শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫ ৫ বৈশাখ ১৪৩২
 
শিরোনাম:


ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ম্যানহোলের ঢাকনা গায়েব
মোঃ আফতাব আনোয়ার
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৪ মার্চ, ২০২৫, ৫:৩৮ PM

সারাদেশে ছত্রিশ জুলাই চব্বিশ এর পর ম্যানহোলের ঢাকনা যে হারে গায়েব হলো, তাতে করে ছেলে-মেয়ে, যুবক-যুবতি ও প্রবীণগণ চলাফেরায় খুবই উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত। এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে নারী-শিশু, বৃদ্ধ সহ সব বয়সী মানুষকে। কোনো কোনো ম্যানহোলে বাঁশ দিয়ে, গাছের ঘুড়ি দিয়ে এলাকাবাসী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। দুঃখের বিষয় এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ম্যানহোলের ঢাকনা লাগাবার কোনো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন নি।
পৃথিবীর কোনোদেশে এমন শম্বুকগতিতে কাজ হওয়ার দৃষ্টান্ত আছে কি না,  আমার জানা নেই।
হঠাৎ যে হারে লোহার তৈরী  শ শ ঢাকনাগুলো প্রশাসনবিহীন দেশে এক রাতেই হাওয়া হয়ে গেলো, তা সত্যিই নজিরবিহীন। প্রতিটি ঢাকনায় খোদাই করে সিটি কর্পোরেশণের  নাম ও সাল উল্লেখ করা থাকে। যাতে করে চোরেরা চুরি করে বিক্রী করলেও সরকারী মালামাল চুরির অপরাধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়। ভাঙ্গারী দোকানেও এই চুরি করা মালামাল যাতে ক্রয় করতে না পারেন সেজন্য রাখা আছে যথেষ্ট কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা। গর্হিত এই কাজগুলো যারা করছে, তারা ছত্রিশ চব্বিশ পূর্ববর্ত্তী সময়ে মাসে দুই/একটি ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি করলেও পরবর্তী সময়ে অসংখ্য ঢাকনা চুরির প্রমাণ মেলে। বিগত সরকারের অনুপস্থিতিতে দেশে ছিলো না কোনো প্রশাসন। থানা ও ফাঁড়িতে ছিলো না কোনো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। সেই সময়ে দেশের অবস্থা ৪/৫দিনই ছিলো হযবরল অবস্থা। ছিঁচকে চোর, পেশাদার চোর, নেশাখোর ও ডাকাতদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয় পুরো বাংলাদেশ। প্রশাসনবিহীন বাংলাদেশে এমন সুযোগ অতীত জীবনে এরা কোনদিন পায়নি, যা বর্তমানে পেয়েছে। ভবিষ্যৎ জীবনেও কোনদিন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই ৫.৬.৭.৮.৯.১০ আগস্ট ২৫ তারিখগুলো এদের জীবনে শাপে-বর হিসেবে এসেছে। এদের শাসন করার কেউ নেই, এদের আনন্দে বাধা দেয়ার কেউ নেই। সম্ভবতঃ মনের আনন্দে প্রাণ খুলে উচ্চ স্বরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই বিখ্যাত গানটি" আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে" গেয়ে রাস্তার ম্যানহোল খুলে ফেলা, পরিচিত অপরিচিত বাসাবাড়িতে গিয়ে যা ইচ্ছে তাই নিয়ে এসে মৌজ ফূর্তি করাই ছিলো একমাত্র  কাজ। বেরসিক এলাকাবাসীর সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সদস্যদের মাধ্যমে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে বাঁধা পড়েছে সাময়িক সময়ের রাস্তার স্বঘোষিত রাজাগণ। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্যগণও বিগত সরকারের আদেশ নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করতে গিয়ে ভুক্তভোগীদের রোষানলে পড়ার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাছাড়া সরকারের আদেশ নির্দেশ ব্যতিরেকে অতি উৎসাহী হয়েও অনেককে অনেক কাজ করতে হয়েছে, যা তাদেরকে বর্তমান সময়ে কাজে যোগদান করতে নিরুৎসাহিত করছে বিধায় তারা গা ঢাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন। এর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। দীর্ঘ একটি সংখ্যা কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় গলদঘর্ম হতে হচ্ছে বর্তমান প্রশাসনকে। এভাবেই খুরিয়ে খুরিয়ে চলতে হচ্ছে সরকারকে। সর্বত্রই একই চিত্র বিরাজমান। আমাদের প্রত্যাশিত চিত্র আদৌ দেখার সৌভাগ্য হবে কি না জানি না, তবে এটুকু দেখার প্রত্যাশা করি অহর্নিশি।
কোনো একদিন ঘুম থেকে উঠে শুনবো পবিত্র দেহে  জায়নামাজে বসে কিছুক্ষণ অপেক্ষমান শেষে নীরব-শান্ত-কোমল-মোলায়েম-স্নিগ্ধ ও অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে ভেসে আসা মিষ্টি মধুর কন্ঠে ফজরের আজান ধ্বনি। নামাজ শেষে তাসবিহ-তেলাওয়াত পরবর্তী মুহূর্তে অনুভব করবো ফুলের সৌরভ ছড়ানো একটি স্বর্গীয় মনোরম পরিবেশ। যা লেখার মাধ্যমে পুরোপুরি প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এরপরই শুনবো মোবাইলে রিংটোন। বিরক্ত ভাব নিয়ে মোবাইল নিবো হাতে। অপর প্রান্তে শুনবো পরিচিত কন্ঠ। পাওনা বুঝে নেয়ার অনুরোধ। এভাবেই একের পর এক মোবাইল মাধ্যমে পাবো শুধু প্রাপ্তি সংবাদ। ফেসবুক খুলে দেখবো রাস্তার মোড়ে মোড়ে টোকাই দলের সদস্যেরা তাদের ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে নেয়া সহ অন্যান্য অপকর্মে যে ধরণের জন ভোগান্তি বাড়িয়েছিলো, এর জন্য ক্ষমাপ্রার্থী এবং জীবনে তারা আর এই ধরণের অপকর্মে লিপ্ত হবেন না বলে অঙ্গীকারাবদ্ধ, ফুরফুরে মেজাজে দেখবো পূব আকাশে ঝকমকে সকালে দীপ্তিময় সূর্যের আলো , যেখানেই যাবো সেখানেই দেখবো ইতিবাচক সব, রাস্তায় থাকবে না কোনো ময়লার ভাগাড়। নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীতে থাকবে না কোনো উচ্চ মূল্য, রাস্তায় থাকবে না কোনো যানজট, মিটারবিহীন যানবাহনে মিটার থাকবে সচল, ট্রাফিক ব্যবস্থা হবে আধুনিক মানের, গ্যাসের চুলায় থাকবে তেজী আগুন, বিদ্যুতে থাকবে না কোন লোডশেডিং, ওয়াসার পানি দেখবো দুর্গন্ধমুক্ত এবং ঊর্ধ্বমুখী প্রবাহ, অফিস-আদালতে শুনতে হবে না বস নেই, দিতে হবে না কোথাও উৎকোচ, ইন্টারনেট ব্যবস্থায় থাকবে দারুণ গতি, চিকিৎসা ব্যবস্থায় থাকবে না কোনো অহেতুক পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিড়ম্বনা, ডাক্তারি ফি থাকবে সবার নাগালে, রোগীদের থাকবে না  কোনো ভোগান্তি, প্রতিটি বাড়িতে থাকবে সবুজ গাছ-গাছালি, রাস্তার আইল্যান্ডে থাকবে না কোনো নির্মাণ-সামগ্রী, ভিক্ষুকমুক্ত থাকবে রাস্তা-ঘাট, ট্রেন-বাসে থাকবে না কোনো হকার, রাস্তার গায়েব হওয়া ম্যানহোলের ঢাকনাগুলো যথাস্থানে উপস্থিত থাকবে, খাল-বিল সহ  ড্রেনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে,  নদীর পানি থাকবে স্বচ্ছ, রাস্তার গাড়িগুলো সারিবদ্ধভাবে চলাচল করবে, বাজবে না কোনো গাড়ির উচ্চ শব্দে হর্ণ, উচ্চস্বরে গান-বাজনায় সৃষ্ট হবে না কোনো অহেতুক শব্দদূষণ, রাস্তা-ঘাটে মহিলাদের হবে পর্দানশীন চলাফেরা, পরিকল্পিতভাবে তৈরী হবে দালান-কোঠা, হবে না কোনো পলিথিন ব্যবহার, দাবি-দাওয়া আদায়ে হবে না কোনো মিছিল-মিটিং,  তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ইত্যাদির ব্যবহারে হবে না কোনো পরিবেশ দূষণ, পরিষ্কার কাঁচের মতো স্বচ্ছ হবে নদীর পানি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সকল কাজ সম্পন্ন হবে। স্বপ্নে লালিত এই ধরণের কল্পনা গুলো বাস্তবে পরিণত হোক, স্বর্গীয় আবহে  জীবনের পরবর্তী দিনগুলো অতিবাহিত করার মানসে হোক দুশ্চিন্তামুক্ত-  অহর্নিশি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা'র দরবারে এ প্রত্যাশাই করি।

