রবিবার ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
 
শিরোনাম: বিদায় ২০২৩ স্বাগত ২০২৪        নতুন বইয়ের ঘ্রাণে মাতবে ৩ কোটি ৮১ লাখ শিক্ষার্থী        জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে বিএনপির চিঠি        বিএনপির নেতাকর্মীরা এবার নৌকায় ভোট দেবে : তথ্যমন্ত্রী        ড. মঈন খানের সঙ্গে এনডিআই-আইআরআই পর্যবেক্ষক দলের বৈঠক        ‘অসুস্থ’ রিজভীকে খুঁজছে ডিবি, শিগগিরই গ্রেপ্তার        সবার আগে নিউজিল্যান্ড ও কিরিবাতিতে নববর্ষের উল্লাস শুরু       


সিনেমার মানুষ হিসেবে সবসময় কালারফুল-স্টাইলিশ থাকার চেষ্টা করি: আহসান উল্লাহ মনি
রাজু আলীম
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৩, ৮:৩৯ PM

আহসান উল্লাহ মনি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের এক পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তাঁর হাত ধরেই আমাদের চলচ্চিত্র একটি শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছিল। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম এবং গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অবদান রেখেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন। রমনা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চ এর ভাষণ ক্যামেরাবন্দী করার ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী এই মানুষটি রাজনীতির অঙ্গণেও গঠনমূলক ভূমিকা রেখে প্রশংসা অর্জন করেছেন।

চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শন ব্যবসায় তার অনন্য অবদান স্বর্ণক্ষরে লেখা থাকবে। এক সময় তার প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশের সাড়া জাগানো অসংখ্য সিনেমা। রাজধানী ঢাকা শহর থেকে শুরু করে ঢাকার বাইরেও চলচ্চিত্র প্রদর্শক হিসেবে তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং এক্ষেত্রে আকাশছোঁয়া সাফল্য অর্জন তাকে এক জীবন্ত কিংবদন্তীতে পরিণত করেছে। রাজধানীর কেন্দ্রস্থল কাকরাইলে অবস্থিত রাজমণি ও রাজিয়া প্রেক্ষাগৃহ দুটি এদেশের সিনেমা দর্শকদের কাছে একসময় তীর্থকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। যেখানে সারাবছরই প্রতিটি শো দর্শক সমাগমে হাউজফুল থাকতো।

বর্তমানে এদেশের অগ্রসরমাণ পর্যটন শিল্পেও তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা ব্যবসায়ী। রাজধানীর কেন্দ্রস্থল কাকরাইলে অবস্থিত ‘রাজমণি ঈশা খা’ হোটেলটি গত কয়েকদশক ধরে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে সাশ্রয়ী, অত্যন্ত বিলাসবহুল এবং আন্তর্জাতিক মানের যাবতীয় সেবায় সমৃদ্ধ হয়ে উজ্জ্বল অবস্থানটি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। একটি আন্তর্জাতিক মানের পাঁচ তারকা হোটেল হিসেবে অতীত ঐতিহ্য ধরে রেখে উন্নত সেবার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে বেশ ভালো অবস্থানে টিকে থাকার কৃতিত্ব এই অসাধারণ মেধাবী, বুদ্ধিমান পরিশ্রমী এবং বিচক্ষণ মানুষটির। অত্যন্ত বর্ণাঢ্য, আকর্ষণীয়, বিলাসী জীবনযাপনের কারণে সবার কাছে বিশেষভাবে পরিচিত এবং জনপ্রিয় তিনি। সত্তোরোধ বয়সী মানুষটিকে এখনও দুর্দান্ত স্মার্ট এবং আকর্ষণীয় মনে হয়। তাঁর নিজস্ব কিছু স্টাইল, ডিজাইনের সাজ-পোশাকের বদৌলতে আলাদা একটি ধারা সৃষ্টি করতে পেরেছেন। এর মাধ্যমে বিশেষ আইডেন্টি বা সিগনেচার তৈরি করেছেন। তিনি এমন একজন সৌভাগ্যবান সফল ব্যক্তিত্ব যেখানে যে কাজে হাত দিয়েছেন তাতেই অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছেন। বহুমুখী গুণের অধিকারী, পরিশ্রমী, দেশপ্রেমিক এই মানুষটি এই বয়সেও চুপচাপ বসে নেই। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েননি। পরিপূর্ণ প্রাণ শক্তিতে সক্ষম, সবল এই অসাধারণ মানুষটির মুখোমুখি হয়েছিলাম সম্প্রতি। অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায় বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছি আমরা। যেখানে তাঁর অসাধারণত্ব, সক্ষমতা এবং প্রগতিশীল চিন্তা-ভাবনার উজ্জ্বল প্রকাশ ঘটেছে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প এবং ব্যবসা অঙ্গণের একজন কিংবদন্তী পুরুষ আহসান উল্লাহ মনির সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতার চুম্বকাংশ তুলে ধরা হলো।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজু আলীম

