প্রকাশ: রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৬:৩৯ PM
দুর্নীতির আলোচিত মামলা দিন দিন বাড়লেও নিষ্পত্তির হার খুবই কম। দুদক সূত্র জানায়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে প্রায় সাড়ে ৫শ ও হাইকোর্ট বিভাগে প্রায় ৪ হাজারের মতো মামলা বিচারাধীন। এগুলোর মধ্যে রিট, ক্রিমিনাল মিস, ক্রিমিনাল আপিল ও ক্রিমিনাল রিভিশন রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারও সম্পদের হিসাব চাইলে তিনি হাইকোর্টে দুদকের নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন। সেটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দুদক তাঁর বিষয়ে কার্যক্রম শুরুই করতে পারে না। এমন অসংখ্য মামলা হাইকোর্টে বিচারাধীন। তা ছাড়া বিচারিক আদালতে দুর্নীতি মামলায় সাজা হলে উচ্চ আদালতে আপিল শুনানির জন্য পেপারবুক তৈরি করতে হয়। রাষ্ট্রের পক্ষে দ্রুত এটি করা সম্ভব নয়। তবে আদালতের অনুমতি নিয়ে আসামি নিজ খরচে পেপারবুক তৈরি করতে পারেন। এ প্রক্রিয়াতেই আসামি সময়ক্ষেপণ করেন। আবার পেপারবুক তৈরির আগেই হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলে তিনি এটি তৈরির ক্ষেত্রে গড়িমসি করেন। ফলে আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্টে মামলা প্রস্তুত করতেই কেটে যায় পাঁচ-সাত বছর। অপরাধীদের সময়ক্ষেপণ প্রশ্নে দুর্নীতির মহোৎসব থামাতে সবার আগে রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি। পাশাপাশি বিশেষায়িত বেঞ্চ, পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ, সুপ্রিম কোর্টে বিচারক ও দুদকের নিজস্ব আইনজীবী বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, বর্তমানে উচ্চ আদালতে ঝুলে রয়েছে চার হাজারের বেশি দুর্নীতি মামলার বিচার। সারাদেশে বিচারাধীন মামলা প্রায় তিন হাজার। এসব মামলার আসামি রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সরকারের সাবেক-বর্তমান উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্য। অবৈধ সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য ফাঁকি, উৎকোচ গ্রহণ, অর্থ আÍসাৎ ও পাচার, সরকারি ক্রয়ে দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগে মামলা করেছে দুদক।
দুর্নীতি পুরনো আমলেও ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা হলে দুর্নীতি আমরা অনেকটাই কমিয়ে নিয়ে আসতে পারবো। দুদকের গণশুনানী অনুষ্ঠানে কুমিল্লায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন এসব কথা বলেন। সত্যিকারভাবে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে দুর্নীতি দমন কমিশনকে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। আর এর জন্য দুদককে দৃশ্যমান কিছু করতে হবে। ‘চুনোপুঁটিদের না ধরে রাঘব-বোয়ালদের’ আইনের আওতায় আনতে হবে- বিশিষ্টজনদের এমন দাবী প্রায় দেড় যুগেরও বেশি সময়ের। দুদকের এনফোর্স মেন্ট অভিযান বৃদ্ধি জনসচেতনতা, বিভিন্ন জেলায় জেলায় গণশুনানি, প্রান্তিক পর্যায়ে অভিযান পরিচালনা আগের তুলনায় বৃদ্ধি সহ তৎপরতা বাড়ায় সকল মহলের আস্থা অর্জন হচ্ছে আগের তুলনায় ভালো। দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারি অফিসে অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, পাসপোর্ট অফিস, হাসপাতাল, পোস্ট অফিসসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সরকারি অফিসে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুবিভাগে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল। এনআইডি সংক্রান্ত সেবা পেতে ভোগান্তি ও দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই অভিযান চালানো হয়।এ সময় কমিশনের বাইরে থেকে এনআইডি সেবা দেওেয়ার বিনিময়ে অর্থ নেওয়ার অভিযোগে দুজনকে আটক করে দুদকের টিম।
আটক ব্যক্তিরা অনুবিভাগের একটি প্রকল্পের কর্মচারী বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য তিন লাখ ৭৮ হাজার আবেদন জমা পড়ে আছে। এর ফলে সৃষ্ট দীর্ঘসূত্রতাই দুর্নীতির কারণ বলে মনে করি।আবেদনগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পারলে এ ধরনের দুর্নীতির সুযোগ কমে আসবে বলে দাবী করেন তিনি। দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম জানান, নানাবিধ অনিয়মের অভিযোগে গোপালগঞ্জ জেলা সদরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালেও অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের শুরুতে গোপনে রোগী সেজে হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়মের ভিডিও ধারণসহ তথ্য সংগ্রহ করা হয়। অতঃপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, সেবাগ্রহীতা ও গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে আউটডোর টিকিট কাউন্টারে তাৎক্ষনিক অভিযান পরিচালনা করে টিকিট বাবদ অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়াও পরিদর্শনকালে টিমের কাছে ওই হাসপাতালে টিকিট কাউন্টারে অতিরিক্ত ফি আদায়, বিনা অনুমতিতে ডাক্তারদের কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, দীর্ঘ ৮-১০ বছর ধরে এমআরই, সিটি স্ক্যান মেশিন অচল থাকায় জনদুর্ভোগ, স্টোর রেজিস্ট্রার হালনাগাদ না রাখার সুযোগে বিভিন্ন অনিয়ম, পুলিশ কেস সংক্রান্ত মেডিক্যাল সনদ নিয়ে বাণিজ্য, স্টোরে রক্ষিত কম্বল রোগীদের বিতরণ না করা, ইসিজি মেশিন এবং ট্রলি ব্যবহারকারীদের থেকে অর্থ আদায় করার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। এদিকে, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনুকূলে বিধি বহির্ভূতভাবে ওভারটাইম বাবদ অর্থ প্রদান করে রাষ্টীয় অর্থের অপচয় করার অভিযোগ বিষয়ে জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয় একটি অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানকালে ওই কার্যালয়ের নভেম্বর মাসের কর্মচারীদের বেতন বিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১৯৫ জন কর্মচারী কর্মরত থাকলেও প্রকতৃপক্ষে বেতন ও ওভারটাইম ভাতা ২২২ জন কর্মচারীর অনুকূলে দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে রংপুর বিআরটিএ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ড্রাইভিং লাইসেন্স, লার্নার কার্ড, ফিটনেস সনদ ও অন্যান্য সেবা প্রদানে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন, রংপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে অপর একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়।অভিযানকালে এনফোর্সমেন্ট টিম ছদ্মবেশে সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে অভিযোগের বিষয়ে তথ্যাবলি সংগ্রহ করে। অভিযানকালে দুইজন দালালকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে দুদক টিম। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে দালালদের অর্থদ ও কারাদ প্রদান করা হয়। রাজশাহীর তানোর উপজেলা পোস্ট অফিস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গ্রাহকের সঞ্চয়ের টাকা প্রদান না করে আÍসাতের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন, রাজশাহী সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে উপজেলা পোস্ট অফিসে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। এছাড়াওসাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা ও রেহানার মেয়ে টিউলিপের নামে পৃথক তিনটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দের অনিয়মের অভিযোগে (১৩ জানুয়ারি) দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাগুলো দায়ের করেন। দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ভাগ্নি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিককে সহযোগী আসামি করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তিন মামলায় আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং রেহানার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রুপন্তীকে।