শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫ ৫ বৈশাখ ১৪৩২
 
শিরোনাম:


এবারের ঠান্ডা ছিলো কচুপাতার পানির মতো
মো: আফতাব আনোয়ার
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৪:২২ PM

ঠান্ডা গায়ে অনুভূত হওয়ার আগেই শীত হাওয়া। এবারের শীত যেনো কচুপাতার পানি। গায়ে অনুভূত হওয়ার আগেই কেমন যেনো পালিয়ে গেলো। শীত মানেই হলো প্রচুর ঠান্ডা। শীত মানেই গরম কাপড়, লেপ, কম্বল, মোটা কাঁথা, বন্ধ জানালা-দরজা, ঘন কুয়াশায় ঢাকা চারিদিক, দিন-দুপুরে গাড়িতে হেড লাইট জ্বলা, পিঠা-পায়েস, খেজুরের রস, বনভোজন, অতিথি পাখির আগমন ইত্যাদি।
"পৌষের শীত মহিষের গায়ে, মাঘের শীত বাঘের গায়ে" এই প্রবাদ বাক্যটি শুনে শুনেই বড় হয়েছি।

কিন্তু বাস্তবে এবারের পৌষ মাস মহিষকে এবং মাঘ মাস বাঘকে তো কাঁপালোই না, এমন কি আমরাও টের পেলাম না শীতের আমেজ। শীত আসবে আসবে করেও আর এলোনা। গায়ে দিতে হলো না নতুন কেনা গরম কাপড়টিও। কটি পড়ে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটালাম। এবারের শীতের তেজটি এতোই নিস্তেজ ছিলো যে মসজিদে নামাজ আদায় করতে গিয়েও ফ্যানবিহীন স্থানে দাঁড়াতে পারিনি, গরম অনুভব করেছি। আবহাওয়া অফিস থেকে খুব জোরালোভাবেই জানান দিয়েছিলো জানুয়ারি/২৫ মাসে হালকা বৃষ্টি সহ দু'তিনটি শৈত্য প্রবাহ হবে। যা শুনে গরম কাপড় সবগুলো বের করে অপেক্ষায় রইলাম শৈত্য প্রবাহের। শীতের সবচেয়ে হালকা শীতের কাপড়ের নাম কটি ও কার্ডিগান। এটা পড়েই বাজার, নামাজ ও বৈষয়িক প্রয়োজনে বাহিরে যাওয়া-আসা করলাম। নামাজে গিয়ে প্রতিদিনই পাখার নীচে দাঁড়াতে হয়েছে। কেনো এমন হলো? সঠিক হলো না কেন আবহাওয়া অফিসের তথ্য? বহু প্রশ্ন! এর সঠিক জবাব হয়তো প্রকৃতির কাছ থেকেই জানতে হবে। বেরসিক প্রকৃতি এবার আমাদের আনন্দ-উল্লাসকে কেটে-ছেটে অনেকটাই সংক্ষেপ করেছে। যা আমাদের নিকট মোটেই প্রত্যাশিত ছিলো না।
প্রতিবছরই পৌষ মাসের শেষে, দেশের শীতার্ত মানুষ গুটিসুটি হয়ে পড়তো। শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে গায়ে জড়িয়ে নিতো গরম কাপড়। তবে এবার পরিস্থিতি উল্টো। এবার ঠাণ্ডাকে মোকাবিলা করতে মোটেই প্রয়োজন হয়নি বাড়তি প্রস্তুতির। এতে দেশের গরম কাপড়ের জমজমাট ব্যবসাতেও মন্দাভাব উল্লেখযোগ্যহারে দেখা গিয়েছে। ফলে আবহাওয়ার কারণেই জমেনি গরম কাপড়ের বাজার।
মাঘ মাস গিয়ে ফাগুন আসলো। শীততো অদৃশ্যই রয়ে গেলো।