প্রশ্ন: কেমন আছেন?
আহসান উল্লাহ মনি: ভালো আছি। আলহামদুলিল্লাহ।

প্রশ্ন: কতটুকু ভালো?
আহসান উল্লাহ মনি: পুরোপুরি ভালো আছি।

প্রশ্ন: আপনাকে দেখে আমরা সবসময় আলোড়িত হই, মুগ্ধ-চমকিত হই। এই বয়সেও আপনি ড্যাম স্মার্ট। আপনি সবসময় এতোটা কালারফুল, বর্ণাঢ্য, উজ্জ্বল থাকেন কীভাবে?

আহসান উল্লাহ মনি: থ্যাংকস ফর ইয়্যুর কমপ্লিমেন্টস। আমি সিনেমা জগতের মানুষ। সবসময়ে গ্ল্যামার নিয়ে কাজ করেছি। নিজেকেও তাই সবসময় কালারফুল, ব্রাইট রাখার চেষ্টা করি। নিজের কাছেও ভালো লাগে এই ব্যাপারটা।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প এবং ব্যবসা-বাণিজ্য অঙ্গণে আপনি একজন পুরোধা ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে এসেছেন। আপনার রাজনৈতিক জীবনও অত্যন্ত সফল। আপনি এক বীর মুক্তিযোদ্ধা। একাত্তরের রণাঙ্গনের সৈনিক। এই বয়সেও আপনি সক্রিয়, সক্ষম। একজন টগবগে যুবকের মতো শক্তি উদ্যম, মনোবল, সাহস, ইচ্ছাশক্তি ধরে রেখেছেন প্রবলভাবে। আপনার এই কৃতিত্ব ও সাফল্যের মূলমন্ত্র কী?

