
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি, ভুয়া দলিল নিবন্ধন ও হয়রানির শিকার হয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার অভিযোগ করলেও কোনো কার্যকর প্রতিকার মেলেনি এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী কৃষিবিদ মো. মাঈন উদ্দিনের। তার অভিযোগ, তিনি নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মাধ্যমে ভুয়া দলিল নিবন্ধনের শিকার হয়েছেন। ২০১৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর ২৮৪ নং কাঠালী মৌজায় ১৭৮৭ নং একটি দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়, যেখানে দাতা মোজাম্মেল হক ও গ্রহীতা মাছুদুল হকের নাম ব্যবহার করে জমি বিক্রি দেখানো হয়। অথচ প্রকৃত খতিয়ান ছিল ভিন্ন, এবং উল্লিখিত দাতার ঐ দাগে কোনো জমি ছিল না। দলিল লেখক ও সাব-রেজিস্ট্রারের সহযোগিতায় জাল দলিল রেজিস্ট্রি হওয়ার পর তা দিয়ে খারিজ আবেদন করা হয় এবং নতুন খতিয়ান সৃজন করা হয়। স্থানীয় ভূমি অফিসও বানোয়াট রিপোর্ট দিয়ে এই জালিয়াতিকে প্রশ্রয় দেয়। এমনকি আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে ভুয়া খতিয়ান সৃজন করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। সেখানে নিজেদের জমি বুঝে পাওয়া, জাল দলিল তৈরির পেছনের লোকজন এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি জানান কৃষিবিদ মো. মাঈন উদ্দিনের।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এই ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ভুয়া মালিক সেজে ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ তুলে নিচ্ছে। ফলে দেশের ব্যাংক খাত খেলাপি ঋণের বোঝায় আরও ভারী হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জানালেও সঠিক তদন্ত হয়নি। নোয়াখালী পুলিশের পিবিআই শাখার এসআই মোহাম্মদ জোবায়ের সৈয়দ তদন্ত করে দুর্নীতির প্রমাণ পাননি বলে পক্ষপাতমূলক রিপোর্ট দিয়েছেন। পরবর্তীতে নারাজি দেয়া হলে বর্তমানে আদালতের নির্দেশে মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে।
মাঈন উদ্দিন জানান, ২০২৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর নোয়াখালীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিনি একটি মামলা দায়ের করেছেন, যা বর্তমানে আদালতের নির্দেশে সিআইডির তদন্তাধীন। এর আগে ২০২৫ সালের ৬ জানুয়ারি ডাকযোগে জেলা প্রশাসক, দুর্নীতি দমন কর্মকর্তা, বিভাগীয় কমিশনারসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ প্রেরণ করলেও কোনো প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
ভুক্তভোগী কৃষিবিদ মো. মাঈন উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, করেছেন, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ভুয়া, জাল ও মিথ্যা তথ্য ব্যবহার করে উদ্ভট ও কাল্পনিক কাগজপত্র তৈরি করছেন, যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে। সরকারি দপ্তরে নিয়মতান্ত্রিক কাজ বছরের পর বছর ঝুলে থাকে এবং অফিসে গেলে কর্মকর্তা ও দালালরা চুক্তির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করে ভাগাভাগি করে নেন।
মাঈন উদ্দিন অভিযোগ করেন, জনগণের করের টাকায় পরিচালিত রাষ্ট্রে সরকারি কর্মকর্তারা জনগণের সেবক হওয়ার শপথ নিলেও বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রে এর উল্টো চিত্র দেখা যায়। অসৎ একটি চক্র দালালদের মাধ্যমে ঘুষ বাণিজ্যে জড়িয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে। এভাবে অসহায় মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও দুর্নীতিবাজ চক্র দ্রুত সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছে।
তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দেশের জনগণ সরকারি সেবা নিতে গিয়ে বারবার হয়রানি ও ঘুষের শিকার হচ্ছে। এ অবস্থায় দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। তিনি দাবি জানান, দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে দোষীদের চাকরিচ্যুত করা, আইনগত শাস্তি প্রদান এবং অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার বিধান চালু করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভুক্তভোগীর দুই ভাই মো. মহাসিন ও মাহফুজুল হক টিপু।