রবিবার ১৫ জুন ২০২৫ ১ আষাঢ় ১৪৩২
 
শিরোনাম:


‘মাইক্রোক্রেডিটকে এনজিওর ধারণা থেকে বেরিয়ে ব্যাংকিংয়ে আসতে হবে’
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫, ৩:৪১ PM

তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকিং মানুষের ভিত্তিতে হয়েছে। জমানতবিহীন ব্যাংক, বিশ্বাসের ভিত্তিতে আমরা টাকা দিই।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘আজ এমন সময় আমরা আলাপ করছি যখন জমানতওয়ালা ব্যাংক, যারা নিজেদের প্রকৃত ব্যাংক বলে বিচার করত তাদের অনেকে আজকে হাওয়া। টাকা নিয়ে লোপাট। ব্যাংক শেষ। আর মাইক্রোক্রেডিটের পরিসংখ্যান দেখেন। কেউ পয়সা নিয়ে পালায় নাই। এই হলো পরিহাস।’

‘মাইক্রোক্রেডিটই ব্যাংকিংয়ের ভবিষ্যৎ’- উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটাই প্রকৃত ব্যাংকিং, আগামী দিনের ব্যাংকিং যেটাতে মানুষ নিজের পরিচয়ে কাজ করবে নিজের বিশ্বাসের ওপরে ব্যাংকিং চলবে টাকার ওপরে না।’
মাইক্রোক্রেডিটের জন্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্যের পর প্রত্যেক এনজিও চেষ্টা করলো একইরকম কিছু করতে। ক্রমে ক্রমে প্রসার হতে আরম্ভ করল। নানারকমের নতুন নতুন জিনিস, নানা আইডিয়া নিজেদের সুবিধার জন্য ঢোকাতে আরম্ভ করল। এটা ভবিষ্যতের জন্য খারাপ হবে মনে করে একটি রেগুলেটরি অথরিটির প্রয়োজন হলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম, তারা বলল “আমাদের কাজ না”। অর্থ মন্ত্রণালয় শুরুতে গুরত্ব দিল না, পরে বলল “আচ্ছা কী করতে হবে জানাও”। তখন আমরা বললাম, রেগুলেটরি অথরিটি হওয়া দরকার কারণ যে হারে বাড়ছে বড় রকমের সমস্যা হতে পারে।’

‘তৎকালীন গভর্নর ফখরুদ্দীন সাহেব আমাদের সমর্থন করল। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে এটা হতে পারবে না। তারা ব্যাখ্যা চাইল। আমি বললাম, এটা বহু দেশে বলেছি, এখনো বলি, গ্রামীণ ব্যাংকও ব্যাংক, অন্যান্য ব্যাংকও ব্যাংক। কিন্তু তফাত অনেক। উদাহরণ দেই, আমেরিকান ফুটবলও ফুটবল। ইউরোপিয়ান ফুটবলও ফুটবল। কিন্তু খেলা ভিন্ন। আপনি যদি ইউরোপিয়ান ফুটবলের রেফারিকে দিয়ে আমেরিকান ফুটবল খেলা চালাতে চান ইট উইল বি অ্য ডিজাস্টার। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দিয়ে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ন্ত্রণ করবেন, সে তো ক্ষুদ্র ঋণ জানেই না। সে তো ইউরোপীয় ফুটবলের রেফারি’, প্রধান উপদেষ্টা বলেন।

তিনি বলেন, ‘অবশেষে ফখরুদ্দীন সাহেব রাজি হলেন। গভর্নরকে দিয়ে এটা পরিচালনা করানোর ব্যাপারেও তাঁকে রাজি করাতে হলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরে এর অফিস করার আলোচনা ছিল। আমরা বললাম, আলাদা জায়গায় অফিস হতে হবে... আজকে নতুন ভবন হলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা এটিকে বোঝার চেষ্টা করেছেন, নিয়মকানুন করেছেন। তারা যদি অন্যান্য ব্যাংকের রেগুলেটরি নিয়মের ওপর এটা স্থাপন করত তাহলে মাইক্রোক্রেডিট সেদিনই শেষ হয়ে যেত আর খুঁজে পাওয়া যেত না। আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি।’

প্রধান উপদেষ্টা জানান, নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কে হবে এ নিয়ে শুধু বাংলাদেশ না, যে দেশেই মাইক্রোক্রেডিট হয়েছে সে দেশই সমস্যায় পড়েছে।
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি তাদেরকে বারে বারে বলে এসেছি তোমাদের এত কিছু চিন্তা করতে হবে না। কারণ বাংলাদেশ এর সমাধান দিয়ে দিয়েছে। মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি শুধু যে বাংলাদেশের জন্য কাজ করেছে তা না এটা আন্তর্জাতিকভাবে অনেক দেশের সহায়ক হয়েছে।’

অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রেগুলেটরের ওপর কড়া না হয়ে ইউজার ফ্রেন্ডলি রেগুলেশন যেন হয় সেভাবে আইন করা, যেন কোনোকিছু চাপিয়ে না দেওয়া হয়। এমআরএ’কে এখন রেগুলশনের পাশাপাশি প্রমোশনাল অ্যাক্টিভিটিও দেখতে হবে। সেভিংসের রিটার্ন, সার্ভিস চার্জ যেন সহজ হয় সেদিকে নজর দিন। উপকারভোগীদের জন্য যেন সহজ হয়।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘মাইক্রোক্রেডিট আজকে অনেক দূর এগিয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের ১০ শতাংশ স্থান সমপরিমাণ সম্পদ আছে মাইক্রোক্রেডিট সেক্টরে। সবচেয়ে বড় কথা, ব্যাংকিং খাতে যে জায়গাগুলোতে দুর্বলতা আছে, মাইক্রোক্রেডিট সে জায়গায় শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। সদস্যদের সঞ্চয় বেড়ে ৬৮ হাজার কোটি টাকার ওপরে, পুঞ্জীভূত উদ্বৃত্ত বেড়ে ৬১ হাজার কোটি টাকার ওপরে হয়েছে। এটা বড় অর্জন। তারা নিজেদের সঞ্চয় ও উদ্বৃত্ত দিয়ে নিজেদের গড়ে তুলছে। বিদেশি সহায়তা, অনুদান নাই বললেই চলে। দাতা তহবিল তিন হাজার কোটি টাকার মতো। এটা খুবই নগণ্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে গ্রামীণ অর্থনীতি বাড়ছে। এজেন্ট ব্যাংকিং ছড়িয়ে পড়ছে। মাইক্রোক্রেডিটের শাখা আছে ২৬ হাজারের মতো। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের শাখা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। এখানে একটা হেলদি কম্পিটিশন শুরু হয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে ফরমাল সেক্টরের পদচারণা বাড়ছে, বাড়বে। মাইক্রোফাইন্যান্স ইনস্টিটিউটটে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে টিকে থাকতে হবে। মাইক্রোক্রেডিট আরও ফাংশনাল করতে রেগুলেটরি অথরিটি ও বাংলাদেশ ব্যাংক একসঙ্গে কাজ করবে।’

মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি নিয়ে নতুন আইনের খসড়া করা হয়েছে। সরকারের কাছে শিগগিরই নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. এম আনিসুজ্জামান চৌধুরী।







আরও খবর


 সর্বশেষ সংবাদ

ইরান সরকার সবচেয়ে দুর্বল, আঘাত হানার এখনই সময়: রেজা পাহলভি
জর্ডানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সতর্ক থাকার আহ্বান দূতাবাসের
লন্ডনে ‘একান্ত বৈঠকের’ আলোচনা জাতির সামনে পরিষ্কার করতে হবে : চরমোনাই পির
এবার দিনের আলোয় ইসরায়েলে হামলা শুরু ইরানের
আরো খবর ⇒


 সর্বাধিক পঠিত

দলীয় সংকটে পরীক্ষিত নেতৃত্ব-এরশাদ আলম জর্জ এখন শেরপুর-৩-এর ভরসা
ফের করোনায় বাড়ছে ‘উদ্বেগ’, এইচএসসি পরীক্ষা যথাসময়ে
সালথায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রতিপক্ষের ওপর অতর্কিত হামলা আহত- ৪
ঝিনাইগাতীতে পাহাড় ও নদী থেকে পাথর ও বালু লুটপাট চলছেই ,সৌন্দর্য হারাচ্ছে গারো পাহাড়
গাজীপুরের পুবাইল থেকে ০৬ ভুয়া পুলিশ আটক
প্রকাশক: এম এন এইচ বুলু
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মাহফুজুর রহমান রিমন  |   উপদেষ্টা সম্পাদক : রাজু আলীম  
বিএনএস সংবাদ প্রতিদিন লি. এর পক্ষে প্রকাশক এম এন এইচ বুলু কর্তৃক ৪০ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বুলু ওশেন টাওয়ার, (১০তলা), বনানী, ঢাকা ১২১৩ থেকে প্রকাশিত ও শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ফোন:০২৯৮২০০১৯-২০ ফ্যাক্স: ০২-৯৮২০০১৬ ই-মেইল: spnewsdesh@gmail.com