আহসান উল্লাহ মনি: আমি অনেক কম বয়স থেকেই চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলাম। আমি যে ঐতিহ্যবাহী পরিবার থেকে এসেছি সেখানে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব এবং সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। তাদেরকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। তাদের দেখে দেখে অনেক কিছু রপ্ত করেছি। সেই ১৯৬৭ সাল থেকে আমি চলচ্চিত্র অঙ্গণে পদচারণা করছি। আমার ভগ্নিপতি ছিলেন একজন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র প্রযোজক। তার বিভিন্ন চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে আমি তরুণ বয়সেই জড়িয়ে পড়েছিলাম। তখন সদ্য ম্যাট্রিক পাস করে কলেজে ঢুকেছি। জগন্নাথ কলেজে পড়তাম। তখন সেটা ছিল সব আন্দোলন সংগ্রামের সুতিকাগার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সেই উত্তাল দিনগুলোতে সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে সাহচার্য লাভের সৌভাগ্য হয়েছে আমার। তাঁর স্নেহ, ভালোবাসা পেয়েছি। মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছি। প্রাণপন লড়াই করেছি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাও আমাকে অনেক ভালো জানেন। তাঁর সঙ্গেও আমার খুব ভালো যোগাযোগ রয়েছে। আমি চাইলে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশ নিয়ে মন্ত্রী-এমপি হতে পারতাম। কিন্তু তা করিনি। দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমি চলি। সব কাজ করি। ব্যবসা-বাণিজ্য করে আজ দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছি। আমি কলকারখানা, গার্মেন্টসহ নানা ধরনের ব্যবসায় নিজেকে জড়াতে পারতাম। কিন্তু তা করিনি। শিল্প-কলকারখানা করলে দেশে পরিবেশন দুষণ হতো। কিন্তু যে ব্যবসা করেছি তা পরিবেশকে দুষণ করেনি। সিনেমা নির্মাণ করেছি, সিনেমা হল করেছি। যা সবাইকে বিনোদনের পাশাপাশি শিক্ষামূলক অনেক কিছু দিয়ে যাচ্ছে। আমি রাজমণি ঈশা খাঁর মতো আন্তর্জাতিক মানের পাঁচতারকা হোটেল ব্যবসা সাফল্যের সাথে পরিচালনা করে যাচ্ছি কয়েক দশক ধরে। এর মাধ্যমে দেশের পর্যটন শিল্পে অবদান রাখছি। দেশে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জিত হচ্ছে। আমার সবগুলো কাজেই নিজের অর্জিত অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, যোগ্যতাকে কাজে লাগাতে আপ্রাণ চেষ্টা করি। যা আমার জন্য সাফল্য বয়ে আনে। উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে আমি বিশেষভাবে অংশগ্রহণ করেছি। বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্তি করেছি। আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে।

প্রশ্ন: চলচ্চিত্রশিল্পে আপনার যোগ দেওয়ার শুরুটা সম্পর্কে বলুন?
আহসান উল্লাহ মনি: আমি একটি অভিজাত রাজনৈতিক ঐতিহ্যবাহী ব্যবসায়ী পরিবারের মানুষ। আমাদের পরিবারের অনেকেই রাজনীতির অঙ্গণের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। আমার ভগ্নিপতি একজন শিল্পপতি ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি সিনেমা নির্মাণের সঙ্গেও গভীরভাবে জড়িত ছিলেন প্রযোজক হিসেবে।আমি তাকে দেখে অনেক কিছুই শিখেছি। আমি ম্যাটিক পাশ করেই সিনেমা লাইনে জড়িত হয়েছিলাম। এসব বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের আগের কথা। স্বাধীনতার পর আমি সিনেমাসহ অন্যান্য ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছিলাম তরুণ বয়সেই। অল্প বয়সেই অনেক বড় সাফল্য অর্জন করেছি। অন্যরা যখন শুরু করে তখন আমি ব্যবসা-বাণিজ্য শেষ করেছিলাম। তখন আমার বয়স মাত্র ৪৭ ছিল। তবে শেষ বলতে পুরোপুরি আর ছাড়তে পারিনি ব্যবসা। এখনও করছি।

প্রশ্ন: আপনি ব্যবসা-বাণিজ্য, চলচ্চিত্র নির্মাণ রাজনীতি যেখানে হাত দিয়েছেন সেখানেই অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছেন। সব ক্ষেত্রেই আপনি একজন সফল মানুষ। এ সম্পর্কে বলুন।
আহসান উল্লাহ মনি: আসলে সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেক মানুষকে কিছু কাজের জন্য নির্ধারিত করে দেন। সবাই তো সব কাজ করে না কিংবা করতে পারে না। সৃষ্টিকর্তা আমাকে ব্যবসা-বাণিজ্যে নিয়োজিত করার জন্য এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আমি এ ক্ষেত্রে সাফল্যের নানা ধাপ অতিক্রম করে আজকের অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছি।

প্রশ্ন: রাজনৈতিক অঙ্গনেও আপনি একজন কৃতিমান ব্যক্তি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজনীতিতে নিজেকে তেমনভাবে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে না আপনাকে। আপনি চাইলে এ ক্ষেত্রেও অনেক দূর যেতে পারতেন?

