আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংক্রান্ত গেজেট হাতে পেলেই দলটির নিবন্ধন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘উই আর ওয়েটিং ফর দি গেজেট নোটিফিকেশন টু কাম। আকাশে সূর্য উঠলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংক্রান্ত গেজেট হাতে পেলেই নিবন্ধন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
সোমবার (১২ মে) নির্বাচন ভবনে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।
প্রজ্ঞাপন হলেই নিবন্ধন বাতিল সম্ভব কি না জানতে চাইলে এএমএম নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘গণমাধ্যমের তথ্য শুনে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। প্রজ্ঞাপন হলে আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেব। প্রজ্ঞাপনটা আসতে দেন। ডেফিনিটলি সাংবিধানিক সংস্থা। আমরাও এটা নিয়ে কনসার্ন। বাট, উই আর ওয়েটিং ফর দি গেজেট নোটিফিকেশন টু কাম।’
নাসির উদ্দিন বলেন, গণমাধ্যমে তথ্য জানলেও অফিসিয়ালি ‘এক্সেটলি’ কী আছে তা না পেলে কী হয়েছে তা বলতে পারছি না।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-১৯৭২ অনুযায়ী, কোনো দলকে নিজেদের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চাইলে নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন পেতে হয়। অন্যথায় সংশ্লিষ্ট দল অন্য দলের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করতে পারলেও নিজেদের পরিচয়ে ভোটে অংশ নিতে পারে না। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়, আর সংশ্লিষ্ট আইনে নিবন্ধন বাতিলের বিধানও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
আরপিও-এর ৯০ জ(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কী কী কারণে কোনো দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে ইসি।
(ক) দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কমিটি, সেটি যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, সেই কমিটি যদি দলকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে বা নিবন্ধন বাতিলের জন্য দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বা তাদের সমপর্যায়ের পদাধিকারী ব্যক্তি কর্তৃক দলীয় সিদ্ধান্তের কার্যবিবরণীসহ কমিশন বরাবর আবেদন করা হয়; বা
খ) নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দল সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়; বা
(গ) এই আদেশ ও বিধিমালার অধীন কমিশনে প্রেরিতব্য কোনো তথ্য [একাদিক্রমে তিন বৎসর] প্রেরণ করতে যদি কোনো দল ব্যর্থ হয়; বা
(ঘ) কোনো রাজনৈতিক দল কর্তৃক [অনুচ্ছেদ ৯০খ এর দফা (১)(খ)] এর কোনো বিধান লঙ্ঘন করা হয়; বা
(ঙ) কোনো রাজনৈতিক দল পরপর দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে; তাহলে সংশ্লিষ্ট দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে ইসি।
অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক্ষেত্রে আরপিও-এর ৯০জ অনুচ্ছেদের (১)(খ) দফা অনুযায়ী, সরকারের নিষেধাজ্ঞা আলোকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধি করতে পারে ইসি।
অন্যদিকে এই অনুচ্ছেদের (ঘ) দফা অনুযায়ীও [যা ৯০খ অনুচ্ছেদের (১)(খ) দফাতে বর্ণিত] দলটির নিবন্ধন বাতিল করা যাবে। কেননা, ওই দফায় (১)(ক) দফাও প্রতিপালন করতে বলা হয়েছে। আর ৯০খ অনুচ্ছেদের ১ এর (ক) এর (ই) দফায় বলা হয়েছে, নিবন্ধনের জন্য সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ অন্যান্য কার্যালয় থাকতে হবে।
এ ছাড়াও কমিশন থেকে চাহিদা মোতাবিক কোনো তথ্য পরপর তিন বছর কোনো দল না দিতে পারলে; ২০৩০ সালের মধ্যে দলের সব স্তরের ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য পদ পূরণ করতে না পারলে; শিক্ষক, ছাত্র, আর্থিক, বাণিজ্যিক বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বা সংস্থার কর্মচারী বা শ্রমিকদের বা অন্য কোনো পেশার সদস্যদের সমন্বয়ে সহযোগী বা অঙ্গ সংগঠন করলে প্রভৃতি কারণে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধন বাতিল করতে পারে ইসি।
সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষণার জন্য কোনো শুনানির প্রয়োজন নেই। তবে অন্য কোনো কারণে নিবন্ধন বাতিল করতে হলে সংশ্লিষ্ট দলকে শুনানির সুযোগ দেওয়ার বিধান রয়েছে আইনে। এ ছাড়া নিবন্ধন বাতিল হলে সংশ্লিষ্ট নামে অন্য কোনো দল আর পরবর্তী নিবন্ধন পাবে না এবং নিবন্ধন বাতিলের গেজেট প্রকাশ হলে ইসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যাবে। ছাত্র-জনতা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রবল আন্দোলনের ফলে গত শনিবার (১০ মে) রাতেই বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ওইদিন রাতে আইন উপদেষ্টা বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে (সোমবার) জারি করা হবে। সভায় তিনটি সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে।