মঙ্গলবার ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৯ মাঘ ১৪৩১
 
শিরোনাম:


বাংলাদেশ বিমানের অবহেলায় ভাইকে শেষ বিদায় দিতে পারেননি প্রবাসী বাংলাদেশি
ফাতেমা রহমান রুমা, জার্মানি থেকে
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫, ৭:৩৪ PM

জার্মানিতে বসবাসরত এক বাংলাদেশী প্রবাসী, রেজাউল করিম সিদ্দিকী, শেষবারের মতো মৃত ভাইকে দেখতে দেশে ফেরার সময় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তাদের অবহেলা ও দুর্ব্যবহারে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। আবুধাবি বিমানবন্দরে তিনি যখন ফ্লাইটে উঠতে চেয়েছিলেন, তখন কর্মকর্তারা দাবি করলেন যে তার নামে কোনো টিকিট নেই। বিষয়টি নিয়ে তিনি ব্যাপকভাবে বিচলিত হয়ে পড়েন এবং বিমান কর্মকর্তাদের কাছে ব্যাখ্যা চান। কিন্তু কর্মকর্তারা কোনো সহযোগিতা না করে উল্টো তাকে দুর্ব্যবহার করেন। এই অবহেলার কারণে বাধ্য হয়ে বিকল্প উপায়ে বাড়তি ব্যয়ে ৪৮ ঘন্টা পর রেজাউল দেশে ফিরতে অনেক দেরি করেছেন ফলে ভাইকে শেষবারের মতো দেখা ও মৃত ভায়ের দাফনের শেষ সুযোগ হারিয়েছেন। অথচ পরবর্তীতে তার নামের টিকিটটি সার্ভারে পাওয়া গেছে।

এসব কিছুর জন্য আবুধাবিতে কর্মরত বিমানের কর্মকর্তাদের চরম দায়িত্বহীনতা আর স্বেচ্ছাচারিতাকে দায়ী করেছেন রেজাউল করিম। তার অভিযোগ, “বিমানের কর্মীরা তাকে কোনো ধরনের সহযোগিতা না করে উল্টো চরম দূর্ব্যবহার করেছেন। নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া বর্ননাতীত অবমাননাকর ঘটনার জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ১শ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন তিনি।“
এর আগে রেজাউল করিম সিদ্দিকী , ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট) থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশে কিছুদিন চাকরি করার পর জার্মানিতে গিয়ে সেন্সর টেকনোলজিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও সম্পন্ন করেন। গত ১১ বছর যাবৎ তিনি স্বপরিবারে জার্মানিতে বসবাস করছেন এবং সেখানেই কর্মরত আছেন।

গত শনিবার, জার্মানী থেকে রেজাউল করিম,  প্রতিবেদকের সাথে যোগাযোগ করে তাঁর মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। করোনা মহামারিতে তাঁর ছোট বোনকে হারানোর পর, তাঁর ভাগ্নীদের দেখাশোনা করছিলেন তাঁর বোনের স্বামী, জয়নাল আবেদিন লিটন। হঠাৎ লিটনের অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর পেয়ে রেজাউল দ্রুত দেশে ফিরার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু দেশে পৌঁছানোর আগেই লিটনের মৃত্যুর খবর পান।

তিনি জানান, “প্রথমে জার্মানির মিউনিখ বিমান বন্দর থেকে গ্রীস এরপর সেখান থেকে আরেকটি ফ্লাইটে আবুধাবি বিমান বন্দরে পৌছায়। সেখান থেকে ১১ জানুয়ারি  স্থানীয় সময় রাত পৌনে তিনটায় বিমানের একটি ফ্লাইটে (বিজি ৩২৮) ঢাকায় পৌছানোর জন্য আগে থেকেই টিকিট (নম্বর ৯৯৭৩৪৯৬১৮৪৮৩৭) কিনেছিলাম। কিন্তু বিমান বন্দরে বিমানের কাউন্টারে গিয়ে বোর্ড পাশ সংগ্রহ করতে গেলে সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা (বাংলাদেশী নাগরিক) জানান, আমার নামে কোন টিকিট নাকি তাদের সার্ভারে নেই।“ ‘চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠার মধ্যেও তাদেরকে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করি, মৃত্যু ভাইয়ের কথা বলি, আমার টিকিটের স্বপক্ষে নানা প্রমান দেখায়। কিন্তু কিছুতেই তাদের মন গলেনি। উল্টো আমার সঙ্গে চরম দূর্ব্যাবহার করেন। এক পর্যায়ে তাদেরকে বললাম-আমি জার্মানী থেকে আরও দুইটা ফ্লাইটে এসেছি। টিকিট ছাড়া তো আসা সম্ভব না। তাদের ফ্লাইটের বোর্ডি পাশ সংগ্রহের জন্য শুধু আমার নাম বললেই তারা তা দিয়েছে। আপনারাও আমার নাম দিয়ে একটু খুঁজে দেখতে পারেন। এ কথা শুনেই বিমানের একজন কর্মকর্তা লাফ দিয়ে উঠে বলেন-আপনার কাছে কী আমার কাজ শিখতে হবে? যান। এক পর্যায়ে ওই কর্মকর্তা তার আসন ছেড়ে চলে গেলেন,’ যোগ করেন রেজাউল।

