বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটসহ দেশটির তিন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিককে পদত্যাগ করতে বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহযোগীরা। ট্রাম্পের ওই সহযোগীরা মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লোকবল ও অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিষয়টির সঙ্গে সম্পর্কিত দুজন কর্মকর্তার বরাতে এ খবর জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
সূত্রটি জানিয়েছে, মার্শা বার্নিকাট ছাড়া বাকি দুই জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক হলেন ডেরেক হোগান ও আলেইনা তেপলিৎজ।
বলা হচ্ছে, ট্রাম্প ক্ষমতা নেওয়ার পর কূটনৈতিক বহরে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারেন। এই পরিস্থিতিতে তিন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিককে নতুন প্রশাসনের হয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রদবদলের দায়িত্বে থাকা এজেন্সি রিভিউ টিম পদত্যাগ করতে বলাটা সেটারই ইঙ্গিত দেয়।
আগামী ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ট্রাম্প। যদিও নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকেই তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি ‘ডিপ স্টেটকে মুছে ফেলতে’ অনুগত নয়, এমন কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করবেন। যুক্তরাষ্ট্রে সচরাচর দেখা যায়, প্রশাসনে রাজনৈতিক নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা নতুন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব নেওয়ার পরপর নিজেরাই পদত্যাগ করেন। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সাধারণত নিজেদের দায়িত্ব চালিয়ে যান। এখন যে তিনজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিককে পদ ছাড়তে বলা হয়েছে, তারা ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান—উভয় প্রশাসনে রাষ্ট্রদূতসহ গুরুত্বপূর্ণ সব দায়িত্ব পালন করেছেন, করছেন।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, উদ্বেগের বিষয় হলো, এটা আরও বড় ধরনের খারাপ কিছুর পটভূমি তৈরি করতে পারে।
প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ট্রাম্পের ক্ষমতাগ্রহণ সংক্রান্ত অন্তর্বর্তী দলের মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের জাতি ও আমেরিকার কর্মজীবী নারী–পুরুষকে প্রথমে রাখার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করেন, এমন কর্মকর্তাদের খুঁজে বের করতে অন্তর্বর্তী দলের পক্ষ থেকে চেষ্টা করাটা খুবই স্বাভাবিক।’ ওই মুখপাত্র আরও বলেন, ‘আমাদের অনেক ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করে যেতে হবে। আর এজন্য একই লক্ষ্যের প্রতি মনোযোগ রয়েছে, এমন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি দল দরকার।’
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, এ বিষয়ে নিজস্ব কোনো ঘোষণা দেবে না মন্ত্রণালয়। আর পদত্যাগ করতে বলা তিন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকের কেউই প্রতিক্রিয়া জানানোর অনুরোধে সাড়া দেননি। ট্রাম্প প্রশাসন আগের চেয়ে আরও আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে শান্তি স্থাপন, ইসরায়েলের প্রতি আরও সমর্থন এবং ন্যাটো মিত্রদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে চাপ সৃষ্টির মতো বিষয়গুলোকে তিনি অগ্রাধিকার দেবেন। এছাড়া গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ করার মতো অস্বাভাবিক নীতি অনুসরণের কথাও বলেছেন তিনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, তাঁর এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি অনুগত ও কার্যকর কূটনৈতিক কর্মী বাহিনী অপরিহার্য।
তিন কর্মকর্তাকে সরানোর সিদ্ধান্ত ২০১৭-২০২১ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মেয়াদের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। সেই সময়ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ট্রাম্পের পরিকল্পনার সঙ্গে পরিচিত দুটি সূত্র জানিয়েছে, নতুন প্রশাসন সহকারী সচিবের মতো পদগুলোতে রাজনৈতিক নিয়োগের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। এর মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরে তাঁর অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টির আশঙ্কা কমানো যাবে বলে মনে করছেন ট্রাম্পের সহকারীরা। রয়টার্সকে দুটি সূত্র জানিয়েছে, ‘এজেন্সি রিভিউ টিম’ ইতোমধ্যে এমন পদগুলোর জন্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছে।