রবিবার ১৫ জুন ২০২৫ ১ আষাঢ় ১৪৩২
 
শিরোনাম:


ইয়ামাল-রাফিনিয়াদের নিয়ে যেভাবে বার্সেলোনাকে চ্যাম্পিয়ন করলেন ফ্লিক
স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫, ৬:৩৩ PM

১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ শুরুর সময় সাবেক লিভারপুল ডিফেন্ডার অ্যালান হ্যানসেন বলেছিলেন, ‘শুধু তরুণদের নিয়ে কিছুই জেতা যায় না।’ সেই মন্তব্যের জবাবে সেবার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ‘ক্লাস অব ’৯২’ প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপ জিতে তাকে ভুল প্রমাণ করে। এরপর তারা গড়ে তোলে বিশ্বসেরা এক দলের ভিত্তি। এখন অনেকে বলছেন, বার্সেলোনার এই ‘তরুণ যোদ্ধারাও’ হয়তো সেই ইতিহাসই নতুনভাবে লিখতে চলেছে।

হ্যান্সি ফ্লিকের তরুণদের নিয়ে গড়া দল বৃহস্পতিবার এস্পানিওলের মাঠে ২-০ গোলের জয়ে নিশ্চিত করেছে লা লিগা শিরোপা। এর আগে এপ্রিলেই জিতে নিয়েছে কোপা দেল রে। চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে উঠতে গিয়ে অল্পের জন্য বাদ পড়লেও তাদের সাহসী, মুক্তমনা ফুটবল নতুন করে প্রাণ ফিরিয়েছে শুধু বার্সেলোনারই নয়, ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়েও।

১৭ বছর বয়সী লামিন ইয়ামাল, ১৮ বছরের পাও কুবার্সি কিংবা ২২ বছর বয়সী পেদ্রি, এই তরুণদের প্রতিভা দেখে অনেকেই এখন বলছেন, এরা হয়তো ২০০৮ থেকে ২০১১ সালের পেপ গার্দিওলার সেই অবিশ্বাস্য বার্সা দলকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। সত্যিই কি তাই হবে? সেটা সময়ই বলবে।
লা লিগায় সর্বনিম্ন গড় বয়সের (২৫ বছর) দল গঠন, আর্থিক সংকটে তারুণ্য নির্ভরতা- সব মিলিয়ে তরুণদের জায়গা করে দেওয়ার আদর্শ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বার্সেলোনায়। ভুলে যাওয়াটা সহজ যে, এই ক্লাবটাই কিছুদিন আগেও দারুণ আর্থিক সংকটে ছিল। নতুন খেলোয়াড় কেনা তো দূরের কথা, স্কোয়াডে থাকা অনেক খেলোয়াড়কেও রেজিস্ট্রার করতে পারছিল না।তবে এই ঘুরে দাঁড়ানো শুধু প্রতিভাবান তরুণদের সুযোগ দেওয়ার ফল নয়।

ফ্লিক কীভাবে বদলে দিলেন বার্সেলোনাকে?
বার্সেলোনায় এসে হ্যান্সি ফ্লিক দেখলেন, বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় নিজেদের মান অনুযায়ী খেলতে পারছেন না। লেভানদোভস্কি, রাফিনিয়া আর ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং, তিনজনই আগের কোচ জাভির কাছ থেকে যথেষ্ট আস্থা পাচ্ছিলেন না। ফলে আত্মবিশ্বাসও ছিল না। রাফিনিয়াকে ৬০ মিনিট পার না হতেই বদলে ফেলা হতো, আর লেভানদোভস্কিকে খেলানো হতো গোলমুখ থেকে দূরে, এমন একটা পজিশনে যা তার কাছে একেবারেই অচেনা।

ডি ইয়ং তো প্রায় নিশ্চিত ছিলেন, ক্লাব তাকে বেচে দেবে আর্থিক চাপ কমাতে। তিনি নিজেই বার্সেলোনায় থাকতে চাননি। ফ্লিক এসে প্রথমেই এই তিনজনকে জানিয়ে দেন, তারা তার পরিকল্পনায় কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তার ফল মিলেছে দ্রুত। এই মৌসুমে লেভানদোভস্কি করেছেন ২৫ গোল, রাফিনিয়া করেছেন লিগে ১৮ গোল। তরুণদের মর্যাদা দিতে জানেন ফ্লিক
ফ্লিক বুঝে গিয়েছিলেন, বার্সার টিম কালচারে তরুণরা সুযোগ পেলেও তাদের আসল গুরুত্বটা দেওয়া হতো না। অর্থনৈতিক চাপে পড়ে একাদশে ঢুকলেও তারা দলে প্রভাব রাখতে পারছিল না।

