প্রকাশ: সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫, ৭:৫৮ PM
বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-সংরক্ষণ পরিচালন বিভাগের পরিচালক মোঃ শাহজাহানের দুর্নীতির বিষয়ে গত ১৭ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকে আবেদন করেছেন কর্মচারিদের পক্ষে মিজানুর রহমান নামে এক কর্মচারি। আবেদন পত্র থেকে জানা যায়- বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-সংরক্ষণ পরিচালন বিভাগের পরিচালক মোঃ শাহজাহান একজন স্কুল মাস্টারের ছেলে। মোঃ শাহজাহান ১৯৯২ সালে বিআইডব্লিউটি’এ সহকারী পরিচালক পদে কাজে যোগদান করার পর অদ্য পর্যন্ত আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সোনার হরিণ সরকারি চাকরি পেয়েই বনে গেছেন অঢেল সম্পদের মালিক, গত সতের বছরের স্বৈরাচার সরকারের খুব কাছের লোক হিসেবে অবৈধভাবে পদোন্নতি নিয়েছেন কয়েক বার, হয়ে গেছেন পরিচালক নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের পরিচালক। ২৭-৭-১৯৯২ ইং সালে সহকারী পরিচালক পদে দুই বছর শিক্ষানবিস গণ্ডি না পেরোতেই ভুয়া লোকাল পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রবিধানমালা ১৯৯০ এর ১৯ নং তফসিলের নিয়োগ প্রক্রিয়া অবলম্বন না করে অবৈধভাবে সরাসরি নিয়োগ নেন উপ-পরিচালক পদে যা তফসিলে বর্ণিত নিয়ম অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ, তফসিল ১৯:-২ মেট (এফজি) সার্টিফিকেট। অথবা পদার্থ, গণিত, ভূগোল স্নাতকোউত্তর সহ সরকারি / স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার প্রথম শ্রেণির পদে আট বছরের অভিজ্ঞতা (হাইড্রোগ্রাফিক)ও সানোগ্রাফি মেরিন সার্ভিসে যাহার মধ্যে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা মেরিন সার্ভিস হইতে হইবে। এক অভ্যন্তরীণ নৌপথে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হইবে। শিক্ষানবিশ থাকাকালে প্রার্থীদের অবশ্যই দ্বিতীয় শ্রেণীর ইনল্যান্ড মাস্টার সার্টিফিকেট থাকতে হবে। পদোন্নতির যোগ্যতায় এক দ্বিতীয় শ্রেণীর ইনল্যান্ড মাস্টার সার্টিফিকেট দুই চার নং কলামে বর্ণিত পদে পাঁচ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। পরিচালক নৗ সংরক্ষণ পরিচালন বিভাগের মোঃ শাহজাহানের চাকরি জীবনে দ্বিতীয় শ্রেণীর ইনল্যান্ড সার্টিফিকেট নেই এবং শিক্ষানবিশ থাকাকালেও দ্বিতীয় শ্রেণী সার্টিফিকেট পাশ করেননি যেখানে দ্বিতীয় শ্রেণীর মাস্টার্স সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে অথচ এই শাহজাহানের কোন ধরনের যোগ্যতা নেই বিধায় তাহার নিয়োগ সম্পন্ন অবৈধ এবং পরবর্তীতে যে পদোন্নতি গ্রহণ করেছেন সবগুলোই অবৈধ। ইতিপূর্বে অনভিজ্ঞতার কারণে ২০০৭ সাল সহ কয়েকবার সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন কর্মদক্ষতা ও অভিজ্ঞতানা থাকার কারনে জানার মোঃ শাহজাহান পরিচালকের দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের স্থাপিত ঘাট ও পয়েন্ট গুলোতে পুন্টুন গুলো অব্যবস্থাপনার কারণে ডুবে যায় এতে বিআইডব্লিউটিএ, কর্তৃপক্ষ যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি কর্তৃপক্ষের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে, এবং এই ডুবা পন্টুন গুলো মেরামতের নামে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি করেছে। আবার এই ডোবা পন্টুনগুলো তুলতে গিয়েও উদ্ধারকারী জাহাজ দিয়েও করেছে বাণিজ্য। নদীর পানির স্রোতের গতিধারা নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য চ্যানেল তৈরিতে বাঁশ দিয়ে ব্যান্ডেলিং এর কাজ করে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা যার হিসাব নেওয়ার মতো কেউ নেই। 
