নির্বাচন কমিশন থেকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর জানানো হয়েছে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্যতা-অযোগ্যতার কথা। সেখানে ঋণ খেলাপিসহ বেশ কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে যা থাকলে ভোটে প্রার্থী হতে পারবেন না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি।
ইসি সচিবালয় থেকে জারি করা একটি পরিপত্রে নির্বাচনের বিস্তারিত তফসিল ঘোষণার পাশাপাশি সংসদ সদস্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রে যোগ্যতা-অযোগ্যতার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। পরিপত্রে সংসদ সদস্য প্রার্থীর যোগ্যতা ও অযোগ্যতার ক্ষেত্রে সংবিধানের বিধান এবং গণপতি নিযুক্ত আদেশের বিধানগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। এর অনেকগুলো বিষয়ে স্পষ্টীকরণের জন্য ব্যাখ্যাও তুলে দেওয়া হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তফসিল বুধবার (১৫ নভেম্বর) ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির ঘোষণা অনুযায়ী ভোট অনুষ্ঠিত হবে ৭ জানুয়ারি। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর।
রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার বা থাকার যোগ্যতা-অযোগ্যতা সংক্রান্ত সংবিধানের ৬৬(১)(২) অনুচ্ছেদে ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ১২(১) অনুচ্ছেদে বিধান রয়েছে। তা ছাড়া সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদের “প্রজাতন্ত্রের কর্ম” ও “সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ”-এর ব্যাখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। অনুচ্ছেদ ১২-এর উপধারা (ড) অনুযায়ী কোম্পানির পরিচালক বা ফার্মের অংশীদার কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহীত কোনো ঋণ বা তার কোনো কিস্তি মনোনয়নপত্র দাখিলের দিনের আগে পরিশোধে ব্যর্থ হলে নির্বাচনে প্রার্থী হতে অযোগ্য হবেন।
আরও যে কারণে অযোগ্য হবেন প্রার্থীরা, কৃষি কাজের জন্য গৃহীত ক্ষুদ্র কৃষিঋণ ব্যতীত, মনোনয়নপত্র দাখিলের দিনের আগে ব্যাংক থেকে গৃহীত কোনো ঋণ বা তার কোনো কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে নির্বাচনে প্রার্থী হতে অযোগ্য হবেন। সেই সাথে উপদফা (ঢ) অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের দিনের আগে প্রদেয় সরকারি টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি বা অন্য কোনো সেবা প্রদানকারী সংস্থার বিল পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে নির্বাচনে প্রার্থী হতে অযোগ্য হবেন। উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মেয়রের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত/আধা-স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত অফিস/প্রতিষ্ঠানের বা করপোরেশন অথবা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, কর্তৃপক্ষ এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনসমূহে চুক্তিভিক্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য পদ্ধতিগতভাবে পদত্যাগ করতে হবে।
নির্ধারিত ফরমে প্রস্তাবকারী সমর্থনকারী স্বাক্ষরিত মনোনয়ন প্রস্তাব পৃথক মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করতে হবে। মনোনয়নে সম্মতি প্রদান করেছেন এবং তার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার বা সদস্য থাকার কোনও অযোগ্যতা নেই মর্মে ঘোষণা দিতে হবে। কোনও প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারী অন্য কোনও মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবকারী বা সমর্থনকারী স্বাক্ষর করেননি বলে ঘোষণা দিতে হবে। প্রার্থী তিনটির বেশি নির্বাচনি এলাকার জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি বলে ঘোষণা দিতে হবে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে, নির্বাচনি এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন সংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা (তবে কোনও স্বতন্ত্র প্রার্থী আগে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে এর দরকার হবে না)। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের পক্ষে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের পদাধিকারীর স্বাক্ষরিত মনোনয়নের প্রমাণিক (নিবন্ধিত দল প্রাথমিকভাবে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে পারবে)।
প্রার্থীর স্বাক্ষরিত একটি হলফনামা, যেখানে অর্জিত সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের সত্যায়িত অনুলিপি, বর্তমানে তিনি কোনও ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত আছেন কি না। অতীতে তার বিরুদ্ধে করা কোনও ফৌজদারি মামলার থাকলে তার রায়, ব্যবসা বা পেশার বিবরণী। আয়ের উৎসগুলো, নিজের বা নির্ভরশীলদের পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী, অতীতে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হলে ভোটারদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি কতগুলো পূরণ হয়েছে তার তথ্য, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে একক বা যৌথভাবে বা নির্ভরশীলদের নামে ঋণ থাকলে তার তথ্য, রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র যুক্ত করতে হবে। কোনও ব্যক্তি একই নির্বাচনি এলাকার জন্য একাধিক মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে বৈধ হিসেবে প্রাপ্ত একটি মনোনয়নপত্র বাদে অন্যগুলো বাতিল হয়ে যাবে। মনোনয়নপত্র রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার উভয়ের কাছে দাখিল করা যাবে।