আহসান উল্লাহ মনি: এটা ঠিক বলেছেন। আমি চাইলে এমপি-মন্ত্রী হতে পারতাম। আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারও বেশ সমৃদ্ধ এবং উজ্জ্বল ছিল। আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ ছিলাম। উনসত্তরে গণঅভ্যুত্থানে আমার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। মুক্তিযুদ্ধ করেছি। সংগ্রাম আন্দোলন করে বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্ত করেছি। স্বাধীনতার পর শেখ ফজলুল হক মনি আমাকে যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত করে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অজানা অনেক ইতিহাস আমি জানি। যা অন্যরা জানে না। আমি এ সম্পর্কে অজানা অনেক তথ্য তুলে ধরে একটি বই লিখেছি। যা পড়লে আপনারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজানা তথ্য সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন। আমি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করছি। যেখানে তাঁর মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা সংগ্রাম, আন্দোলনের বিশদ বিবরণ তুলে ধরছি। এটি আমার স্বপ্নের একটি কাজ। ছবিটি নির্মাণে ৫০০ কোটি টাকা বাজেট রেখেছি। আমার এ চলচ্চিত্রটি হবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি পরিপূর্ণ সৃষ্টি। যা এদেশের একটি অন্যতম ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে। আমি রাজনীতিতে এখনও রয়েছি। এমপি, মন্ত্রী হলে অনেকের সঙ্গে আমার নানা বিষয়ে মতবিরোধ, মতদ্বৈততা সৃষ্টি হতো। কারণ, আমি মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে যা জানি তা অনেকের কাছে অজানা। এ কারণে আমি সে পথে এগোইনি। এখন যেমন আছি, নিজের সম্মান মর্যাদা নিয়ে বেশ ভালোই আছি।

প্রশ্ন: আপনি রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে কাকরাইলের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গায় রাজমনি ও রাজিয়ার মতো দুটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিনেমা হল প্রতিষ্ঠা করে এদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে অসামান্য ভূমিকা রেখেছিলেন। চলচ্চিত্র প্রযোজনা, পরিচালনার পাশাপাশি প্রদর্শক হিসেবে আপনার আত্মপ্রকাশের নেপথ্যে কী কাজ করেছিল।


আহসান উল্লাহ মনি: রাজমনি ও রাজিয়া সিনেমা হল দুটি প্রতিষ্ঠার আগে ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন জেলায় নরসিংদী, কুমিল্লায়, নারায়ণগঞ্জে আমার আরও বেশ কিছু সিনেমা হল ছিল। ঢাকার আনন্দ, ছন্দ, সঙ্গীত প্রভৃতি সিনেমা হলগুলোও ছিল আমার খুব কাছের নিজস্ব মানুষজনের। তখন দেশে সিনেমা হলের সংখ্যা খুব বেশি ছিলো না। আর সিনেমা তৈরি হতো কম। আমি সবাইকে সংগঠিত করে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে বিকশিত হতে ভূমিকা রেখেছি। আমার নেতৃত্বে সারাদেশে সিনেমা হলের সংখ্যা বেড়ে ১৫০০ পর্যন্ত পৌঁছেছিল। প্রতিবছর মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির সংখ্যাও ছিল অনেক বেশি।

প্রশ্ন: বর্তমানে আমাদের চলচ্চিত্র নির্মাণের হার অনেক কমে গেছে। সিনেমার দর্শক কমে গেছে। ফলে বেশির ভাগ সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে আগের সেই জৌলুস নেই। জমকালো ভাবটি আর নেই সিনেমা শিল্পে। এর পেছনে কারণ কী বলে মনে করছেন?

আহসান উল্লাহ মনি: এখন ডিজিটাল ক্যামেরায় সিনেমার শুটিং হয়। এসব সিনেমা টিভি পর্দায়, মোবাইলে দেখার জন্য উপযোগী। সিনেমা হলে এসব সিনেমা দেখতে দর্শক আসেনা। এখন আগের মতো বড় ক্যামেরায় সিনেমার শুটিং হচ্ছেনা। যে কারণে এসব সিনেমা দর্শক মনে বিশেষ কোনো আবেদন রাখতে পারছেনা। আর সিনেমা হলো একই সঙ্গে শিক্ষামূলক ও বিনোদনমূলক একটি মাধ্যমে। যিনি সিনেমা নির্মাণ করবেন তাকে একজন শিক্ষকের মতো হতে হবে। অনেক কিছু জানতে হবে। পড়াশোনা করে আসতে হবে। দর্শক পর্দায় কী দেখতে চায়- সে সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে পুরোপুরিভাবে। দর্শককের রুচি ও চাহিদার কথা বিবেচনা না করে ছবি নির্মাণ করলে তা দেখতে তো আগ্রহী হবেনা কেউ। এসব কারণে এখন বেশিরভাগ ছবিই দর্শক দেখছেনা।

প্রশ্ন: আপনি তো এখনও চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে ভীষণভাবে জড়িত। আপনার বর্তমান কাজ সম্পর্কে বলবেন।

আহসান উল্লাহ মনি:  সোনারগাঁওয়ে আমার নিজস্ব একটি ফিল্ম স্টুডিও রয়েছে। সেখানে সিনেমা নির্মাণের যাবতীয় আয়োজন রয়েছে। শুটিং ফ্লোর, আলাদা ক্যামেরা ও অন্যান্য সরঞ্জাম রয়েছে। আমি কয়েকবছর আগে একসঙ্গে ২৫টি সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলাম আমার নিজস্ব প্রযোজনায়। আমি সর্বশেষ ‘ক্ষুদিরামের ফাঁসি’ নামে একটি সিনেমা নির্মাণ করেছি। যা বর্তমানে ইউটিউবে চলছে। এ ছবিটি দর্শকদের মধ্যে বেশ ঝড় তুলেছে। ইউটিউবে এ পর্যন্ত ১২ কোটি দর্শক আমার ‘ক্ষুদিরামের ফাঁসি’ ছবিটি দেখেছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমি ৫০০ কোটি টাকা বাজেটে যে ছবিটি তৈরি করছি তা একটি মাস্টারপিস সিনেমা হবে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এর মধ্যে যে ছবিগুলো হয়েছে সেখানে মুক্তিযুদ্ধের কথা তেমনভাবে আসেনি সেখানে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের নানা বিষয় এসেছে। আমি আমার ছবিটিতে বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য অবদানের কথা তুলে ধরছি। যা এ পর্যন্ত কেউ করেনি কিংবা করতে পারেনি।


প্রশ্ন: বর্তমানে আপনার ব্যবসা-বাণিজ্য কেমন চলছে।
আহসান উল্লাহ মনি: ভালো চলছে। আমার রাজমনি ঈশা খাঁ হোটেল একটি আন্তর্জাতিক মানের পাঁচ তারকা হোটেল হলেও এখানে তুলনামূলক কম খরচে লোকজন থাকতে পারেন। ফলে এখানে সারাবছর লোকজনের ভিড় থাকে। দেশি-বিদেশি মানুষ আসে। তবে করোনা মহামারীর পর থেকে বিদেশিদের আনগোনা অনেকটা কমে গেছে। আমি বর্তমানে রাজমনি, রাজিয়া সিনেমা হলের জায়গাটিতে নতুন আরেকটি হোটেল নির্মাণ করছি। যার নাম হবে ‘গিটার’। সেখানে মার্কেট থাকবে। সিনেপ্লেক্স থাকবে। এই সিনেপ্লেক্সে বেশিরভাগ সময়ে আমার প্রযোজিত, পরিচালিত ছবি প্রদর্শিত হবে। এছাড়াও আমি আমার এলাকায় ‘হারিকেন’ নামে আরেকটি হোটেল নির্মাণের পরিকল্পনা করেছি। এসবগুলোই আন্তর্জাতিক মানের পাঁচ তারকা হোটেল। যা দেশের পর্যটন শিল্পে ও বিনোদন শিল্পে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

