দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে কোরিয়া মুসলিম কমিউনিটির উদ্যোগে ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতির পর আবার নতুন করে ইসরাইলি আগ্রাসন ও নিরীহ ফিলিস্তিনি নারী এবং শিশুদের উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে রবিবার স্থানীয় সময় দুপুর ১১ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত ইসরাইলি দূতাবাসের সামনে রাস্তা অবরোধ করে মানববন্ধন ও বিক্ষোপ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় ।
উক্ত প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশে কোরিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক হাজারো বাংলাদেশিদের উপস্থিতিতে Free Free Palestine এবং Terrorist Israel সহ বিভিন্ন স্লোগানে তিন ঘন্টার বেশি সময় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ চালিয়ে যায় । উক্ত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে কোরিয়াতে অবস্থানরত বাংলাদেশী সিটিজেন, ব্যবসায়ী, শ্রমিক,আলেম,রাজনীতিবিদ,এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের দায়িত্বশীল সহ দল মত নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত হন। সে সময় সংগঠনের সভাপতি ইয়াছির চৌধুরী লিখিত বক্তব্যে বলেন,
ফিলিস্তিন রক্তাক্ত গাজা জ্বলছে,আর বিশ্ব নিরব দর্শকের মতো দেখছে। ইসরাইল নিরীহ মানুষদের হত্যা করছে। বোমাগুলো ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, ও স্কুলের ওপর পড়ছে। মায়েরা তাদের শিশুর নিথর দেহ জড়িয়ে ধরে আছেন। পিতারা ধ্বংসস্তূপের নিচে তাদের পরিবারের সন্ধান করছেন। সম্পূর্ণ পরিবার এক মুহূর্তেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।
আমরা কি চুপ থাকতে পারি? আমরা কি তাদের যন্ত্রণা উপেক্ষা করতে পারি?
• যখন আমরা কোনো শিশুর নিথর দেহ দেখি, তখন তা শুধু তাদের সন্তান নয়-সে আমাদের সন্তান।
• যখন আমরা কোনো মাকে তার মৃত সন্তানের জন্য কাঁদতে দেখি, তখন সে শুধু তাদের মা নয়-সে আমাদের মা।
• যখন আমরা কোনো বৃদ্ধকে তার নাতির নিথর দেহ ধরে থাকতে দেখি, তখন সে শুধু তাদের দাদা নয়-সে আমাদের দাদা।
• যখন আমরা কোনো তরুণীকে ভয়ে দৌড়াতে দেখি, তখন সে শুধু তাদের বোন নয় সে আমাদের বোন।
আমরা তাদের কষ্টকে আমাদের নিজের কষ্ট মনে করি।
• যখন আমরা নিরাপদে ঘুমাচ্ছি, তখন গাজার মানুষ ইসরাইলি বোমার নিচে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছে।
• যখন আমরা খাবার ও পানি উপভোগ করছি, তখন ফিলিস্তিনি শিশুরা অনাহারে, তৃষ্ণায়, ও রক্তাক্ত অবস্থায়
কাতরাচ্ছে। • যখন আমরা নিরাপদে বসবাস করছি, তখন তারা বাঁচার জন্য দৌড়াচ্ছে, কিন্তু কোথাও আশ্রয় পাচ্ছে না।
আমরা কিভাবে ঘুমাব? কিভাবে খাব? কিভাবে শান্তিতে থাকব, যখন আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই-বোনেরা হত্যার শিকার হচ্ছে?
• মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে ৫০০-রও বেশি নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ২০০ শিশু!
• হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছে। অনেকে এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে। কিন্তু বিশ্ব কিছুই করছে না। বিশ্ব নীরব।
• কিন্তু আমরা চুপ থাকব না। আমরা ইসরাইলকে এই গণহত্যা চালিয়ে যেতে দেব না!
ইসরাইল বলে, এটি "আত্মরক্ষা"। কিন্তু বলুন তো:
• হাসপাতালের ওপর বোমা ফেলা কি আত্মরক্ষা?
