বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ৫ বৈশাখ ১৪৩১
 
শিরোনাম: নতুন বছরে অমিত সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ       ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা       একদিনে শনাক্ত আরও ৫১২ জন       দেশে আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত       সবার আগে বর্ষবরণ করলো নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া       শেষ সূর্যাস্ত দেখতে সৈকতে ভিড়       ২০২১ সালে ধর্ষণের শিকার অন্তত ১৩২১ নারী!      


স্বাধীনতার ৫০ বছর
‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ থেকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: সোমবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২১, ৮:২৯ পিএম |

‘বাংলাদেশ একটি তলাবিহীন ঝুড়ি’- প্রায় ৫০ বছর আগে বিশ্বের মানচিত্রে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার। বাংলাদেশকে নিয়ে অর্থনীতিবিদ জাস্ট ফাল্যান্ড ও জে আর পার্কিনসনের মন্তব্য ছিল, ‘যদি বাংলাদেশ কখনও উন্নয়ন করতে পারে, তবে পৃথিবীর কোনও দেশই উন্নয়নে বাদ থাকবে না’। তবে বাস্তবতা হচ্ছে সেই বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। সেই বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খাদ্য রপ্তানি করে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষিজমি কমতে থাকাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে সেই বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। ধান, গম ও ভুট্টায় বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশের এখন মোট দেশজ উৎপাদন তথা জিডিপি’তে কৃষি খাতের অবদান ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। খুব বেশি সময় নয়, স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে এই বাংলাদেশ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরের বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। বাংলাদেশ আজ অনেকের চোখেই বিস্ময়। বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় নাম লেখানোর অপেক্ষায়। এটিই এখন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা। যা তিনি চেয়েছিলেন।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য এখন অনেকের কাছেই ঈর্ষণীয়। টেকসই কৃষি উন্নয়নে সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ এবং দিকনির্দেশনায় খোরপোষের কৃষি আজ বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হয়েছে। খাদ্যশস্য উৎপাদন, টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কর্মসংস্থান ও রপ্তানি বাণিজ্যে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ মানুষের জীবন-জীবিকা এখনও কোনও না কোনওভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। শ্রমশক্তি জরিপের (২০১৬) হিসাব মতে, দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ এখনও কৃষিতে নিয়োজিত।

জানা গেছে, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে প্রায় শূন্য হাতে শুরু করা বাংলাদেশের খাদ্যশস্য (ধান ও গম) উৎপাদন ছিল মাত্র এক কোটি টন। গত পাঁচ দশকে কৃষিজমি আশঙ্কাজনক হারে কমলেও শস্য উৎপাদন বেড়েছে প্রায় চার গুণ। বাংলাদেশে এখন বছরে প্রায় ৫ কোটি টনের কাছাকাছি পরিমাণ ধান উৎপাদন হয়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি-বিষয়ক খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ‘দ্য স্টেট অব ফিশ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক উৎস থেকে মাছ ও সবজি উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এখন তৃতীয়। পোলট্রি ও ডিম ১৬ কোটি মানুষের চাহিদা মেটাচ্ছে। ১ হাজার ৭০০ কোটি পিস এখন বাংলাদেশের বার্ষিক (২০১৮-১৯) ডিম উৎপাদন। ছাগল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে চতুর্থ আর ছাগলের মাংস উৎপাদনে পঞ্চম। বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল বিশ্বের উন্নত জাত হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কলা চাষে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। এ সময়ে উদ্ভব ঘটেছে স্ট্রবেরি, ড্রাগন ফ্রুট, বাউকুল, আপেল কুল, আরবি খেজুর ইত্যাদি ফলের।

মৎস্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৯-২০ সালের এসে বাংলাদেশে দুধের উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৬৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন। মাংসের উৎপাদন এখন ৭ দশমিক ৬৭ মেট্রিক টন। ডিমের উৎপাদন এখন ১৭ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন পিস। বর্তমানে মাছের উৎপাদন ৪৪ দশমিক ৮৮ লাখ মেট্রিক টন। বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন এখন ৫ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ করা হয়েছিল ১০১ কোটি টাকা। খাতওয়ারি যা ছিল সর্বোচ্চ বরাদ্দ। এ বরাদ্দের উদ্দেশ্য ছিল ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে ১৫ লাখ একর থেকে ৩৬ লাখ একর জমি উচ্চ উৎপাদনশীল খাদ্য উৎপাদনের আওতায় আনা।  ৪ লাখ ২৫ হাজার পাম্প স্থাপন করা। ২ হাজার ৪০০ গভীর নলকূপ ও ৪ হাজার অগভীর নলকূপ খনন করা। কৃষকের কাছে সহজে রাসায়নিক সার সরবরাহের লক্ষ্যে মণপ্রতি সারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল মাত্র ২০ টাকা। যা ছিল ক্রয়মূল্যের অর্ধেক।

বাংলাদেশের কৃষি খাতে বর্তমান সাফল্যের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৩ সাল নাগাদ অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়তে শুরু করে। ১৯৭৪-৭৫ সালের বাজেটে এ প্রবৃদ্ধি আরও আশান্বিত করে। বড় আকারের বন্যা হওয়ার পরও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। চিনি, লবণ, কাপড়, সুতা, মেশিন, নিউজপ্রিন্ট, ইলেকট্রনিকস যন্ত্রাংশ, ডিজেল ইঞ্জিন, চট তৈরির তাঁত, সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প, ফাইব্রিফেক্স সোডিয়াম সিলিকেট প্রভৃতি ক্ষেত্রে বেশ উন্নতি হয়। ১৯৭৫ সালের এপ্রিল থেকে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে থাকে। চালের দাম কেজিতে ৬ থেকে সাড়ে ৫ টাকা। আলু ২ টাকা থেকে দেড় টাকায় নেমে আসে। কাপড়, সার, কাগজ উৎপাদনও লক্ষণীয় পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর থেকে যা প্রায় থেমে যায়।