প্রশ্ন: আপনি নিজস্ব উদ্যোগে সম্রাট শাহজাহানের তাজমহলের আদলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে মিনি তাজমহল প্রতিষ্ঠা করেছেন। যার নির্মাণশৈলী, অসাধারণ নির্মাণ সবাইকে প্রচণ্ডভাবে আকৃষ্ট করেছে। সবাই বারবার ছুটে যায় তা দেখার জন্য। এই চমৎকার একটি স্থাপনা নির্মাণের পেছনে উদ্দেশ্য কী? এটা কী আপনার জীবনসঙ্গীনির প্রতি ভালোবাসার নিদর্শনা না অন্য কিছু?

আহসান উল্লাহ মনি: আমার জীবনসঙ্গীনীর প্রতি ভালোবাসা, প্রেম তো রয়েছেই। এটা তো চিরন্তন ব্যাপার। তাজমহলে নির্মাণ করেছি মৃত্যুর পর আমাদের কবরটা যেন সেখানে হয়। সে জন্য জায়গা নির্ধারণ করে রেখেছি। সাধারণত অন্য জায়গায় কবর হলে ছেলে-মেয়েরা যায় না। অনেকটা অবহেলিত অবস্থায় থাকে কবর। অযত্নে থাকে। তাজমহলে আমাদের কবর হবে। যাতে সবাই সেখানে যেতে পারে, দেখতে পারে সবসময়।

প্রশ্ন: আপনার জীবনে এতো বড় সাফল্য অর্জনে কার অনুপ্রেরণা লাভ করেছেন, আপনার আদর্শ কে এক্ষেত্রে?

আহসান উল্লাহ মনি: আমি ছোটবেলা থেকে আমার বড় বোনের স্বামীকে দেখে বড় হয়েছি। তিনি ছিলেন অনেক বড় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তাকে দেখে অনেক কিছু শিখেছি আমি।

প্রশ্ন: বর্তমানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। আপনার চোখে তাঁর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মূল্যায়ন করুন।

আহসান উল্লাহ মনি: বর্তমানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ সঠিকভাবে এগিয়ে চলেছে। এটাই হলো বাংলাদেশের জন্য আসল নেতৃত্ব। শেখ হাসিনা তাঁর অসাধারণ নেতৃত্ব ও বিচক্ষণতায় সারাদেশে উন্নয়নের মহা জোয়ার সৃষ্টি করেছেন। গত ১৫ বছরে দেশ যেভাবে এগিয়েছে। আগামী ১০ বছর যদি এভাবে উন্নয়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে তাহলে উন্নয়নের জন্য আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে বলে মনে হয়না। দেশে রাস্তাঘাট, সেতু বিভিন্ন বড় বড় স্থাপনা নির্মাণের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির ভিত্তি দিন দিন আরও শক্তিশালী হচ্ছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে আরো সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে আগামি দিনগুলোতে- আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।

প্রশ্ন: নতুন প্রজন্মকে নিয়ে আপনার চিন্তাভাবনা কী?

আহসান উল্লাহ মনি: নতুন প্রজন্মকে নিয়ে আমার অনেক প্রত্যাশা। তারাই তো হাল ধরবে আগামিতে সবকিছুর। কিন্তু আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা নানাভাবে অন্যান্য দেশ থেকে পিছিয়ে আছে এখনও। অনেক বিষয়ে তাদের পর্যাপ্ত জ্ঞান নেই, প্রশিক্ষণ নেই, বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই। যে কারণে বিদেশে গিয়ে তাদের অদক্ষ শ্রমিকের কাজ করতে হয় কম বেতনে। আমাদের তরুণ প্রজন্মকে নানা বিষয়ে অভিজ্ঞ হয়ে উঠতে হবে। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী নিজেদের যোগ্য করে তুলতে হবে। যাতে তারা সব ধরনের কাজ করতে পারে।