• শিশুদের হত্যা করা কি আত্মরক্ষা?
• পুরো শহর ধ্বংস করা এবং মানুষকে অভুক্ত রাখা কি আত্মরক্ষা?
না! এটি সন্ত্রাসবাদ! এটি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। ইসরাইল নিজেকে রক্ষা করছে না বরং ফিলিস্তিনকে ধ্বংস করছে! এটি কোনো যুদ্ধ নয়, এটি গণহত্যা!
এটি দুটি সমান শক্তির লড়াই নয়। এটি একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর হাতে অসহায় মানুষের ওপর চালানো নিষ্ঠুর আক্রমণ।
কিন্তু ফিলিস্তিন কখনও মরে যাবে না!
গাজা হারিয়ে যাবে না। ফিলিস্তিনিরা নিশ্চিহ্ন হবে না।
বছরের পর বছর ইসরাইল তাদের জমি দখল করেছে, তাদের আক্রমণ করেছে, এবং তাদের কন্ঠ রোধ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এখনও ফিলিস্তিনিরা দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। তারা এখনও তাদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে।
এবং আজ, আমরা তাদের পাশে আছি।
প্রিয় ফিলিস্তিনি ভাই ও বোনেরা, আমাদের কথা শুনুন:
আপনি একা নন।
• আমরা আপনার কষ্ট অনুভব করি।
• আমরা আপনার কান্না শুনি।
• এবং আমরা আপনার জন্য লড়াই করা কখনও বন্ধ করব না।
আপনার কষ্ট আমাদের কষ্ট। আপনার সংগ্রাম আমাদের সংগ্রাম। আপনার স্বাধীনতা আমাদের লক্ষ্য।
আমরা ন্যায়বিচার চাই!
• ইসরাইলকে নিরীহ মানুষ হত্যা বন্ধ করতে হবে।
ইসরাইলকে অবৈধ দখলদারিত্ব শেষ করতে হবে।
• বিশ্বকে ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধের জন্য শাস্তি দিতে হবে!
• ফিলিস্তিন স্বাধীন হতে হবে।
ভাই ও বোনেরা, আমাদের কন্ঠ তুলতে হবে।
আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে, কথা বলতে হবে, কাজ করতে হবে! বিশ্ব হয়তো ফিলিস্তিনের কণ্ঠ রোধ করতে চায়, কিন্তু আমরা তাদের কণ্ঠস্বর হয়ে দাঁড়াব! বিশ্ব হয়তো তাদের দুর্দশাকে উপেক্ষা করতে চায়, কিন্তু আমরা কখনও ভুলব না!
একদিন, ফিলিস্তিন স্বাধীন হবে! একদিন, বোমাবাজি বন্ধ হবে, এবং শিশুরা আবার হাসবে! একদিন, ইসরাইলের নিপীড়ন
শেষ হবে, এবং ন্যায়বিচার আসবে।
এবং সেদিন আমরা বলব:
আমরা কখনও লড়াই করা বন্ধ করিনি!
ফ্রি ফ্রি ফিলিস্তিন! ফ্রি ফ্রি গাঁজা! ফ্রি ফ্রি ফিলিস্তিন!
পরিশেষে, যারা আজ এখানে এসেছেন, আমরা আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা-আপনাদের কণ্ঠস্বর, আপনাদের প্রতিবাদ, এবং আপনাদের সংগ্রাম ফিলিস্তিনিদের ন্যায়বিচারের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমাদের কণ্ঠস্বরই ইসরাইলকে দায়বদ্ধ করবে এবং এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা সকল সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো মানুষদের পুরস্কৃত করুন। তিনি যেন ফিলিস্তিনের মানুষদের রক্ষা করেন, শহীদদের জান্নাত দান করেন, এবং নিপীড়িতদের জন্য শান্তি ও সুবিচার আনেন। আমিন।