সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন আজ রবিবার সারা দেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (রাত ১০টা) রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে এসব ঘটনায় মোট ৯২ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর নিচে তুলে ধরা হলো :
লহ্মীপুর : জেলার ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৮ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। সংঘর্ষে ৪০জন গুলিবিদ্ধসহ উভয়পক্ষের অন্তত শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসময় জেলা আওয়ামীলীগের অস্থায়ী কার্যালয় ও এমপি নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন এবং সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন টিপুর বাসভবনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
সিরাজগঞ্জ : এক দফা আন্দোলনে সিরাজগঞ্জ জেলা শহর, রায়গঞ্জ, হাটিকুমরুল, শাহজাদপুর ও এনায়েতপুরে ছাত্র-জনতার সাথে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে এনায়েতপুর থানার ১৩ জন পুলিশ সদস্য, সদরে একজন শিক্ষার্থী, দু’জন যুবদল কর্মী ও রায়গঞ্জে একজন ইউপি চেয়ারম্যান ও চারজন আওয়ামী লীগ নেতাসহ ২১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে অন্তত শতাধিক। এছাড়াও সংসদ সদস্য চয়ন ইসলাম, ড. জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী ও সাবেক এমপি ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্নার বসতবাড়ী, আওয়ামী লীগ অফিস, জেলা পরিষদ কার্যলয়, রেলওয়ে স্টেশনের কাউন্টার, ভূমি অফিস, কোর্ট চত্বরের কয়েকটি স্থাপনায় আগুন দেয়া হয়েছে।
বিভাগীয় অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) বিজয় বসাক জানান, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলায় ১৩ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছে। তবে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে এই কর্মকর্তা জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি নাম-পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি।
রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমান জানান, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় এখন পর্যন্ত ১২ জন পুলিশ সদস্যের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ৫জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার কাজ এখনো চলমান রয়েছে। রবিবার দুপুর ১২ টার দিকে ১২ থেকে ১৪ হাজার দুষ্কৃতিকারী থানা ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। এসব দুষ্কৃতকারীরা হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশের উপর জঙ্গি কায়দায় হামলা চালায়। থানার আরো অনেক পুলিশ সদস্যের খোঁজ পাওয়া যায়নি। উদ্ধার কাজে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ কাজ করছে।
হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় রিপন শীল (২৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নাইম আশরাফ চৌধুরী। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে অন্তত শতাধিক।
নিহত রিপন শীল হবিগঞ্জ শহরের অনন্তপুর এলাকার রতন শীলের পুত্র। এছাড়া অন্য আহতদের উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার (ওসি) নূরে আলম জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহতের খবর শুনেছি। এ ছাড়া ভাঙচুর করা হয়েছে হবিগঞ্জ- ৩ আসনের এমপি আবু জাহিরের বাসভবন।
শেরপুর : কোটাবিরোধীদের একদফা দাবির অসহযোগ আন্দোলনে শেরপুরে পুলিশের গাড়িচাপায় আন্দোলনকারী তিনজন নিহত হয়েছেন। আজ রবিবার বিকেল ৫টার দিকে শহরের কলেজ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- মাহবুবুল ইসলাম (২৪)। তিনি সদর উপজেলার চৈতনখিলা বটতলা এলাকার মিরাজ আলীর পুত্র। অপর দুজনের নাম পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. হুমায়ূন আহমেদ নূর। এ ঘটনায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
নরসিংদী : নরসিংদীতে ব্যাপক সংঘর্ষে অন্তত ছয়জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। জেলার মাধবদীতে আন্দোলনকারী ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ নেতাসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দু’জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন জেলার সাবেক স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মনিরুজ্জামান ও ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন শাহীন।
ঢাকা : রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত আটজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ধানমন্ডি থানাধীন ঝিগাতলায় সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি রাজধানীর হাবিবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর দ্বিতীয় বর্ষ শিক্ষার্থী।