আর একটি বিষয় নিয়ে আলোকপাত করতে চাই। আমি মনে করি, এদেশের তরুণ-তরুণীদের এইচএসসি পড়ার সময় বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা দরকার। এটা যুদ্ধ করার জন্য নয়। সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হলে তারা বাস্তবজীবন সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবে। ফলে লেখাপড়া শেষে কর্মজীবনে তারা কোনোভাবেই ঠেকবেনা। সব কিছুই তাদের জন্য সহজতর হবে। পৃথিবীর বহু দেশেই তরুণ-তরুণীদের ছাত্রজীবনেই সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ বাধ্যতামূলক। পাকিস্তান শাসনামলে আমরা যখন তরুণ বয়সী ছিলাম তখনও এই সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক ছিল। কেউ যদি সেই প্রশিক্ষণে যেতে অস্বীকার করতো তাহলে তাকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাওয়া হতো।

প্রশ্ন: আপনার পরিবারের ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা বলুন। আপনার সন্তানদের কথা বলুন। তারা কী করছে?

আহসান উল্লাহ মনি:  আমার দুই সন্তান। এক পুত্র , এক কন্যা। তারা লেখাপড়া করেছে বিদেশে। আমার পুত্রটি এখন ব্যবসা-বাণিজ্য দেখছে। আমার নাতিও বেশ বড় হয়েছে। তাকে রাজনীতির তালিম দিচ্ছি। আগামিতে তার রাজনীতিতে আসার ইচ্ছে রয়েছে। আমাদের যে ব্যবসা-বাণিজ্য তা আগামি দিনে টিকিয়ে রাখতে এবং এর বিকাশ ঘটাতে হলে তাদের যোগ্য ও অভিজ্ঞ হয়ে উঠতে হবে। আমি তাদেরকে সেভাবে পারঙ্গম করে তুলছি। ইনশাআল্লাহ, তারা আগামিতে সবকিছুর হাল ধরবে শক্ত হাতে।

প্রশ্ন: আপনি আমাদের অনেক মূল্যবান সময় দিয়ে নিজের অনেক জানা-অজানা বিষয় তুলে ধরেছেন। আমরা এ জন্য অনেক কৃতজ্ঞ। ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনাকে।







আরও খবর


 সর্বশেষ সংবাদ

বিদায় ২০২৩ স্বাগত ২০২৪
নতুন বইয়ের ঘ্রাণে মাতবে ৩ কোটি ৮১ লাখ শিক্ষার্থী
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে বিএনপির চিঠি
আগৈলঝাড়ায় বই উৎসবে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই বিতরণ
কালিহাতীর আফজালপুর চরে নৌকার বিশাল সভা
আরো খবর ⇒


 সর্বাধিক পঠিত

কালীগঞ্জে ২ ভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা
স্বাধীনতার গান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে দিতে চান লেনিন
গাজীপুরে প্রেমিকাকে গলা কেটে হত্যা প্রেমিক আটক
এই প্রথম মৃত্যুবরণ কারী সকল ইপিএসকর্মী সহ প্রবাসীদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল
প্রবাসী ভিআইপি ক্লাবের বিলেতে পথযাত্রা : পিঠা উৎসব ও সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান
প্রকাশক: এম এন এইচ বুলু
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মাহফুজুর রহমান রিমন  |   উপদেষ্টা সম্পাদক : রাজু আলীম  
বিএনএস সংবাদ প্রতিদিন লি. এর পক্ষে প্রকাশক এম এন এইচ বুলু কর্তৃক ৪০ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বুলু ওশেন টাওয়ার, (১০তলা), বনানী, ঢাকা ১২১৩ থেকে প্রকাশিত ও শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ফোন:০২৯৮২০০১৯-২০ ফ্যাক্স: ০২-৯৮২০০১৬ ই-মেইল: spnewsdesh@gmail.com