবাদিকতা)।
সংগঠনের সভাপতি অভি চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ। অনুষ্ঠান উদ্বোধক বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন।
বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভুঁইয়া, এটিএন বাংলার অনুষ্ঠান ও সম্প্রচার বিভাগের উপদেষ্টা তাশিক আহমেদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক এরফানুল হক নাহিদ, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি-বাচসাস-এর সাবেক সভাপতি রাজু আলীম, এবি ফ্যাশন মেকারের স্বত্বাধিকারী সানাউল হক বাবুল সিআইপি। প্রধান আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি-বাচসাস-এর সভাপতি কামরুল হাসান দর্পণ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দুলাল খান ও সহসাধারণ সম্পাদক এবং অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব পান্থ আফজাল। জুরি বোর্ডে ছিলেন সুমন মোস্তফা (চেয়ারম্যান), পান্থ আফজাল (সদস্য সচিব), অন্য সদস্যরা হলেন ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল হাসান, বখতিয়ার জন ও শিব শংকর মোাদক।
অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির আহবায়ক ছিলেন অচিন্ত্য চয়ন এবং যুগ্মআহ্বায়ক রঞ্জু সরকার। পদক প্রদান শেষে অনুষ্ঠানে হয় জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।