প্রকাশ: রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৭:৩৪ PM
গত ৫আগষ্টের পর গা ঢাকা দিয়েছে ফরিদপুরের সালথা উপজেলা আওয়ামীলীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। বিশেষ করে ক্ষমতা পেয়ে যারা বিভিন্ন অপকর্ম করেছে তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সম্প্রতি উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি মোঃ সেলিম মোল্লা নিজে আত্মগোপনে থেকেও সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই কারনে উপজেলা ব্যাপী বড় ধরণের সংঘাতের আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।
জানা যায়, এক সময়ে জাসাস এর নেতা সেলিম মোল্যা আসাফো এর নেতা হিসেবে সালথায় নিজেকে আত্মপ্রকাশ করেন। আসাফোর নেতা হিসেবে কুট-কৌশলে বাগিয়ে নেন বাঙালী সময় পত্রিকা। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি, কার্ড বানিজ্য সহ ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের দালালী শুরু করেন সেলিম মোল্যা। দাললী করে সাবেক সংসদ সদস্য শাহাদাব আকবর লাবু চৌধুরীর আশির্বাদ পুষ্ট হয়ে যান উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি। সংসদ সদস্যকে ম্যানেজ করে প্রায় ১০ লাখ টাকা টিআর ও কাবিখা টাকা পান। তবে অভিযোগ রয়েছে কোন কাজ না করে এবং কৃষকলীগের কাউকে ভাগ না দিয়ে নিজে সব টাকা আত্মসাৎ করেন। আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করতো না এই সেলিম মোল্লা। তবে সেলিম মোল্লার বাড়া ভাতে ছাই পড়ে যায় ৫ আগষ্টের পর। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে সেলিম মোল্লা গা ঢাকা দেন। নিজের ফেসবুক প্রোফাইলের নাম পরিবর্তন করেন এবং ফেসবুক থেকে কৃষকলীগ ও সংগঠনের সকল ছবি সরিয়ে নেন, চেহারা আড়াল করতে দাড়ি রাখা শুরু করেন, সুযোগ সুবিধামত আবার তা কাটছাট করে নেন এবং পাঞ্জাবিতে নিজেকে ঢেকে রাখেন। সালথা প্রেসক্লবের সভাপতি হওয়ায় এড়িয়ে যান আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর। এই সুযোগে সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগ কে সংগঠিত করার কাজ শুরু করছেন গোপনে। তিনি বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের প্রথম সারির নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করছেন এবং সংগঠিত করছে। সম্প্রতি তার ইশারায় উপজেলার কাগদি বাজারে লিফলেট বিতরণ করে কিছু নেতাকর্মী। তবে এই মুহুর্তে আওয়ামী লীগ সংগঠিত হলে উপজেলা ব্যাপী বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সদস্য ও সালথা প্রেসক্লাবের সিনিয়র সদস্য মিয়া মোঃ লিয়াকত হোসেন বলেন, গত প্রেসক্লাবের নির্বাচনে আমি সেলিম মোল্লাকে ভোট না দেওয়ার কারনে আমাকে ক্লাব থেকে বহিষ্কার করার হুমকি দেয়, তাছাড়া কথায় কথায় আমাকে জামাত শিবির বলে বিভিন্ন মামলা হামলার হুমকি দিত, এখন সেলিম মোল্যা পলাতক, তবে মহান আল্লাহ পাকের রহমতে আমরা আছি। সালথা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার সালথা উপজেলা প্রতিনিধি চৌধুরী মাহমুদ আশরাফ (টুটু) বলেন, সেলিম তো উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি, সেলিম একটা ধন্দাবাজ। গত প্রেসক্লাবের নির্বাচনে লাবু চৌধুরীর প্রভাব খাটিয়ে অধিকাংশ সাংবাদিকদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে কমিটি করেছে। উপজেলার সকল বিজ্ঞাপন তার কথামতই হতো। মতের বিরুদ্ধে গেলে সে বেপরোয়া হয়ে উঠে। শুধুমাত্র সাংবাদিক হওয়ার কারণেই সেলিম সকল অপরাধ থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখে। সাম্প্রতিককালে প্রেসক্লাবের একটি কমিটি গঠন নিয়ে সে আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী এমদাদ আলী (খসরু) বলেন, সেলিম মোল্লা খুব দুর্ধর্ষ লোক, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকতে সে আমাদের অনেক নেতাকর্মী কে বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। সম্প্রতি সে আওয়ামীলীগ সংগঠিত করে উপজেলা বড় ধরনের সহিংসতা করবে বলে খবর পাচ্ছি। রামকান্তপুর ইউনিয়নে যত সংঘর্ষ হয়েছে সব ঘটনার পেছনে কলকাঠি নেড়েছে সেলিম মোল্লা। আমরা উপজেলা বিএনপি সজাগ রয়েছি, কেউ বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করলে কোন ছাড় হবে না। এই বিষয়ে জানতে উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি সেলিম মোল্যার মুঠোফোনে বারবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই। তার গ্রামের বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায় নাই।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল নগরকান্দা) আসাদুজ্জামান শাকিল বলেন, এমন কিছু আমার জানা নাই। আপনারা সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে আমাদের জানাবেন, বিশৃঙ্খলার সঠিক তথ্য পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।