শিরোনাম: |
‘হাসপাতালে ঘুরে ঘুরেই’ বাড়ছে মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক
|
![]() গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে সক্রিয় রোগী রয়েছেন ৮৩ হাজার ৮৮৫ জন, যা গত ৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এদের মধ্যে ৪ হাজার ৬৯৫ জন সাধারণ শয্যা ও ৪১৭ জন আইসিইউ শয্যায় রয়েছেন। ঢাকা মহানগরীর ১৯টি কোভিড হাসপাতালে ২৫টি আইসিইউ শয্যা ও ২৭২টি সাধারণ শয্যা ফাঁকা রয়েছে। যদিও হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের দাবি, সরকারি তথ্যের চেয়ে বেশি রোগীতে রাজধানীর হাসপাতালগুলো পূর্ণ। তারা বলছেন, সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাক্কার তীব্রতা বেশি হওয়ায় দেশে এখন অন্য সময়ের তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ রোগী সবচেয়ে বেশি, যা মৃত্যুর তালিকা লম্বা করছে। দেশের সবচেয়ে বড় চিকিৎসা কেন্দ্র ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত সপ্তাহেই ঠাঁই মিলছিল না করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের। চলতি সপ্তাহে ১০ শতাংশের মত রোগী বেড়েছে বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক কর্নেল নাজমুল হক। তিনি বলেন, ‘রোগী তো এখন বেড়েছেই। এখন যেহেতু সংক্রমণের হার বেশি, ক্রিটিক্যাল রোগীর সংখ্যাও বেশি, তাই মৃত্যুর হারটাও বেশি।’ কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের ডা. শিহাব উদ্দিন জানান, ‘যত সময় যাচ্ছে, তার হাসপাতালে রোগীর ঢল তত বাড়ছে। অনেক রোগী আসছে। গত সপ্তাহের তুলনায় ৩০ শতাংশ রোগী বেড়েছে। রোগী ডিসচার্জ হচ্ছে, আবার ভর্তি হচ্ছে। এরকম অবস্থা। সারাক্ষণই রোগী ভর্তি হচ্ছে; আইসিইউ পূর্ণ। সবাই এখন ভর্তি হচ্ছে অক্সিজেনের জন্য।’ গত সপ্তাহের তুলনায় তিনগুণ রোগী বেড়েছে জানিয়ে ইমপালস্ হাসপাতালের সিইও বলেন, ‘এখন আইসিইউতে ৫৬ জন ও জেনারেল বেডে ২০০ জন রোগী ভর্তি আছেন। অনেক রোগী আসছে। আমাদের এই জনবলে খুবই হিমশিম খেতে হচ্ছে রোগী সামাল দিতে।’ বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের জেনারেল বেডে ৯০ জন ও আইসিইউতে ১৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন বলে জানান এ এল ইমরান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এখন সিট ফাঁকা তো দূরের কথা, সিরিয়ালে আছেন ৪৬ জন। আমরা ফোন ধরতে ধরতে ক্লান্ত।’ গত সপ্তাহের তুলনায় ১০ শতাংশ রোগী বেড়েছে জানিয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক ডা. আরিফ মাহমুদ বলেন, ‘অনেক রোগী ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। ভর্তি নেওয়ার মত জায়গা খালি নেই।’ এখন আক্রান্তদের সুস্থ হতে বেশি সময় লাগছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন রোগীদের বেশি ভোগাচ্ছে করোনাভাইরাস। অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে আসছে। দুর্বলতা থেকে যাচ্ছে।’ মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. অসীম কুমার নাথ জানান, সরকারি এই হাসপাতালটির সব শয্যা পূর্ণ হওয়ায় এখন রোগীদের ফেরত পাঠাতে হচ্ছে। রোগীদের ১০ শতাংশ ‘ক্রিটিক্যাল’ হলেও হাসপাতালটিতে ভর্তি থাকা সবারই অক্সিজেনের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘এখন যে সংক্রমণটা হচ্ছে, সেই সংক্রমণের তীব্রতাটা একটু বেশি। আগে ভাইরাসটা যেমন রোগ সৃষ্টি করত, এখন তার তীব্রতাটা আরও বেশি বলে মনে হচ্ছে আমার কাছে।’ রাজধানীর হাসপাতালগুলো শয্যা সঙ্কটে ধুঁকতে থাকলেও ঢাকা মহানগরীর বাইরের চিত্র ভিন্ন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মঙ্গলবার যে তথ্য গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে, তাতে দেখা যায় ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ৬ হাজার ৩১৮টি সাধারণ শয্যার ৪ হাজার ৭১৯টি ও ২৯০টি আইসিইউ শয্যার ১৫৫টি ফাঁকা রয়েছে। মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ‘বাইরের রোগীদের কারণে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে চাপ পড়েছে। ঢাকার ক্রাইসিসটা আসলে ঢাকার না। বাইরের রোগীরা ভাল চিকিৎসার জন্য ঢাকামুখী হওয়ায় রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে সঙ্কট দেখা দিয়েছে।’ দেরিতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা বেশি ঝুঁকিতে পড়ছেন বলে জানালেন উত্তরার কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘তাদের মৃত্যুর হারটাও বেশি হচ্ছে। আর কোমরবিডিটির ব্যাপারটাও আছে।’ মৃত্যু ঝুঁকিতে পরার পেছনে রোগীদের অবহেলা ও অসতর্কতা রয়েছে বলে করেন বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এল ইমরান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘রোগীরা এখন রোগকে রোগ মনে করছে না, নিজেরাই ট্রিটমেন্ট নিচ্ছে। প্রথমবার প্যানিকড হয়ে ভর্তি হলেও রোগীরা কিন্তু চিকিৎসা পেয়েছিল।’ তার ধারণা, সংক্রমণের এবারের ঢেউয়ে অনেকে বাসায় থাকছেন, কিন্তু যথাযথ চিকিৎসাটা নিচ্ছেন না তারা। কি পরিমাণ অক্সিজেন লাগবে না জেনে ভুলভাবে চিকিৎসা করছেন। তিনি আরো বলেন, ‘বাজারে মেলা অক্সিজেন স্যাচুরেশন মেশিন অনেক সময় ভুল ফলাফল দেয়। অনেকে দেখেন অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৮ আছে। আসলে এটা ৮০ এর নিচে নেমে গেছে- এটা বেশি হচ্ছে। এটা খুব ভোগাচ্ছে আমাদের।’ |