শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫ ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
 
শিরোনাম:


সময়ের পরিক্রমায় বিলুপ্তির পথে ঔষধি গাছ ভেন্না
আরএম সেলিম শাহী, শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫, ৭:৩৪ PM

একসময় শেরপুরের ঝিনাইগাতীর জনপদে জাদুকরী ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ ভেন্না গাছ সচরাচর চোখে পড়লেও সময়ের পরিক্রমায় বিলুপ্তির পথে এই গাছ। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের নানা চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি মানবদেহের নানা রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এই ভেন্না গাছ ও তার ফল থেকে তৈরি তেল।

তাইতো পল্লী কবি জসিম উদ্দিন তার এক বিখ্যাত কবিতায় এভাবেই তুলে এনেছিলেন ভেন্না গাছের কথা। 'আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও,/ রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।/ বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি/ একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।' স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই জনপদের বনে-বাদাড়ে, পথের ধারে, পুকুর পাড় ও বাড়ির আঙিনায় একসময় দেখা যেত ঔষধি নানা গুণে সমৃদ্ধ ভেন্না গাছ। এই অঞ্চলের মানুষের নানা অসুখ-বিসুখে ভেন্না গাছের পাতা ও তার ফল থেকে তৈরি তেল ব্যবহার করা হতো। আধুনিকায়ন আর আধুনিক চিকিৎসার উৎকর্ষে ভেন্না গাছসহ নানারকম ঔষধি উদ্ভিদ ও গাছ পরিবেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে। এলাকার স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, পরিবেশবান্ধব ও ঔষধি গাছ ভেন্না মানুষের শরীরের কাটা অংশ জোড়া লাগাতে, চুল পড়া রোধে, মুখের রুচি বাড়াতে, শরীরের বাত-ব্যাথায়, ক্ষত সারাতে ও দাঁত এবং মাড়ির যে কোনো সমস্যায় যুগান্তকারী ভূমিকা রেখে আসছে। এ ছাড়া ভেন্না গাছের ফলের বীজ থেকে তৈরি তেলে রয়েছে জাদুকরী ঔষধি ক্ষমতা। একসময় বাড়ির বা বাড়ির পাশের ক্ষেতখামারে বেড়া স্থাপনেও এই ভেন্না গাছ ব্যবহার করা হতো।

এদিকে ইউনানি চিকিৎসকরা জানান, মানবদেহের নানা রোগে ভেন্না গাছের পাতা ও বীজ থেকে তৈরি তেল প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। চোখ ওঠায় ভেন্না পাতার রস হালকা গরম করে ছ্যাঁকা দিলে অল্প সময়েই আরোগ্য পাওয়া যায়। পেটে ব্যাথা হলে ভেন্নার কঁচি পাতা পানিতে সেদ্ধ করে পরিমাণমতো খেলে পেট ব্যাথা সেরে যায়, এতে মাথাব্যাথাও সেরে যায়। রাতকানা রোগে ১০ থেকে ১৫ গ্রাম ভেন্না পাতা ঘিয়ে ভেজে বা যেকোনো শাকের সঙ্গে ভেজে খেলে তা কমে যায়। মহিলাদের রক্তস্রাবের কারণে তলপেটে ব্যাথা নিরাময়ে ভেন্না পাতা গরম করে তলপেটে ছ্যাঁকা দিলে ব্যাথা সেরে যায় এবং এভাবে দু-একদিন ব্যবহারে এ থেকে নিরাময় মেলে। এ ছাড়াও ভেন্না গাছের মূলের ছাল ও হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে ব্যবহারে খোস চুলকানি তাড়াতাড়ি সেরে যায়। প্রস্রাব কমে যাওয়া রোগীদের ক্ষেত্রে ভেন্না গাছের কাঁচা ছাল পানিতে সেদ্ধ করে পরিমাণ মতো খেলে প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে ভেন্নার বীজ থেকে তৈরি তেল গরম করে বিষফোঁড়ার ওপর লাগালে ফোঁড়া পেকে ফেটে যায়, এতে ব্যথা উপশম হয় ও রোগ থেকে আরোগ্য মেলে। সায়োটিক বাতের ক্ষেত্রে ভেন্নার বীজ বেটে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে এ রোগ থেকে আরোগ্য পাওয়া যায়। শরীরের পোড়া ক্ষতের মধ্যে ভেন্না তেল ব্যবহার করলে রোগীর জ্বালাপোড়া কমে যায় এবং কয়েকদিন ব্যবহারে এর থেকে আরোগ্য মেলে। এ ছাড়াও ভেন্না গাছের পাতা, পাতার রস ও বীজ এবং বীজ থেকে তৈরি তেল মানুষের আরও অনেক রোগ নিরাময়ে আদিকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ঝিনাইগাতী উপজেলার স্বনামধন্য হেকিম আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ভেন্না গাছ ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ একটি গাছ। প্রাচীনকাল থেকেই ইউনানি চিকিৎসায় এই গাছটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ভেন্নার বৈজ্ঞানিক নাম Ricinus communi। ভেন্নার তেলের অপর নাম ক্যাস্টর অয়েল বা বেড়ির তেল। ভেন্না গাছের চারা দেখতে অনেকটা পেঁপে গাছের চারার মতো। এ গাছ একসময় এমনি এমনিতেই গ্রামীণ পরিবেশে জন্মাত। সময়ের পরিক্রমায় আর ভেষজ চিকিৎসার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাওয়ায় ঔষধি গাছ ভেন্নাসহ নানা ধরনের ঔষধি উদ্ভিদ ও গাছ পরিবেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে। ইউনানি চিকিৎসাও এক ধরনের বিজ্ঞান। এই চিকিৎসা ব্যবস্থাকে প্রাচীনকালের মতো মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আমাদের সকলকে ঔষধি উদ্ভিদ ও গাছের পরিচর্যা করতে হবে।







আরও খবর


প্রকাশক: এম এন এইচ বুলু
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মাহফুজুর রহমান রিমন  |   উপদেষ্টা সম্পাদক : রাজু আলীম  
বিএনএস সংবাদ প্রতিদিন লি. এর পক্ষে প্রকাশক এম এন এইচ বুলু কর্তৃক ৪০ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বুলু ওশেন টাওয়ার, (১০তলা), বনানী, ঢাকা ১২১৩ থেকে প্রকাশিত ও শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ফোন:০২৯৮২০০১৯-২০ ফ্যাক্স: ০২-৯৮২০০১৬ ই-মেইল: spnewsdesh@gmail.com