স্বাধীনতার ৫০ বছরের আজকের বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতিতে কৃষি খাতে সরকারের বরাদ্দ প্রায় ৩০ হাজার কোটি (২৯ হাজার ৯৮১ কোটি) টাকা। ডাল, তেলবীজ, মসলা ও ভুট্টা, কাজু বাদাম, কফি ইত্যাদি অর্থকরি ফসল চাষ ও বাজার ব্যবস্থা উন্নয়নে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। ফসলের উৎপাদন খরচ কমানোর লক্ষ্যে ২০১৮ পর্যন্ত সারের মূল্য ৪ দফা কমিয়ে প্রতিকেজি ৮০ টাকার এখন ২২ টাকা, ৭০ টাকার এমওপি ১৫ টাকা, ৯০ টাকার ডিএপি ২৫ টাকা নির্ধারণ করেছিলো। ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষক পর্যায়ে ডিএপি সারের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা থেকে আরও কমিয়ে ১৬ টাকা করা হয়েছে।

কৃষি প্রণোদনা বা পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় এ পর্যন্ত ৯৬০ কোটি ৩৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ৮৬ লাখ ৪০ হাজার ৪৪ জন কৃষক উপকৃত হয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৩৩ কোটি ১৫ লাখ ৬২ হাজার টাকা কৃষি উপকরণ ও আর্থিক সহায়তা হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ সনে অবমুক্তকৃত উদ্ভাবিত জাত ১২ টি, উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ৯৫টি, এবং নিবন্ধিত জাত ২৬টি। গম ও ভুট্টার গবেষণা সম্প্রসারণের জন্য সরকার ২০১৮ সালে গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছে। গমের ১টি জাত উদ্ভাবন, গম ও ভুট্টার ৪ হাজার ৫ শটি জার্মপ্লাজম সংগ্রহ এবং রোগবালাই ব্যবস্থাপনার উপর ১টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। অর্থনীতির দিক থেকে বাংলাদেশ এখন এতটাই শক্তিশালী।

বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে ৫৩ লাখ ৫৪ হাজার ৮শ ২ নারিকেল, তাল, খেজুর ও সুপারি চারা বিতরণ ও রোপণ করা হয়েছে। মাল্টা, রামবুতান, ড্রাগন প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের অপ্রচলিত ও বিদেশি ফল চাষে উৎসাহ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ২০১৮-১৯ সনে সম্প্রসারিত সেচ এলাকা ২২ হাজার ৮শ ৪০ হেক্টর। সরবরাহকৃত সেচ যন্ত্র ৫শ ৪৭টি এবং স্থাপিত সোলার প্যানেলযুক্ত সেচযন্ত্র ৯৫টি। ৪শ ৮০টি সেচ অবকাঠামো, ৫শ ৮১ কিলোমিটার খাল-নালা খনন ও পুনখনন, ৬শ ৮২ কিলোমিটার ভূ-গর্ভস্থ (বারিড পাইপ) সেচনালা এবং ৮ কিলোমিটার ভূ-উপরিস্থ সেচনালা, ২৪ কিলোমিটার গাইড বা ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ক্ষুদ্র সেচ ব্যবস্থার আওতায় সৌরবিদ্যুৎ চালিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুপেয় পানির ব্যবস্থাকরণ ও সেচ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ১০০টি পাতকুয়া স্থাপন করা হয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ধারাবাহিকতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দানাদার খাদ্যশস্যের উৎপাদন ৪ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন) দেশ আজ চালে উদ্বৃত্ত। ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ। ভুট্টা উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৪৬ লাখ মেট্রিক টন। সবজি উৎপাদন বেড়ে ১ কোটি ৭২ লাখ ৪৭ হাজার মেট্রিক টন হয়েছে। আলু উৎপাদনের পরিমাণ ১ কোটি ২০ লাখ মেট্রিক টন। দেশে আম উৎপাদন প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে।

এ বিষয়ে কৃষি অর্থনীতিবিদ শামসুল আলম বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার কাজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জোর চেষ্টা করছেন। কৃষকের হাতে আধুনিক উপকরণ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন বঙ্গবন্ধু, কিন্তু তিনি তা করতে পারেননি। যা তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। কৃষকদের বাঁচানোর জন্য রাজনৈতিক অঙ্গীকার রয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের। সেই অঙ্গিকারই কৃষিতে অভাবনীয় সফলতা এনে বিশ্ব-দরবারে রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।







আরও খবর


প্রকাশক: এম এন এইচ বুলু
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মাহফুজুর রহমান রিমন  |   উপদেষ্টা সম্পাদক : রাজু আলীম  
বিএনএস সংবাদ প্রতিদিন লি. এর পক্ষে প্রকাশক এম এন এইচ বুলু কর্তৃক ৪০ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বুলু ওশেন টাওয়ার, (১০তলা), বনানী, ঢাকা ১২১৩ থেকে প্রকাশিত ও শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ফোন:০২৯৮২০০১৯-২০ ফ্যাক্স: ০২-৯৮২০০১৬ ই-মেইল: spnewsdesh@gmail.com