জাভির অবদান অবশ্যই আছে, তিনি এই পরিস্থিতিতে তরুণদের সুযোগ দিয়েছেন। তবে তরুণরা চাইছিল আরেক ধাপ ওপরে উঠতে। তারা দলের নিয়ন্ত্রণ চাচ্ছিল।

ফ্লিক সেই পথ খুলে দিয়েছেন। গাভি, ইয়ামাল, আলেহান্দ্রো বালদে (২১), মার্ক কাসাদো (২১), এরা কেবল মাঠেই নয়, ড্রেসিংরুমেও নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে শুরু করেছে। এমনকি ফ্লিক তাদের নিজেরাই ড্রেসিংরুমের গান বাছাই করতে দেন। ফলাফল? মাঠে দেখা যাচ্ছে চনমনে, প্রাণবন্ত, অনেকটা ‘নির্ভার ও নির্বিকার’ ফুটবল।

ফ্লিক এমনকি সেসব খেলোয়াড়দেরও পাশে থাকেন যারা নিয়মিত একাদশে থাকেন না। কারণ, তিনি জানেন ইনজুরি তো আসবেই, তখন তাদেরই দরকার হবে। এখনও পর্যন্ত ফ্লিক দল গঠনের জন্য বেশি কিছু চাননি। গ্রীষ্মে কেবল দানি ওলমো ও পাও ভিক্টরের জন্য টাকা খরচ করেছেন, জানুয়ারিতে কোনো খেলোয়াড়ই আনেননি।

৬০ বছর বয়সী এই জার্মান কোচ বিশ্বাস করেন, খেলোয়াড়রাই নিজেদের শরীর সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো বোঝেন। তাই ইয়ামাল বা রাফিনিয়াকে বিশ্রামে পাঠানোর আগে তার মতামতই আগে শোনেন। মিডিয়ার চাপেও পড়েন না ফ্লিক। চার ম্যাচে হার, ২১ পয়েন্টের মধ্যে মাত্র ৫ পয়েন্ট, এই বাজে পারফরম্যান্সের সময়ও খেলোয়াড়দের সামনে খোলাখুলি কথা বলেছেন।

ইয়ামালের যত্নে বিশেষ নজর
ফ্লিক প্রতিটি সিদ্ধান্তই নিচ্ছেন ভেবেচিন্তে। ডি ইয়ং ও ওলমোকে নিয়ে শুরু করা তার সেরা একাদশটা তৈরি হয়েছিল জানুয়ারিতে বেনফিকার বিপক্ষে উত্তেজনাপূর্ণ ৫-৪ গোলের ম্যাচে। সেখানেই তিনি বুঝেছিলেন, রাফিনিয়া কতটা বড় লিডার হতে পারেন যদি নিয়মিত খেলার সুযোগ পান।
ফ্লিক জানতেন, রক্ষণে একজন নেতার দরকার তার। আর ইনিগো মার্তিনেজে তিনি খুঁজে পান সেই মানুষটিকে। ৩৩ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডার আগের কোনো ক্লাবে এত ওপরে উঠে রক্ষণ সামলাননি। ফ্লিক জানতেন, এই পদ্ধতি মার্তিনেজের জন্য নতুন হবে। তবুও, মার্তিনেজ দায়িত্ব নিয়েছেন। তার অধীনে রক্ষণভাগে সবাইকে নিজের সেরাটা দিতে বাধ্য করেছেন।

আর লামিন ইয়ামাল? তার সঙ্গে কাজ করছেন সবচেয়ে বেশি যত্ন নিয়ে। এই কিশোর সব ম্যাচ খেলতে চায়, সব পাস তার কাছে যেতে চায়, প্রতিটি ম্যাচের সেরা হতে চায়, কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে চায় সব সময়। ফ্লিক মাঝেমধ্যে তাকে মনে করিয়ে দেন, কোচ তিনিই। আর বলের বাইরে দায়িত্ব না নিলে বেঞ্চেই বসে থাকতে হবে। এই কঠোরতা কাজেও দিচ্ছে। ক্লাসিকোতে রিয়ালের বিপক্ষে ইয়ামাল বল পুনরুদ্ধার করেছেন এমনকি দলের সেন্টারব্যাক কিংবা পেদ্রিকেও ছাড়িয়ে, যিনি কিনা স্পেনে বল কেড়ে নেয়ার দিক দিয়ে সবচেয়ে ভালো মিডফিল্ডার।

