রবিবার ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
 
শিরোনাম: পোশাক কারখানায় অস্থিরতার নেপথ্যে কী?       শিপইয়ার্ডে বিস্ফোরণে দগ্ধ একজনের মৃত্যু, আশঙ্কাজনক ৭       ব্যাংক থেকে টাকা তোলার সীমা উঠছে আজ       পুরোনো সিলেবাসে ছাপানো হবে ৯ম-১০ম শ্রেণির বই       মিয়ানমার থেকে আরও ৫০০ রোহিঙ্গা পালিয়ে এলো বাংলাদেশে       অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তগুলো যৌক্তিক: ফখরুল       কেমন করছে অন্তর্বর্তী সরকার, সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ      


হানিয়ার মৃত্যুতে মধ্যপ্রাচ্যে কী প্রভাব পড়বে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট, ২০২৪, ৬:১৩ PM

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ছিলেন ইসমাইল হানিয়া। দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বুধবার (৩১ জুলাই) তেহরানে গুপ্তহামলায় তিনি নিহত হন। বিশ্বজুড়ে চলছে এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিক্রিয়া। স্বাধীনতার দাবিতে আমৃত্যু লড়ে যাওয়া এ নেতার মৃত্যুতে হামাস কী করবে, ইরানের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে এবং মধ্যপ্রাচ্যে এর কী প্রভাব পড়বে এ নিয়ে জলছে জল্পনা।

ইরানের ভূমিকা কেমন হতে পারে
২০১৮ সালে ইসমাইল হানিয়াকে ‘সন্ত্রাসী’ তকমা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। এরপর থেকে কাতারে অবস্থান করছিলেন হানিয়া। সেখান থেকে তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে ইসরাইলের সঙ্গে হামাসের চলমান পরোক্ষ আলোচনা তত্ত্বাবধান করছিলেন। মঙ্গলবার ইরানের সাবেক রাষ্ট্রপতি ইবরাহিম রাইসির মৃত্যুর পর নতুন রাষ্ট্রপতি মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ইরানের আমন্ত্রণে তিনি তেহরানে গিয়েছিলেন বলে জানায় হামাস। হানিয়া ছিলেন সুন্নি মুসলিম। আর ইরান শিয়া অধ্যুষিত দেশ। এমন প্রেক্ষিতে ইরানের ভূমিতে হানিয়ার মৃত্যুতে নানামুখী চাপে পড়েছে দেশটি। 

ইতোমধ্যে হানিয়ার মৃত্যুর জন্য তিনদিনের জাতীয় শোক পালন করছে ইরান। অন্যদিকে দিয়েছে হানিয়ার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণাও। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনি সরাসরি ইসরায়েলে হামলার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের জরুরি বৈঠকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস ও ইসরায়েলে গণমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল। তেহরান ইউনিভার্সিটির ওয়ার্ল্ড স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক ফোয়াদ ইজাদি বলেছেন, তেহরানে হামাস প্রধানের মৃত্যু ইরানের জন্য খুবই বেদনাদায়ক। একটি দেশের রাজধানীতে যখন তাদেরই পদস্থ কোনো কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়, তবে বড় ধরনের ধাক্কা না লেগে পারে? তাই সম্ভবত ইরান প্রতিক্রিয়া দেখাতে বাধ্য। ইরানের শীর্ষ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি হানিয়ার জানাজার ইমামতি করেন। এরপর তিনি বলেন, হানিয়া ছিলেন আমাদের রাষ্ট্রয় মেহমান। আমাদের ভূখণ্ডে এসে আমাদের প্রিয় মেহমানকে হত্যার সাজা ইসরায়েলকে পেতেই হবে। তারা আমাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছে। এমতাবস্থায় আমরা চুপ করে বসে থাকতে পারি না। আমাদেরও ইসরায়েলে সরাসরি হামলা চালানোর অধিকার আছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বহু বছর ধরে হামাসকে সমর্থন করছে ইরান। তেহরানে হানিয়ার মৃত্যু ইরানকে ধাক্কা দেওয়ার মতো ঘটনা। সবচেয়ে বড় কথা, নতুন প্রেসিডেন্টের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের সময় এটা ঘটলো। এটাও দেখানো হলো, ইরান তার অতিথিকেই নিরাপত্তা দিতে পারে না।ইরানের মাটিতে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে। তাই ইরান এখন প্রত্যাঘাত করতে চাইবে।