লেখক:  আর্টিস্ট/সহকারী পরিচালক (অবসরপ্রাপ্ত), বিআরডিবি, ঢাকা। 

ইমেইল: anwaraftab611@gmail.com







আরও খবর


 সর্বশেষ সংবাদ

জার্মান বাংলা অ্যাসোসিয়েশনের উদ‍্যোগে বৈশাখ বরণ এবং আলোচনা
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ছাদ বেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে নকল সরবরাহ, যুবকের ৬ মাসের কারাদণ্ড
কুমিল্লা স্টেশন ক্লাবে চলছে সাত দিনব্যাপী বিসিক বৈশাখী মেলা
নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মাসুদুর রহমানের মাদ্রিদ দূতাবাসে প্রথম কর্ম দিবসে প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময়
বার্সেলোনার পাঁচ তারকা হোটেলে বৈশাখী অনুষ্ঠান উজ্জাপিত
আরো খবর ⇒


 সর্বাধিক পঠিত

বজ্রপাতে কালীগঞ্জে কৃষকের মৃত্যু
মানবতার অধিকার আদায়ে সুফি ওলামাদের ভূমিকা পালনের আহবান
শেরপুরে হত্যা মামলার আসামী হলেই লুটপাট হয় বাড়ি ঘর
হাকালুকি হাওরে ধান তোলায় ব্যস্ত কৃষক-কৃষাণী
বাচসাসকে জাতীয়তাবাদী ব্যবসায়ী দলের শুভেচ্ছা
প্রকাশক: এম এন এইচ বুলু
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মাহফুজুর রহমান রিমন  |   উপদেষ্টা সম্পাদক : রাজু আলীম  
বিএনএস সংবাদ প্রতিদিন লি. এর পক্ষে প্রকাশক এম এন এইচ বুলু কর্তৃক ৪০ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বুলু ওশেন টাওয়ার, (১০তলা), বনানী, ঢাকা ১২১৩ থেকে প্রকাশিত ও শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ফোন:০২৯৮২০০১৯-২০ ফ্যাক্স: ০২-৯৮২০০১৬ ই-মেইল: spnewsdesh@gmail.com