দেশে পৌষ ও মাঘ মাসে উত্তরাঞ্চলে ঘন কুয়াশা ও শীতের আমেজ থাকলেও মধ্যাঞ্চলে বা রাজধানী ঢাকায়  গরম কাপড় ব্যবহারের পুরোপুরি প্রয়োজন হয় নি।

গরম কাপড়ের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতের মৌসুম ধরা হয়। ফলে এ সময়ের এক মাস আগে থেকেই গরম কাপড়ের বাজার জমে ওঠে। তবে সেই হিসেবে এবার শীত মৌসুম চলে গেলেও গরম কাপড়ের বাজারে  লাগেনি হাওয়া। ব্যবসায়ীদের কপালে ছিলো চিন্তার ভাঁজ। প্রত্যাশিত শীত না পড়ায় জমেনি এবারের গরম কাপড়ের বাজার। তাই গরম কাপড় ও কম্বলের মৌসুমি ব্যবসা থেকে পুঁজি ওঠাতে ব্যর্থ হয়েছেন আমদানিকারকরা। আর পাইকারিসহ খুচরা মার্কেটের ব্যবসায়ী ও হকারদের  মাথায় পড়েছে হাত।
এবার গরম কাপড় ব্যবসায়ীদের একজন মাঘ মাসের মাঝামাঝি সময়ে আক্ষেপ করে বলেছেন, শীতের যে অবস্থা তাতে কোনরূপ রিস্ক না নিয়ে  ‘দেড় হাজার টাকায় আমদানি করা কম্বল পাইকারি বিক্রি করেছি এক হাজার তিনশত থেকে তিনশত পঞ্চাশ টাকায়। উপায় নেই। এখন যদি কম দামে বিক্রি না করি  তাহলে সারা বছরই গোডাউনে কম্বলগুলো পড়ে থেকে এর মূল্যমান আরও কমে আসবে এবং মূলধনও আটকে থাকবে। এতে গুনতে হবে অকল্পনীয় লোকসান।  অভিজ্ঞতার আলোকে এই ব্যবসায়ীর আরও মন্তব্য "শীতের স্বল্পতার কারণে এবারের যে খারাপ বাজার তা এক যুগেও আমাদের দেখতে হয় নি।" ভবিষ্যতে এ ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার মতো পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূলে থাকবে কি না, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনই ভালো জানেন।

ফাগুন এসে গেলো! দৈনিক পত্রিকা ও সোস্যাল মিডিয়ায় অফুরন্ত শিরোনাম হলো "ফুল ফুটুক আর না ফুটুক, আজ (১৪/০২/২৫) বসন্ত।"

কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কথায় "ফুল ফুটুক না ফুটুক, আজ বসন্ত।" ঢাকা সহ অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরের পিচ ঢালা পথ হয়ে গেলো হলুদ বর্ণের। হলুদ ফুল ও বাহারি  হলুদ পোষাকে দেশের সকল বিভাগীয় ও জেলা শহরে শিশু, নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতী, প্রেমিক-প্রেমিকার  উপস্থিতিতে সৃষ্টি হয় অপরূপ সৌন্দর্যের  এক অনুপম নগরীতে। যা দেখে আমরা আনন্দে হই পুলকিত। সচরাচর এমন আনন্দময়  দৃশ্যগুলো  আমরা জাতীয় দিবসগুলিতে হরহামেশাই দেখে থাকি।  আমরা হই বিমোহিত।

