রবিবার ১৫ জুন ২০২৫ ১ আষাঢ় ১৪৩২
 
শিরোনাম:


নির্বাচন নিয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্য, কে কী ভাবছেন?
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫, ৬:১৭ PM

ঢাকা সেনানিবাসের সেনাপ্রাঙ্গণে অফিসার্স অ্যাড্রেসের সূত্রের বরাত দিয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্য প্রকাশ হয়েছে গণমাধ্যমে। সেখানে দাবি করা হয়, সংস্কার প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, কী সংস্কার হচ্ছে, কিভাবে হচ্ছে, এ বিষয়ে তার কিছু জানা নেই। এ বিষয়ে তার সঙ্গে কোনো পরামর্শ বা আলোচনা করা হয়নি। মানবিক করিডর বিষয়ে সিদ্ধান্ত একটি নির্বাচিত সরকার থেকেই আসতে হবে এবং তা বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই হতে হবে। এ ছাড়া আগামী ডিসম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত বলে সেনাপ্রধানের বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে।

নির্বাচন নিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের এমন বক্তব্যের পর থেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সরকারেও। কেউ কেউ তার বক্তব্য যৌক্তিক মনে করছে। আবার কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ‌‘অপ্রত্যাশিত’ বলে মন্তব্য করছেন।
সংবাদ সম্মেলনের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘সেনাপ্রধান যৌক্তিকভাবেই তাদের অবস্থান ব্যাখা করেছেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করা তো সেনাবাহিনীর দায়িত্ব না। সবাই তো একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করেছে। দেশের সর্বত্র এখন বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। সরকার এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ফলে যত দ্রুত সম্ভব একটা নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা সরকারের দায়িত্ব। সেনাপ্রধান যেটা বলেছেন, সেটা তো দেশের সব মানুষের দাবি। এটাকে ভিন্নভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। তারা তো তাদের নিজেদের কাজে ফিরে যেতে চায়। কতদিন তারা রাস্তায় থাকবে?’

সেনাপ্রধানের বক্তব্য সম্পর্কে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘তার বক্তব্য নিয়ে এখনো আমরা দলীয়ভাবে কোনো আলোচনা করিনি। তবে আমার ব্যক্তিগত মত হলো, নির্বাচন কবে হবে সেটা সরকারের সিদ্ধান্ত। আমরা যারাই দাবি করছি, তারা কিন্তু সরকারের কাছেই দাবি করছি। এই জায়গায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এই ধরনের বক্তব্য সরকারের উপর বা অন্যান্য দলের ক্ষেত্রে কতটুকু ভালো বার্তা দেয়? সেনাপ্রধানের এই ধরনের কোনো মন্তব্য করার সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না। এর আগেও আমরা সেনাপ্রধানের এই ধরনের মন্তব্য শুনেছি। একেবারে ডিসেম্বরেই ভোট হতে হবে- ওনার কাছ থেকে এই ধরনের মন্তব্য অগ্রহণযোগ্য।’

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান মনে করেন, ‘নির্বাচন নিয়ে যখন রাজনৈতিক দলগুলো এক ধরনের বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিল তখন সেনাপ্রধানের এই বক্তব্য একটা বার্তা দেয়।’ ডয়চে ভেলেকে তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনী অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে। তাদের যে ক্ষমতা দখলের কোনো মোহ নেই সেটা তারা পরিস্কার করে বুঝিয়ে দিয়েছেন। গত কয়েকদিন ধরে ক্যান্টনমেন্টে কী হচ্ছে তা নিয়ে কিন্তু নানা মহলে আলোচনা হচ্ছিল। সেই জায়গায় নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে সেনাপ্রধানের এই বক্তব্য অত্যন্ত ইতিবাচক। সেভাবেই বিষয়টি দেখতে হবে।’

