এখনও রহস্যে আবৃত, মাস্টারমাইন্ড স্কুলছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় আছে, পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে, দিহানের বাসার প্রহরী দুলালকে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাসাটিতে প্রায় দেড় ঘণ্টা ছিল মেয়েটি। পুলিশ প্রধানের ধারণা, সর্বগ্রাসী মাদকের পরিণতিতেই এমন ঘটনা ঘটতে পারে।
পাশের এক ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গত ৭ জানুয়ারি দুপুর ১২.১২ মিনিটে কলাবাগানে দিহানের বাসার সিড়িঘরের দিকে যাচ্ছেন ওই স্কুলছাত্রী। এর পর লম্বাসময় স্বাভাবিক চলাচল ছিলো ভবনের বাসিন্দাদের। পরিচয় বোঝার উপায় নেই এমন কয়েকজনকে বাড়ির গ্যারেজে দেখাগেলেও কিছুক্ষণ পর তারাও চলে যান ভবনের বাইরে। এরপর ওই ভবনে দুইটি গাড়ি ও একটি মোটর সাইকেল ছাড়া আর কোনও যানবাহন প্রবেশ করতে কিংবা বের হতে দেখা যায়নি। প্রায় দেড় ঘন্টা পর, দুপুর ১টা ৩৬ মিনিটে প্রধান ফটক খুলে দেন প্রহরী, ভবন থেকে বেরিয়ে যায় দুইটি গাড়ি যার একটি দিহানের গাড়ি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষনে এমন তথ্য মিললেও; এখনও মৃত্যুর সঠিক কারণ খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি।
তদন্তের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, আদালতের আদেশে আজ-কালের মধ্যেই আসামীর ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ হলেই এই মামলাটি দ্রুত সময়ের মধ্যেই শেষ করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
ওইদিন দিহানের বাসায় দায়িত্বে থাকা প্রহরী পলাতক দুলালকে সোমবার জিজ্ঞাবাসাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। অন্য প্রহরী মোতালেব জানিয়েছেন, অপ্রত্যাশিত এমন ঘটনায় ভয় পেয়ে আত্মগোপনে ছিলেন দুলাল। গণমাধ্যমে খোলা চিঠি লিখলেও; অনেক চেষ্টা করেও ক্যামেরার সামনে আসতে রাজি হননি, দিহানের মা। মুঠোফোনে জানিয়েছেন, ঘটনার বিষয়ে কথা বলতে চাননা তিনি।
নিহতের বয়স নিয়ে নানা অভিযোগের প্রশ্নে তিনি জানান, পুলিশের প্রাথমিক তথ্যের উৎস হাসপাতাল। সেখানে যে বয়স উল্লেখ ছিল, সেটা অনুযায়ি সুরতহাল রির্পোট তৈরি করা হয়েছে। পরবর্তীতে নিহতের পিতা বাদী হয়ে যে মামলা করেছেন, সেখানে উল্লেখিত বয়স অনুযায়ি চলছে মামলাটি। ডকুমেন্ট অর্থাৎ জন্মসনদ ও অন্যান্য সনদের উপর ভিত্তি করেই কাজ করছে পুলিশ। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল তিন যুবকে ঘিরে নানা প্রশ্নের বিষয়েও কথা বলেছেন রমনার ডিসি। জানিয়েছেন, মামলায় একমাত্র আসামী দিহান। তাই অন্যদের গ্রেফতার সম্ভব নয় পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক রির্পোট প্রাপ্তির পর যদি একাধিক ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায় এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিতি প্রমাণিত হয় তাহলে তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে।
সোমবার দিহানের বাসায় যান রমনা বিভাগ উপ পুলিশ কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান। জানিয়েছেন, তথ্য উপাত্তের জন্য দীর্ঘদিন দিহানের বাসায় দায়িত্ব পালন করায় জীজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে দুলালকে; তিনি গ্রেফতার নন।
এদিকে মনোবিজ্ঞানী মেখলা সরকার বলছেন, বিকৃত যৌনাচার ও হত্যার এমন ঘটনা পুরো জাতির জন্য একটি সতর্ক সংকেত। যার দায় পরিবার থেকে সমাজ, সমাজ থেকে রাষ্ট্রের। কারণ সহিংসতার পরিমান দিন দিন বাড়ছে। যার একটি উদাহরণ কলাবাগানের এই ঘটনা। তাই শিশুদের মানসিক বিকাশ ও উজ্জ্বল ভবিষতের জন্য সচেতন হতে হবে এখনই। প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতে কঠোর হতে হবে অভিভাবকদের। নজর দিতে হবে পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান খন্দকার ফারজানা রহমান জোর দিচ্ছেন পারিবারিক ও স্বশিক্ষার উপর। একইসাথে আইনের কঠোর প্রয়োগও চান তিনি। তিনি বলেন, সময় এখন শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনের। অন্যান্য বিষয়ের মতো শিক্ষা ব্যবস্থায় যৌনশিক্ষা অন্তর্ভুক্তের পরামর্শ দেন তিনি। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের এই বিষয়ে শিক্ষাদানের জন্য শিক্ষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়ারও কথা বলেন খন্দকার ফারজানা রহমান। তবে, তরুণ প্রজন্মের ওপর আস্থা হারাতে চান না, অপরাধ বিজ্ঞানের এই শিক্ষক। তার আশা, বিকৃত রুচির বিলুপ্তি ঘটিয়ে, সহিংসতাহীন স্বশিক্ষিত প্রজন্মে নিরাপদে বেড়ে উঠবে প্রতিটি প্রাণ।