ফার্মগেট এলাকায় তাহেদুল ইসলাম নামে (২২) একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। সে মহাখালী ডিওএইচএস পরিষদের ডি-৮ কনসালটেন্টের জুনিয়র অফিস সহকারী হিসেব পার্টটাইম চাকরি করতেন। তাহেদুল কবি নজরুল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে এবং অর্নাসে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। উত্তরায় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নিহত হয়েছেন ষাটোর্ধ্ব আনোয়ারুল ইসলাম (প্রকৌশলী)। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য ছিলেন বলেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন।
কারওয়ান বাজার এলাকায় সংঘর্ষে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির রমিজ উদ্দিন (২৪) নামের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। সন্ধ্যার দিকে ঢামেকে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। নিহতের গ্রামের বাড়ি রংপুর। বর্তমানে হাজারীবাগের রায়েরবাজার এলাকায় থাকত। তার বাবার নাম মো. রাহেল। দুই ভাইয়ের মধ্যে রমিজ উদ্দিন ছোট ছিল।
বিকেলে গুলিস্তান থেকে জহির উদ্দীন নামে এক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় স্যার সলিমুলল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বাড়ি কুমিল্লা বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। প্রাথমিকভাবে তাঁর বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।
এছাড়া সন্ধ্যার দিকে এসে অজ্ঞাত আরেক যুবকের (২৫) মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেখে গেছেন কয়েকজন। তবে কোথা থেকে তাকে আনা হয়েছে এবং কীভাবে মৃত্যু হয়েছে জানাতে পারেননি মেডিক্যাল সংশ্লিষ্টরা।
সাভারে অজ্ঞাত এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তার বয়স ২০ থেকে ২৫ বছর হবে বলে জানা গেছে। তার পিঠে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছেন ধামরাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. আহমেদুল হক। ধামরাইয়ে গুলিবিদ্ধ যুবক বিপ্লব (৩০) ঢাকার শহীদ সোহরাওয়াদী মেডিক্যাল কলেজে মারা গেছে।
জয়পুরহাট : রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে জয়পুরহাট জেলা শহর। সংঘর্ষে মেহেদী হাসান (২১) নামে এক আন্দোলনকারী ও জেলা যুবলীগের সাবেক সহ সভাপতি রফিকুজ্জামান রহিম (৫২) গুলিবিদ্ধ হয়। আশংকাজনক অবস্থায় বগুড়ায় নেয়ার পথে তারা মারা যান। এছাড়াও জয়পুরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. সামসুল আলম দুদুসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, আন্দোলনকারী ও সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।
বগুড়া : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন ও সরকারের পদত্যাগের একদফা কর্মসূচির অংশ হিসেবে বগুড়া শহরের সাতমাথাসহ বিভিন্ন স্থান অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা। এসময় পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মাঝে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় । এসব ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে ২জন বগুড়া সদর ও একজন দুপচাঁচিয়া উপজেলার বাসিন্দা।
নিহত পাঁচ জনের মধ্যে একজন মুনিরুল ইসলাম মনির (২২) তিনি বগুড়ার কাহালু উপজেলার বীরকেদার এলাকার বাসিন্দা। অপরজন জিল্লুর রহমান (৪৫) তিনি বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাসিন্দা। এছাড়া দিনাজপুরের হিলির সেলিম (৪৫) নামের একজন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সে বগুড়ার হরিগাড়ি এলাকায় বসবাস করতো। অজ্ঞাত আরো দুই জন মারা গেছেন।
মুন্সিগঞ্জ : মুন্সিগঞ্জে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।
রবিবার সকাল পৌনে ১০টা থেকে দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মো. আবু হেনা জামাল। তিনি বলেন, সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। এদের মধ্যে দু’জন মৃত ছিল। তাদের বয়স ২২-২৫ বছর। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
কেরানীগঞ্জ : ঢাকার কেরানীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিকে ঘিরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে রবিবার দুপুরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের প্রধান ফটকে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় অফিসের ভেতর আটকা পড়ে আওয়ামী লীগ কর্মী মো. ইফতি (৩২) নামের একজন নিহত ও প্রায় ১৫ জন আহত হন।
রংপুর : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে আওয়ামী লীগের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় মহানগরের পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারাধন রায় হারাসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
রবিবার দুপুরে নগরীর সিটি বাজার এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। নিহত পাঁচজনই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মী। এসময় বেশ কয়েকজন আহত হয়।