পরিচালক শাহজানের এলাকার লোক এবং নিকটতম আত্মীয় ঠিকাদার মোঃ বাহারকে দিয়ে একাধিক নামে বেনামে প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো দিয়ে বিল করে লুটপাট করছে। কলসি বয়া একটি প্রজেক্ট তৈরি করে তানিয়া এন্টারপ্রাইজের নামে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা যার বর্তমান কোন অস্তিত্ব নেই, এই কলসী বয়া গুলো দশ বছরের সিকিউরিটি রয়েছে। বয়া বিকন বাতি যা প্রজেক্ট তৈরি করে বিদেশ থেকে আমদানি করে থাকে এই ঠিকাদার বাহারের কম্পানির নামে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ঠিকাদার বাহার এর কোম্পানির নামে ভুয়া বিল বানিয়ে লুট করে হাতিয়ে নেন সরকারি অর্থ। আখি এন্টারপ্রাইজের নামে টিপি-১৩৫ ভুয়া বিল নেন ৭,৭২,০০০/- টাকা। তানিয়া এন্টারপ্রাইজের নামে এম পি ১২ এর ভুয়া বিল ৬,৮১,০০০/-টাকা। তানজিল ডগ ইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস নামে টিপি-৮০এর ভুয়া বিল ৭,১৩,৩৫২/-টাকা তানজিল ডগ ইয়াড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস এর নামে টিপি-১৭৩ এর ভুয়া বিল নেন ৯,৩৬,০০০ টাকা। তানিয়া এন্টারপ্রাইজের নামে স্পিডবোড এক মেরামত ভুয়া বিল নেন ৮,৮৪,১০০/-টাকা। আলিফ এন্টারপ্রাইজের নামে টিপি-৪৫ এ ভুয়া বিল ৪,৯৮১৫১/- টাকা। পিসি পোল মার্কা যাহা বাঁশ দ্বারা তৈরি করা হয়, এসব মার্কা কোন হিসাব দিতে হয়না, শুধু মাত্র এক কথা বলে পার পেয়ে যায়- নদীর স্রোতে মাটি পলি ভেঙ্গে নদীর গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। প্রকৃতপক্ষে কোন মার্কাই দেওয়া হয়না নদীর গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে, একথা বলে বিশাল একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাতিয়ে নেন বিপুল অংকের টাকা। প্রতি বছর বাজেটের কয়েক কোটি টাকা লোপাট করা হয় এই অবৈধ মাফিয়া সিন্ডিকেটের মাধ্যমে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, এই অবৈধ অর্থের একটি অংশে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাঝে বিতরন করা হয় আর এভাবেই চলে মোঃ শাহজাহানের দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে। আর এ স্বর্গরাজ্যের মাধ্যমেই শাজাহান বানিয়ে নিয়েছেন গাড়ি-বাড়ি ইত্যাদি প্রপার্টি যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু নাম ঠিকানা দেওয়া হলো- যার মধ্যে আছে আলিফ গার্ডেন নামের একটি বাড়ি, যার নাম্বার হল ৫৮/৩০ গ, উত্তর মুগদা ঢাকা-১২১৪। এখানে রয়েছে দুটি ফ্ল্যাট। দুই নাম্বারে আছে দুটি ফ্ল্যাট। বাড়ি নং ৫৪ উত্তর মুগদা ঝিলপাড় রোড ঢাকা-১২১৪। আরো আছে ঢাকা সাভার বাজার অন্ধ মার্কেট দ্বিতীয় তলায় দুটি দোকান। সাভারে আরো আছে কাঠগড়ায় সাত তলা চার ইউনিটের একটি বাড়ি। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা। মোহাম্মদপুর হাউজিংএ রয়েছে ৬ শতক জমি বাউন্ডারি ওয়াল দেওয়া কমপ্লিট বাড়ী। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। আর রয়েছে সাভার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর বড়ওয়ালি মৌজা দাগ নং১০২ আরমিন ১৮৬ মৌজা দশ কাঠা জায়গার উপর ৭ ইউনিটের দশ তলা কমপ্লিট বাড়ি । এইবাড়িটির আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকার মতন। এছাড়াও রয়েছে ঢাকা রামপুরায় ছয় তলা বাড়ি, হাতিরপুলে ফ্ল্যাট, ফতুল্লা লঞ্চঘাটে নদীর পশ্চিম পাড়ে কেরানীগঞ্জ থানাধীন এলাকায় ঠিকাদার বাহারের সাথে পার্টনারশিপে তৈরি করেন একটি ডগ ইয়াড। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় একশত কোটি টাকা।
এমতঅবস্থায় এই দুর্নীতিবাজ পরিচালক শাহাজানের দ্রুত গ্রেপ্তার করে তাহার এই অবৈধ সম্পদের তদন্ত সাপেক্ষে তাকে শাস্তি আওতায় আনার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি বিআইডব্লিউটিএ কর্মচারিগণ। এমন একটি চিঠি গত ১৯ নভেম্বর কর্মচারিদের পক্ষেে মিজানুর রহমান দুদক চেয়ারম্যান বরাবর জমা দেন। শাহজাহানের এই দুর্নীতি যেন রূপ কথার কাহিনীর মতোই শোনা যাচ্ছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআইডব্লিউটিএর অনেক কর্মকর্তাই এই অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আইনের আওতায় এনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব সত্যতা মিলিবে। এই বিষয়ে পরিচালক শাহজাহান সাহেবের বক্তব্য নিতে গেলে তিনি দেখা করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।