ডিসেম্বরে ভোট নিয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করতে গিয়ে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন বলেন, ‘এনসিপি তো নির্বাচনের বিরুদ্ধে নয়। তবে আমরা পরিস্কার করে বলেছি, বিচার, সংস্কার ও গণভোটের পরই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত। মানুষ তো শুধু একটা নির্বাচনের জন্য জীবন দেননি। আমরা বলেছি, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সরকার সংস্কার কমিশন গঠনের আগেই শেখ হাসিনার করা আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। ফলে এই কমিশন ভেঙে দিয়ে নতুন কমিশন গঠন করতে হবে। আর নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের জন্য কতটুকু প্রস্তুত, সেটা দেখার জন্য হলেও আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে হবে।’ এদিকে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ। ফেসবুক পোস্টে হাসনাত বলেন, ‘এনসিপিকে নির্বাচনবিরোধী আখ্যা দিয়ে সচেতনভাবেই এক ধরনের কলঙ্ক দেওয়ার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি ছাত্র উপদেষ্টারা দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকতে চায়—এমন গুজব ছড়িয়ে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি করার নানা কার্যক্রমও চলমান। এই চক্রান্ত কয়েকটি দিক থেকে পরিচালিত হচ্ছে।’

সেনাপ্রধানের বক্তব্য ইস্যুতে তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের সাব-কনশাস মাইন্ডে আর্মিকে রাজনৈতিক সালিসের ক্ষমতা দিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। অথচ বিএনপি ঐতিহাসিকভাবে সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ভুক্তভোগী একটা দল। আমরা এখনো ওয়ান-ইলেভেনের ইতিহাস ভুলে যাইনি, এখনো তারেক রহমানের নির্যাতনের ঘটনা আমাদের স্মরণে রয়েছে। সেনাবাহিনী আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সদা সতর্ক পাহারাদার।দেশের প্রয়োজনে, সার্বভৌমত্বের প্রয়োজনে, আমরা প্রয়োজন হলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করব। কিন্তু গণতান্ত্রিক অধিকার এবং সুষ্ঠু ক্ষমতা হস্তান্তরের যে আকাঙ্ক্ষা থেকে ২০২৪-এর অভ্যুত্থান ঘটেছে, সেখানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপকে আমরা মেনে নেব না। রাজনৈতিক সালিসের সুযোগ দিয়ে আরেকটি ওয়ান-ইলেভেনের পথ কেউ প্রশস্ত করছে কি না—তা নিয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।’







আরও খবর


 সর্বশেষ সংবাদ

ইরান সরকার সবচেয়ে দুর্বল, আঘাত হানার এখনই সময়: রেজা পাহলভি
জর্ডানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সতর্ক থাকার আহ্বান দূতাবাসের
লন্ডনে ‘একান্ত বৈঠকের’ আলোচনা জাতির সামনে পরিষ্কার করতে হবে : চরমোনাই পির
এবার দিনের আলোয় ইসরায়েলে হামলা শুরু ইরানের
আরো খবর ⇒


 সর্বাধিক পঠিত

দলীয় সংকটে পরীক্ষিত নেতৃত্ব-এরশাদ আলম জর্জ এখন শেরপুর-৩-এর ভরসা
ফের করোনায় বাড়ছে ‘উদ্বেগ’, এইচএসসি পরীক্ষা যথাসময়ে
সালথায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রতিপক্ষের ওপর অতর্কিত হামলা আহত- ৪
ঝিনাইগাতীতে পাহাড় ও নদী থেকে পাথর ও বালু লুটপাট চলছেই ,সৌন্দর্য হারাচ্ছে গারো পাহাড়
গাজীপুরের পুবাইল থেকে ০৬ ভুয়া পুলিশ আটক
প্রকাশক: এম এন এইচ বুলু
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মাহফুজুর রহমান রিমন  |   উপদেষ্টা সম্পাদক : রাজু আলীম  
বিএনএস সংবাদ প্রতিদিন লি. এর পক্ষে প্রকাশক এম এন এইচ বুলু কর্তৃক ৪০ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বুলু ওশেন টাওয়ার, (১০তলা), বনানী, ঢাকা ১২১৩ থেকে প্রকাশিত ও শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ফোন:০২৯৮২০০১৯-২০ ফ্যাক্স: ০২-৯৮২০০১৬ ই-মেইল: spnewsdesh@gmail.com