প্রতিশোধের ঘোষণা হামাসের
এদিকে সংগঠনের প্রধান ইসমাইল হানিয়ার হত্যার জবাব দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। হামাসের রাজনৈতিক শাখার সদস্য মুসা আবু মারজুক এক বিবৃতিতে ঘোষণা দেন-‘আমাদের নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করাটা একটি কাপুরুষোচিত কাজ এবং এর জবাব দেয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা একটি জিহাদ। এতে হয় বিজয় হবে, নয়তো শহীদ হতে হবে।’
হামাসের সিনিয়র কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি বলেছে, ভাই হানিয়াকে হত্যার মাধ্যমে ইসরাইল আমাদের লক্ষ্য অর্জনে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছে। তবে আমি নিশ্চিত করে বলছি তারা তাদের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হবে। তিনি আরো বলেন, হামাস একটি আন্দোলন, একটি প্রতিষ্ঠান। এটি ব্যক্তিনির্ভর কোনো সংগঠন নয়। ত্যাগের মহিমায় হামাস এই পথেই চলবে এবং বিজয় আমাদেরই হবে। 
ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আল-হিন্দ বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ড শুধু ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ এবং হামাসের জন্য হুমকি নয়, এটি ইরানের জন্যও একটি সতর্কবার্তা। হানিয়াকে হত্যা করে ইসরাইল সফল হতে পারবে না। এতে তেল আবিবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আরো প্রকট হবে এবং তারা পতনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে কেমন প্রভাব পড়বে
হামাসের শীর্ষ নেতার এই হত্যাকাণ্ডে বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যকে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি সর্বাত্মক যুদ্ধের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। সাধারণত এক্সিস অব রেসিস্ট্যান্স বা প্রতিরোধের অক্ষ বলে পরিচিত শক্তি হামাস, হিজবুল্লাহ এবং হুথিরা যা করে তার লক্ষ্য থাকেই একদিকেই। গাজায় ইসরাইলের বর্বরোচিত আগ্রাসনের পর একযোগে ছায়া যুদ্ধ চালাচ্ছিলো সব পক্ষ। ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যুতে তা আরও জোরদার হবে। ঝাঁপিয়ে পড়বে ইসরাইলের বিরুদ্ধে। ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অফ ফরেন রিলেশনসের মধ্যপ্রাচ্য-গবেষক কেলি পেটিলো বলেছেন, হিজবুল্লা নেতা শুকুর ও হামাস নেতা হানিয়ার হত্যা ‘এই দুই হত্যাকাণ্ডের প্রভাব গোটা অঞ্চলের উপর পড়বে।’ তিনি বলেন, ‘ঠিক কী প্রভাব পড়বে তা এখনই বলা কঠিন, তবে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকা উচিত।’ 

হানিয়া হত্যার তীব্র সমালোচনা করেছে তুরস্কও। দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই হত্যার মধ্য দিয়ে আবার এটা স্পষ্ট হয়েছে যে ইসরাইলের নেতানিয়াহু সরকারের শান্তি প্রতিষ্ঠার কোনো ইচ্ছা নেই। এই ঘটনা নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হানিয়া হত্যাকাণ্ড বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যকে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি সর্বাত্মক যুদ্ধের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।

এটি লেবাননের ঘটনাপ্রবাহেও প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টার কম সময়ে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র সংগঠনের দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতার হত্যাকাণ্ডে স্বাভাবিকভাবে মধ্যপ্রাচ্য নতুন করে সংঘাতের মুখে পড়ার আশঙ্কায় বিশেষজ্ঞরা।

কে হবেন হামাসের পরবর্তী নেতা
এই সংকটময় পরিস্থিতিতে কে নিজেকে প্রকাশ্যে এনে ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়বেন তা নিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা। এমন পরিস্থিতিতে উঠে এসেছে কয়েকজন শীর্ষ নেতার নাম। একজন হলেন গাজা উপত্যকায় হামাস আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার। তিনি মাজদ নামে পরিচিত হামাসের নিরাপত্তা পরিষেবার প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৬২ সালে জন্ম নেওয়া এই নেতা অনেকবার গ্রেফতার হয়েছেন এবং চারবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও দেয়া হয় তাকে। তবে হামাস-ইসরাইল বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে তিনি মুক্তি পান এবং গাজায় ফিরে আসেন। আরেকজন হলেন- হামাসের সামরিক শাখা ইজ আল-দিন আল-কাসেম ব্রিগেডের নেতা মোহাম্মদ দেইফ। তিনি এমন একজন ছায়া ব্যক্তিত্ব যিনি ফিলিস্তিনিদের কাছে ‘দ্য মাস্টারমাইন্ড’ এবং ইসরাইলিদের কাছে ‘দ্য ক্যাট উইথ নাইন লাইভস’ নামে পরিচিত। এছাড়াও আছেন মোহাম্মদ দেইফের ডান হাত নামে পরিচিত মারওয়ান ইসা। তিনি ইজ আল-দিন আল-কাসেম ব্রিগেডসের ডেপুটি কমান্ডার-ইন-চিফ এবং হামাসের রাজনৈতিক ও সামরিক ব্যুরোর সদস্য। আরও রয়েছেন খালেদ মেশাল আবু আল-ওয়ালিদ। হামাসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এর রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য তিনি। আরও আছেন মাহমুদ জাহার। ১৯৯২ সালে ইসরাইল থেকে মারজ আল-জুহুরে নির্বাসিত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনিও ছিলেন। ইসরাইল ২০০৩ সালে গাজা শহরের রিমাল এলাকায় জাহারের বাড়িতে এফ-১৬ বিমান থেকে অর্ধটন ওজনের একটি বোমা ফেলে তাকে হত্যার চেষ্টা করে। হামলায় তিনি সামান্য আহত হলেও তার বড় ছেলে খালেদের মৃত্যু হয়।