গাছের পাতার ভিতরে  লুকিয়ে থাকা ফাগুনের উষ্ণ হাওয়ায় বসন্তের দূত কোকিলের কুহু কুহু ডাকে বিরহ বেদনাকে আরো মধুর করে তোলে। সৃষ্টিশীল মানুষের কলমে, তুলিতে ও অভিনয়ে সৃষ্টি হয় মন জাগানিয়া পঙক্তি ও ছবি। যা দু'টি হৃদয়কে রঙিন করার জন্য হয়ে উঠে যথেষ্ট সহায়ক। 
ফাগুনের ঝিরি ঝিরি হাওয়া ও বসন্ত বাতাসে রঙিন ফুলের সুবাসে  মন যখন করে আনচান তখন আমরা এই চমৎকার  আবহে  শীতের বিভিন্ন কাপড়কে আবার বাক্স-পেটরায় তুলে রাখার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কিন্তু এবারের শীতের তিব্রতা কম থাকায় শীত কাপড়ের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যহারে কম হয়েছে বিধায় বেশীর ভাগ শীত বস্ত্র ও কম্বল-লেপ বাক্স-পেটরা থেকে মুক্তই হতে পারে নি। তাই হালকা যে সকল শীত বস্ত্রগুলো বের করা হয়েছিলো, তা ধৌত করে পুনঃ বাক্স পেটরায় বন্দী করার প্রক্রিয়া চলছে ঘরে ঘরে।
পরিশেষে বলবো আগামী শীত আসুক আমাদের মাঝে আনন্দ নিয়ে। শীতের পাখির কিচির-মিচিরে যেনো বনভোজন হয় আনন্দের। গায়ে জড়াতে পারি যেনো রং-বেরঙের শীত পোষাক। মাঘের শেষেও যেনো আনন্দচিত্তে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারে। তাদের মুখে চওড়া হাসি দেখার প্রত্যাশায় রইলাম। 
লবনবিহীন তরকারী যেমন শীতবিহীন মৌসুমও তেমন। বছরের সব মৌসুমকেই আমরা সমানভাবে পেতে চাই। তাই আমাদের সকলেরই প্রচেষ্টা থাকা উচিত, কোনক্রমেই প্রকৃতি যেনো বিরূপ না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি  রাখা।

লেখক:  মো: আফতাব আনোয়ার, আর্টিস্ট/সহকারী পরিচালক(অবসরপ্রাপ্ত), বিআরডিবি, ঢাকা।







আরও খবর


 সর্বশেষ সংবাদ

জার্মান বাংলা অ্যাসোসিয়েশনের উদ‍্যোগে বৈশাখ বরণ এবং আলোচনা
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ছাদ বেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে নকল সরবরাহ, যুবকের ৬ মাসের কারাদণ্ড
কুমিল্লা স্টেশন ক্লাবে চলছে সাত দিনব্যাপী বিসিক বৈশাখী মেলা
নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মাসুদুর রহমানের মাদ্রিদ দূতাবাসে প্রথম কর্ম দিবসে প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময়
বার্সেলোনার পাঁচ তারকা হোটেলে বৈশাখী অনুষ্ঠান উজ্জাপিত
আরো খবর ⇒


 সর্বাধিক পঠিত

বজ্রপাতে কালীগঞ্জে কৃষকের মৃত্যু
মানবতার অধিকার আদায়ে সুফি ওলামাদের ভূমিকা পালনের আহবান
শেরপুরে হত্যা মামলার আসামী হলেই লুটপাট হয় বাড়ি ঘর
হাকালুকি হাওরে ধান তোলায় ব্যস্ত কৃষক-কৃষাণী
বাচসাসকে জাতীয়তাবাদী ব্যবসায়ী দলের শুভেচ্ছা
প্রকাশক: এম এন এইচ বুলু
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মাহফুজুর রহমান রিমন  |   উপদেষ্টা সম্পাদক : রাজু আলীম  
বিএনএস সংবাদ প্রতিদিন লি. এর পক্ষে প্রকাশক এম এন এইচ বুলু কর্তৃক ৪০ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বুলু ওশেন টাওয়ার, (১০তলা), বনানী, ঢাকা ১২১৩ থেকে প্রকাশিত ও শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ফোন:০২৯৮২০০১৯-২০ ফ্যাক্স: ০২-৯৮২০০১৬ ই-মেইল: spnewsdesh@gmail.com