প্রকাশ: শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৮:৫৫ PM
স্বামী বিদেশ খেটে যা টাকা পাঠাতো তাই দিয়ে দুই মেয়ের লেখাপড়া আর সংসার চালিয়ে কিছু উদ্বৃত্ত টাকা জমিয়ে সাড়ে ৬ শতক জমি কিনে বসবাস করার জন্য একটি পাকা বাড়ি নির্মান করেন মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার তেতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের করমদি মাঠ পাড়া গ্রামের প্রবাসী মৃত ইয়াকুব আলীর স্ত্রী তুনজিরা খাতুন। সে বাড়িতেই শশুর শাশুড়ি দুই মেয়ে ও দেবরকে নিয়ে সুখ দু:খ ভাগ করে জীবনযাপন করতেন । ভুক্তভোগী তুনজিরার স্বামী মৃত ইয়াকুব দীর্ঘ ১৩ বছর সৌদিআরবে যা আয় রোজগার করেন তা দিয়েই সংসার চালিয়েছেন আর বসবাসের জন্য একটি এক তলা ঢালাই ছাদের বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন। দীর্ঘদিন বিদেশ খেটে ২০২০ সালে বাড়ি ফিরে আসেন ইয়াকুব আলী। বাড়ি ফেরার ছয় মাস পর কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ইয়াকুব আলী।
ইয়াকুব আলীর মৃত্যুর পর তুনজিরা খাতুন দুই মেয়ে ও শশুর শাশুড়িকে বুকে আগলে রাখেন। কয়েক বছর যেতে না যেতে তুনজিরা তার দুই মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি বেড়াতে যায়। কয়েকদিন পর বাড়ি ফিরে আসলে তুনজিরাকে ঘরে উঠতে দেয়নি তুনজিরার শশুর শিরাজুল ইসলাম ও দেবর ইয়ানুর হোসেন। সংবাদ সম্মেলন করে শশুর ও দেবরের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেছেন তুনজিরা। সংবাদ সম্মেলনে তুনজিরা খাতুন জানান, স্থানীয় নমর আলীর ওয়ারিশ তাহাজুল ইসলাম,সাহাজুল ইসলাম ও জমিরুল ইসলামের কাছ থেকে ২০৫৬ খতিয়ানের ১১৫৪৬ দাগে,করমদি মৌজায় সাড়ে ৬ শতক জমি ক্রয় করেন তুনজিরা খাতুন। জমিটি ২০২০ সালে তুনজিরার নামে রেজিস্ট্রি করা হয়। স্বামীর টাকাতেই উক্ত জমিতে একটি একতলা পাকা ঘর নির্মান করেন। ওই ঘরেই দুই মেয়ে নাজমা ও আসমাকে নিয়ে শশুর শিরাজুল ইসলাম,শাশুড়ি তহুরা খাতুন ও ছোট দেবর ইয়ানুর কে নিয়ে বসবাস করতে থাকেন। মেয়ে নাজমা ও আসমার বিয়ে দেন তুনজিরা খাতুন। মেয়ে দুজন বর্তমানে স্বামীর সংসার করছেন। এসুযোগে তুনজিরাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন শশুর শিরাজুল ও দেবর ইয়ানুর হোসেন। তুনজিরা বলেন, আমার সংসারে খুবই অভাব ছিল। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে এবং আমার সংসারে সচ্ছলতা আনতে আমার ভাই নিজ টাকা খরচ করে আমার স্বামী ইয়াকুবকে বিদেশ নিয়ে যায়।
আমার ছেলে নেই,দুটোই মেয়ে। আমার মেয়েরা যাতে জমির অংশ না পায় সে জন্য আমার শশুর ও দেবর আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আমার নামে দলিলপত্র সব থাকলেও শশুর শাশুড়ি ও দেবর জোর করে দখল করে আছে। বাধ্য হয়ে নিজের জমি,নিজের ঘর ছেড়ে বাপের বাড়িতে বসবাস করছি। একাধিকবার স্থানীয়দের নিয়ে শালিশ বসেও এর সমাধান হয়নি। আমার শুশুর দেবর আমার জমি ছাড়ছে না। অবশেষে আমি আমার জমি ও বাড়ির দখল পেতে আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। নিশ্চয় আদালত আমাকে ন্যয্য বিচার পাইয়ে দেবেন। তিনি আরও বলেন,
আমার জমি ও আমার বাড়ি এখন শশুর শাশুড়ি ও দেবরের দখলে। তুনজিরা তার নিজ নামীয় সম্পত্তিতে আর দখল পাচ্ছেন না। এবিষে মেহেরপুর আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন তুনজিরা। যার মামলা নম্বর ৪১৭/২৪। স্থানীয় মসিরুল ইসলাম জানান, ইয়াকুবকে তার স্ত্রীর ভাই টাকা খরচ করে বিদেশে নিয়ে গিয়েছিল। তার টাকাতেই তুনজিরা জমি কিনে বাড়ি করে শশুর শাশুড়িকে থাকতে দিয়েছিল। এখন আর জার জমি তাকেই পাত্তা দিচ্ছেনা। প্রতিবেশি আব্দুল লতিব বলেন, তুনজিরার টাকায় কেনা জমি, তার টাকায় নির্মান করা ঘরে এখন তাকেই থাকতে দিচ্ছে না।
প্রতিবেশি গোলাম হোসেন জানান,বহুদিন যাবত আমরা জেনে আসছি জমি ও বাড়ি মৃত ইয়াকুব আলীর স্ত্রী তুনজিরা খাতুনের। তার শশুর কারও কথা শোনে না এবং গ্রাম্য শালিশের কথাও মানেনা। এবিষয়ে শিরাজুল ইসলাম বলেন, তুনজিরার স্বামী ইয়াকুব আমার মেজো ছেলে। সে বিদেশে গিয়ে বাড়ি বানিয়েছে। আমি সেই বাড়িতে বসবাস করছি। ছেলে মারা গেছে। তুনজিরাকে জমি দখল দেবনা। তার দুই মেয়ে সে জমি কি করবে?
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বানী ইসরাইল জানান, বিষয়টি এখন আদালত দেখবেন। স্থানীয়ভাবে যেনো কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে আমরা সজাগ রয়েছি।