জলাবদ্ধতা নিরসন, মশা নিধনসহ বেশকিছু জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত ৬ হাজার ৭৬০ কোটি ৭৪ লাখ টাকার বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৫০৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়ন ব্যয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এবারের বাজেটে মশা নিধনে ব্যবহৃত কীটনাশক ক্রয়ে ৪০ কোটি টাকা, ফগার, হুইল, স্প্রে-মেশিন পরিবহন ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা এবং মশক নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রপাতিতে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। অর্থাৎ মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ৪৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৩১ জুলাই) নগর ভবনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস এ বাজেট ঘোষণা করেন।
এ সময় করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, প্যানেল মেয়র ও ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শহিদ উল্লাহ মিনু, অর্থ ও সংস্থাপন বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ সেলিমসহ কাউন্সিল, বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
বাজেটের উল্লেখযোগ্য তথ্য তুলে ধরে মেয়র জানান, জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ১০০ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়া নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে প্রধান সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে ১১৭ কোটি টাকা ধরা হয়। লিখিত বক্তব্যে মেয়র জানান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সামগ্রিক প্রচেষ্টা এবং সবার ঐকান্তিক সহযোগিতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমরা ১ হাজার ৬১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হয়েছি। ফলে, অনেক উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়নের জন্য আমাদেরকে প্রকল্পনির্ভর হতে হয়নি। নিজস্ব অর্থায়নেই বিগত অর্থবছরে আমরা ৪৫৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকার উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছি। আগামীদিনে আরও বৃহৎ পরিসরে আমরা ঢাকাবাসীকে সেবা প্রদান করতে চাই। সেজন্য আমাদেরকে আরও বেশি আর্থিক সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। তাই, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ১ হাজার ৫০৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে গৃহ কর বাবদ ৫৬০ কোটি, বাজার সালামী বাবদ ২০০ কোটি, বাণিজ্য অনুমতি বাবদ ১৬৫ কোটি, বাজার ভাড়া বাবদ ৪০ কোটি, বিজ্ঞাপন কর বাবদ ২০ কোটি, বাস-ট্রাক প্রান্তের ইজারা হতে ৩০ কোটি, অস্থায়ী পশুর হাট ইজারা বাবদ ২৫ কোটি, ইজারা (টয়লেট, পার্কিং, কাঁচাবাজার, ভাগাড় ইত্যাদি) বাবদ ৩০ কোটি, রাস্তা খনন ফিস বাবদ ৬০ কোটি, সম্পত্তি হস্তান্তর কর খাতে ১৫০ কোটি, মোবাইল টাওয়ার হতে আয় বাবদ ১০ কোটি, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসেতু হতে ১১ কোটি, সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্রের ভাড়া বাবদ ১০ কোটি টাকা আয় করা যাবে বলে আমরা আশা করছি।
এছাড়া সরকারি মঞ্জুরি (থোক) ও বিশেষ মঞ্জুরি বাবদ ৭০ কোটি এবং ডিএনসিসি, সরকারি ও বৈদেশিক সহায়তামূলক প্রকল্প খাতে ৪ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রাপ্তির প্রত্যাশা করছি। সে লক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এগিয়ে চলার পথে সরকারের যথাযথ আর্থিক সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন মেয়র তাপস।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। উল্লেখযোগ্য ব্যয়ের খাতগুলোর মধ্যে বেতন ভাতা বাবদ ২৭০ কোটি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পানি ও গ্যাস বাবদ ৯০ কোটি ৭৫ লাখ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ৩৩ কোটি ১০ লাখ, সরবরাহ বাবদ ৫৭ কোটি ৫ লাখ, ভাড়া ও কর খাতে ৭ কোটি ২৫ লাখ, কল্যাণমূলক ব্যয় বাবদ ১৭ কোটি ৪২ লাখ, বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা বাবদ ৪ কোটি ৪৫ লাখ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বাবদ ২৫ কোটি ২ লাখ টাকা ব্যয় হবে বলে বাজেটে প্রাক্কলন করা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য আমরা ৬ হাজার ৭৬০ কোটি ৭৪ কোটি টাকার বাজেট প্রাক্কলন করা হয়েছে।