মাগুরা : মাগুরায় বিএনপি ও ছাত্রদলের সাথে পুলিশের মুখোমুখী সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হয়েছেন। মাগুরা শহরে ২ জন ও মহম্মদপুর উপজেলায় ২ জন নিহত হয়েছে। এ সময় পুলিশসহ দেড়শতাধিক আহত হয়েছে। রবিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে অসহযোগ আন্দোলনকে ঘিরে শহরের পারনান্দুয়ালী-ঢাকারোড এলাকায় বিক্ষোভকারীরা অতর্কিতে পুলিশের উপর হামলা চালালে পুলিশ গুলি চালালে জেলা ছাত্রদলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বি (৩০) নিহত হয়। দুপুরে আবারো বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে সেখানে ফরহাদ হোসেন (২৯) নামে এক যুবদলকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। এছাড়া মহম্মদপুর উপজেলায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষে সুমন শেখ (২০) ও আহাদ বিশ্বাস (২২) জন নিহত হয়েছে। এসব মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন জেলা বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক এ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান।
পাবনা : অভিযোগ উঠেছে পাবনায় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের মিছিল থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর চালানো গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। আজ রবিবার পাবনার খেয়াঘাট মোড়ে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ওপর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের মিছিল থেকে গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এসময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৩৫ জন। এরপর বিক্ষোভকারীরা এক আওয়ামী লীগ নেতার গাড়ি এরপর গাড়ি পুড়িয়ে দেন।
কুমিল্লা : কুমিল্লায় ব্যাপক সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে দেবিদ্বারে একজন নিহত হয়েছেন। রবিবার দুপুর দেড়টার দিকে দেবিদ্বার পৌর এলাকার বানিয়াপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ওই ব্যক্তির নাম আবদুল্লা রুবেল (৩৩)। তিনি পেশায় গাড়িচালক। তিনি বারেরা এলাকার ইউনুছ মিয়ার ছেলে।
এদিকে ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানায় ঢুকে এক পুলিশ কনস্টেবলকে পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত কনস্টেবলের নাম মো. এরশাদ আলী। এ ছাড়া কোটবাড়িতে এক যুবককে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই যুবককে রবিবার (৪ আগস্ট) বিকেলে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বরিশাল : বরিশালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় এক আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হয়েছেন। তার নাম টুটুল চৌধুরী (৬০)। তিনি বরিশাল মহানগরীর ১২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। রবিবার দুপুরে হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ফেনী : ফেনীতে অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থকদের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আট আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন। আজ দুপুর থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে চলা সংঘর্ষে এ ঘটনা ঘটে। ফেনী ২৫০ শয্যা জেলারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সিলেট : সিলেটের গোলাপগঞ্জে গুলিতে পৃথক স্থানে তিনজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে পুলিশ সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। রবিবার বেলা আড়াইটার দিকে গোলাপগঞ্জ পৌর এলাকার ধারাবহরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে দুজন ও এর আগে ঢাকা দক্ষিণ এলাকায় একজন নিহতের ঘটনা ঘটে।
দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. শাহিন আহমদ। তারা হলেন- ধারাবহর গ্রামের মো. মকবুল আলীর ছেলে ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন (৪৩) ও উপজেলার শিলঘাটের বাসিন্দা সানি আহমদ (১৮)। এর আগে, সংঘর্ষকালে গুলিতে নাজমুল ইসলাম নামে একজন নিহত হন। তিনি উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুদর্শন সেন।
কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জে ব্যাপক সংঘর্ষে ৫ নিহত ও ২ শতাধিক আহত হয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর বাসাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। সৈয়দ টিটুর বাসায় দেওয়া আগুনে পুড়ে মারা গেছেন দুজন। এছাড়া এক যুবলীগ নেতাকে হাত-পা বেঁধে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পাশাপাশি কিশোরগঞ্জে আন্দোলনকারী একজন স্ট্রোক করে এবং বাজিতপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন একজন।
ভোলা : ভোলায় আন্দোলনকারীরা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর করে আগুন দিয়েছে। পরে তারা স্বেচ্ছাসেবকলীগ, শ্রমিকলীগ কার্যালয় জ্বালিয়ে দেয়। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জেলা শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে, ভোলা সদর নতুনবাজার এলাকায় সংঘর্ষের মাঝে পরে গুলিতে জসিম নামে এক পথচারী নিহত হয়েছেন। পরে তার লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা।
কক্সবাজার : রবিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার সংঘর্ষে এক কিশোর নিহত হয়েছে। তার বয়স আনুমিনক ১৬ বছর। তবে নিহতের পরিচয় জানাতে পরেনি পুলিশ।