রাত আড়াইটার দিকে বিমানবন্দরে একা দাঁড়িয়ে রেজাউল বুঝতে পারলেন, তিনি এক চরম দুর্দশার মধ্যে পড়েছেন। বাংলাদেশে ফেরার পরবর্তী ফ্লাইটের জন্য এত রাতে আবুধাবিতে আটকে পড়া তাঁর জন্য এক দুঃস্বপ্ন ছিল। কিন্তু রাতে সবাই ঘুমিয়ে থাকায় পরিচিতদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা ব্যর্থ হলে, তিনি চরম বিপাকে পড়েন।
রেজাউল বলছিলেন, ‘প্রায় ১২ ঘন্টার জার্নি, তার উপর স্বজন হারানোর ব্যাথা। এরমধ্যে বিমানের কর্মকর্তাদের এমন দায়িত্বহীনতায় আমি হতবাক ছিলাম। আমার তখন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। পাগলের মতো বিমানবন্দরের ভেতর হাটছি। এক পর্যায়ে সেখানে একজন বাংলাদেশীর সঙ্গে দেখা হলো। তার পরামর্শে একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে ১৫০ কিলোমিটার দূরে দুবাই গেলাম। দুবাই বিমান বন্দরে পরিচিত একজনের সঙ্গে যোগাযোগের পর রাত সাড়ে ৯ টায় ইউএস বাংলা এয়ারলায়েন্সের একটি ফ্লাইটে নতুন করে টিকিট কিনতে হয় আমার। ওই ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছে নিজ বাড়ি টাঙ্গাইল গিয়ে দেখি লিটনের দাফন শেষ।’

বাংলাদেশী বংশোদ্ভত এই জার্মান নাগরিক জানান, ‘নিজের মানসিকতা একটু স্বাভাবিক হলে কয়েকদিন পর ঢাকার ফার্মগেটে বিমানের কার্যালয়ে বলাকায় গিয়ে অভিযোগ করি। সেখান থেকে আমাকে মতিঝিলে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকার পর মতিঝিলে বিমানের এক কর্মী আমার পিএনআর নম্বর দিয়ে চেক করে বলে আপনার নামে টিকিট তো ছিলো।  সেটা এখনও (অনসময়) সার্ভারে দেখাচ্ছে। এক পর্যায়ে আমার অনুরোধে তিনি একটি প্রিন্ট কপিও আমাকে দিলেন।’

রেজাউলের অভিযোগ শুনে বিমানের কর্মচারী দায় স্বীকার করে নিলেন। তিনি বললেন, “এই সমস্যার জন্য আসলে আবুধাবিতে কর্মরত তাঁদের সহকর্মীরা দায়ী।“রেজাউল Newspaper X কে বলেন, ‘আমার পরিবারের সবাই আজীবন বহন করবে এই অসহ্য যন্ত্রণা। বিশেষ করে যখন করোনায় মা হারানো আমার এতিম দুই ছোট ভাগ্নি, বাবা হারানোর উত্তপ্ত বেদনা আর কষ্টে জর্জরিত, তখন তাদেরকে বুকে জড়িয়ে ধরার সুযোগ থেকে আমি বঞ্চিত হয়েছি।’

‘জার্মানিতে ১২ বছরের সফল ইতিহাসে এমন ঘটনা শুধু আমার ব্যক্তিগত ট্রাজেডিই নয়, সন্মানিত সকল রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের জন্য শোকের এবং লজ্জার। সাথে সাথে আমরা বিদেশে পড়ে থেকেও যাদের আত্মা এই দেশের আলো-বাতাস-মাটিতে পড়ে থাকে, সেই বাংলাদেশের জন্য এটি একটি লজ্জা ও কলঙ্কময় ঘটনা,’ যোগ করেন তিনি। ক্ষুব্দ কন্ঠে রেজাউল বললেন, ‘বাংলাদেশ বিমানের অব্যবস্থাপনা আর স্বেচ্ছাচারিতায় শেষবার ভাইয়ের মুখখানি তো দূর, শেষ বিদায়ের জানাযায় পর্যন্ত থাকতে পারিনি। আমি চাই, আমার বোনজামাইয়ের মৃত্যু ব্যর্থ না হোক। আমি এই ঘটনার সুষ্টু নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার চাই। আমি চাই, আমার মতো আর কেউ যেন এমন অসহনীয়-অপূরনীয় ক্ষতির শিকার না হয়। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বলেও জানান তিনি।







আরও খবর


 সর্বশেষ সংবাদ

নরসিংদীতে স্ত্রীর হাতে স্বামী খুন, আটক ১
ইতালিতে প্রবাসীদের খিচুড়ি পার্টির আয়োজন
শেরপুরের গারো পাহাড়ে পিকনিক বাসের সাউন্ড বক্সের শব্দ দূষণে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে
মেহেরপুরে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান, তিনটি ইটভাটা বন্ধ ঘোষণা, ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমান
‘মানচিত্রের কান্না’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
আরো খবর ⇒


 সর্বাধিক পঠিত

মুন্না খানের কথায় বর্ষা চৌধুরী
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে কোরিয়া বাংলা প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন
ত্রিশালে ব্যাডমিন্টন ফাইনাল খেলা
মিশা সওদাগর হয়ে ওঠার নেপথ্য কারিগর তার স্ত্রী মিতা
আমিরাতে রেডিমেড গার্মেন্টস ট্রেডার্স এসোসিয়েশনের আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল
প্রকাশক: এম এন এইচ বুলু
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মাহফুজুর রহমান রিমন  |   উপদেষ্টা সম্পাদক : রাজু আলীম  
বিএনএস সংবাদ প্রতিদিন লি. এর পক্ষে প্রকাশক এম এন এইচ বুলু কর্তৃক ৪০ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বুলু ওশেন টাওয়ার, (১০তলা), বনানী, ঢাকা ১২১৩ থেকে প্রকাশিত ও শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ফোন:০২৯৮২০০১৯-২০ ফ্যাক্স: ০২-৯৮২০০১৬ ই-মেইল: spnewsdesh@gmail.com