‘ফ্লিক পরিকল্পনা দেন, সৈন্যরা বাস্তবায়ন করে’
বার্সেলোনার সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় শক্তি এখন দলীয় ঐক্য। ইয়ামাল, রাফিনিয়া ও ডি ইয়ংয়ের নেতৃত্বে এখন সবাই একই স্বরে কথা বলে। ফ্লিক কেবল পরিকল্পনা দেন, কিন্তু মাঠে লড়ে তার সৈন্যরা।

সময়নিষ্ঠা আর পোশাকেও শৃঙ্খলা চান ফ্লিক
ফ্লিকের কিছু ‘পছন্দ-অপছন্দ’ বেশ পরিচিত। বিশেষ করে সময়ের ব্যাপারে। এই মৌসুমে তিনবার জুলস কুন্ডেকে বেঞ্চে বসতে হয়েছে দেরিতে আসায়। সুপারকোপার সেমিফাইনালে গোলরক্ষক ইনাকি পেনাও দলে ছিলেন না। কারণ, তিনি টিম মিটিংয়ে দেরিতে এসেছিলেন। আর খেলোয়াড়দের পছন্দের দামি ডিজাইনার পোশাক? এখন আর চলছে না। বাইরে যাওয়ার ম্যাচে সবাইকেই ক্লাবের নির্ধারিত পোশাক পরেই হাজির হতে হয়, এমনকি পরিচালকরাও এর ব্যতিক্রম নন।

নতুন করে বাঁচার স্বাদ পাচ্ছেন ফ্লিক
ব্যক্তিগতভাবে ফ্লিকের জীবনেও পরিবর্তন এসেছে। কাঁধের অস্ত্রোপচারের পর বহুদিন পর এখন ব্যথামুক্ত জীবন কাটাচ্ছেন। মন মেজাজ ভালো, পুরোপুরি কাজেই মনোযোগ দিতে পারছেন।

তবে তিনি জানেন, এই দল এখনো পুরোপুরি তৈরি নয়। চ্যাম্পিয়নস লিগে ১৪ ম্যাচে ২৪ গোল খাওয়া, ফাইনালে উঠতে না পারা। এই দলটার আরও অনেক দূর যেতে হবে। তারা যেই খেলাটা খেলছে, সেটাও ঝুঁকিপূর্ণ। তবে এই মৌসুমে বারবার প্রমাণ হয়েছে, পিছিয়ে পড়েও তারা ম্যাচে ফিরে আসতে জানে। পরবর্তী লক্ষ্য? আগ্রাসী ফুটবলের সঙ্গে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে আনার ক্ষমতাও যোগ করা। আর এই পুরো যাত্রার নেতৃত্বে থাকবেন হ্যান্সি ফ্লিকই। এই মৌসুম শেষে তার চুক্তির আর মাত্র এক বছর বাকি থাকবে। চাইলেই নবায়ন করবেন, কিন্তু লম্বা চুক্তিতে যাওয়ার কোনো আগ্রহ তার নেই।







আরও খবর


 সর্বশেষ সংবাদ

ইরান সরকার সবচেয়ে দুর্বল, আঘাত হানার এখনই সময়: রেজা পাহলভি
জর্ডানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সতর্ক থাকার আহ্বান দূতাবাসের
লন্ডনে ‘একান্ত বৈঠকের’ আলোচনা জাতির সামনে পরিষ্কার করতে হবে : চরমোনাই পির
এবার দিনের আলোয় ইসরায়েলে হামলা শুরু ইরানের
আরো খবর ⇒


 সর্বাধিক পঠিত

দলীয় সংকটে পরীক্ষিত নেতৃত্ব-এরশাদ আলম জর্জ এখন শেরপুর-৩-এর ভরসা
সালথায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রতিপক্ষের ওপর অতর্কিত হামলা আহত- ৪
ফের করোনায় বাড়ছে ‘উদ্বেগ’, এইচএসসি পরীক্ষা যথাসময়ে
ঝিনাইগাতীতে পাহাড় ও নদী থেকে পাথর ও বালু লুটপাট চলছেই ,সৌন্দর্য হারাচ্ছে গারো পাহাড়
গাজীপুরের পুবাইল থেকে ০৬ ভুয়া পুলিশ আটক
প্রকাশক: এম এন এইচ বুলু
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মাহফুজুর রহমান রিমন  |   উপদেষ্টা সম্পাদক : রাজু আলীম  
বিএনএস সংবাদ প্রতিদিন লি. এর পক্ষে প্রকাশক এম এন এইচ বুলু কর্তৃক ৪০ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বুলু ওশেন টাওয়ার, (১০তলা), বনানী, ঢাকা ১২১৩ থেকে প্রকাশিত ও শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ফোন:০২৯৮২০০১৯-২০ ফ্যাক্স: ০২-৯৮২০০১৬ ই-মেইল: spnewsdesh@gmail.com