আজ ৪ সেপ্টেম্বর, কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের জন্মদিন। ৭০ পেরিয়ে ৭১ বসন্তে পা দেওয়া এই স্বর্ণঝরা কণ্ঠের অধিকারী জন্মদিন উপলক্ষে দেশের একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন।
এই ‘গানের পাখি’ বলেন, এবারের জন্মদিন নিয়ে বিশেষ কোনো পরিকল্পনাই নেই। বাসা থেকে কোথাও যাচ্ছি না। বাসাতেই সময় কাটবে আমার। এখন দেশের যে পরিস্থিতি, এ পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই আসলে জন্মদিন উদযাপনের আগ্রহ নেই। সময়টা অন্য রকম। এখন দেশ গড়ার সময়, নতুন করে দেশটা ঠিকঠাকভাবে গড়ে তোলার সময়। সবকিছু স্বাভাবিক হোক, তখন না হয় নিজের জন্মদিন উপলক্ষে কিছু একটা করা যেতে পারে। আপাতত সবার দোয়া চাই, আল্লাহ যেন সুস্থ রাখেন, ভালো রাখেন। আর সবাই যেন ভালো থাকেন নিজ নিজ পরিবারের সঙ্গে আমিও এ দোয়া করি।
কোকিলকণ্ঠী এই শিল্পী আরও বলেন, জন্মদিন এলেই আব্বা-আম্মা ও আমার বোনদের খুব মিস করি। কিন্তু তারপরও সবার ভালোবাসা পেয়ে আমি সে কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করি। ঈদ এলে যেমন নতুন জামা-কাপড় লুকিয়ে রাখতাম, জন্মদিন এলেও তাই করতাম। জন্মদিনে এসব কাপড় বের করতাম। আনন্দটাই ছিল অন্য রকম। পরিবারের মধ্যকার সে আনন্দটা মিস করি।
সাবিনা ইয়াসমিন এক পারিবারিক সুরের আবহাওয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা লুৎফর রহমান সরকারি চাকরি করলেও চমৎকার রবীন্দ্র সংগীত গাইতেন। মা মৌলুদা খাতুন মুর্শিদাবাদের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ কাদের বক্সের কাছে শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নিয়েছিলেন। সাবিনা ইয়াসমিন ওস্তাদ পিসি গোমেজের কাছে একটানা ১০ বছর শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নিয়েছেন। তবে মঞ্চে গান গাইতে উঠেছেন মাত্র ৭ বছর বয়সে।
১৯৬২ সালে ‘নতুন সুর’ চলচ্চিত্রে শিশু কন্ঠশিল্পী হিসেবে, রবীন ঘোষের সুরে একটি গান গেয়েছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন। ১৯৬৪ সালে তিনি বেতারে ছোটদের গানের অনুষ্ঠান ‘খেলাঘর’-এ নিয়মিত অংশ নিতেন। ১৯৬৭ সালে ‘আগুন নিয়ে খেলা’ ছবিতে প্লে-ব্যাক শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে সাবিনা ইয়াসমিনের। এরপর কেবলই এগিয়ে চলা।
চলচ্চিত্রে তার গাওয়া গানের সংখ্যা কয়েক হাজার। পেয়েছেন একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কার। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ১৪ বার। আরটিভি স্টার অ্যাওয়ার্ড ২০১৮-এ আজীবন সম্মাননা পান সাবিনা ইয়াসমিন। তার প্রাপ্তির ঝুলিতে রয়েছে এইচ এম ভি'র ডবল প্লাটিনাম ডিস্ক, উত্তম কুমার পুরস্কার, বিশ্ব উন্নয়ন সংস্থা থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি, জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য পদক ও সম্মাননা।
সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গানের মধ্যে ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো’, ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই’, ‘চিঠি দিও প্রতিদিন, চিঠি দিও’, ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান’, ‘দুঃখ ভালবেসে প্রেমের খেলা’, ‘এ সুখের নেই কোন সীমানা’, ‘বরষার প্রথম দিনে’ ও ‘আমার ভাঙা ঘরে ভাঙা চালা’ উল্লেখযোগ্য। তার দেশাত্মবোধক গানের মধ্যে ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’, ‘সব ক’টা জানালা খুলে দাও না’, ‘ও আমার বাংলা মা’, ‘মাঝি নাও ছাড়িয়া দে’, ‘সুন্দর সুবর্ণ’ ও ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতা’ উল্লেখযোগ্য।