ইসমাইল হানিয়া ১৯৬৩ সালে গাজার আল-শাতি শরণার্থীশিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। তরুণ বয়সে গাজা ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম ব্রাদারহুডের ছাত্র শাখার সদস্য ছিলেন ইসমাইল হানিয়া। ১৯৮৭ সালে হামাসের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তিনি সংগঠনটির সদস্য। ২০১৭ সালে ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান নির্বাচিত হন হানিয়া। তখন থেকে আমৃত্যু তিনি হামাসের প্রধান ব্যক্তি ছিলেন। তিনি বরাবরই ইসরাইলি হামালার লক্ষ্যবস্তু ছিলেন। তাই এ হামলাও ইসরাইলের হবে বলেই সবার ধারণা। যদিও হত্যার নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানের পুরো তথ্য এখনো অস্পষ্ট। ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড আইআরজিসি তাদের এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হানিয়ার মৃত্যু হয়েছিল রাত ২টায় এবং বাইরে থেকে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে তাকে হত্যা করা হয়েছিল। এ সময় তিনি উত্তরাঞ্চলে যুদ্ধের অভিজ্ঞ সেনাদের জন্য তৈরি বিশেষ বাসস্থানগুলোর একটিতে অবস্থান করছিলেন। তবে ইরান-সংযুক্ত লেবানিজ নেটওয়ার্ক আল-মায়াদিন জানিয়েছে, ‘হানিয়াকে হত্যায় ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্রটি ইরানের ভেতর থেকে নয়, অন্য দেশ থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।’







আরও খবর


 সর্বশেষ সংবাদ

কারাগারে দিলীপ: নকল হীরার সিন্ডিকেটের খোঁজে গোয়েন্দারা
গাজায় ইসরায়েলি নৃশংসতা চলছেই, নিহত প্রায় ৪১ হাজার
ইউএস ওপেনের নতুন রানি সাবালেঙ্কা
স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের কারণ জানালেন বাদশা
পোশাক কারখানায় অস্থিরতার নেপথ্যে কী?
আরো খবর ⇒


 সর্বাধিক পঠিত

কালীগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহিদী মিছিলে হামলা, বিএনপি নেতা খুন!
কালীগঞ্জে বিএনপি নেতাকে পিটিয়ে হত্যা: দলীয় কোন্দলের জেরে সংঘর্ষ
ভালুকায় একটি কারখানায় অজ্ঞাত রোগে ৬০ শ্রমিক অসুস্থ ,কারখানা ছুটি ঘোষনা
নরসিংদী কারাগার থেকে লুট হওয়া শটগান ও চায়নিজ রাইফেলের ম্যাগজিন উদ্ধার
লুট হওয়া মটর সাইকেল এসআই কাছে হস্তান্তর করল সাবেক চেয়ারম্যান সোহেল
প্রকাশক: এম এন এইচ বুলু
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মাহফুজুর রহমান রিমন  |   উপদেষ্টা সম্পাদক : রাজু আলীম  
বিএনএস সংবাদ প্রতিদিন লি. এর পক্ষে প্রকাশক এম এন এইচ বুলু কর্তৃক ৪০ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বুলু ওশেন টাওয়ার, (১০তলা), বনানী, ঢাকা ১২১৩ থেকে প্রকাশিত ও শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ফোন:০২৯৮২০০১৯-২০ ফ্যাক্স: ০২-৯৮২০০১৬ ই-মেইল: spnewsdesh@gmail.com