রবিবার ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
 
শিরোনাম: বিদায় ২০২৩ স্বাগত ২০২৪        নতুন বইয়ের ঘ্রাণে মাতবে ৩ কোটি ৮১ লাখ শিক্ষার্থী        জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে বিএনপির চিঠি        বিএনপির নেতাকর্মীরা এবার নৌকায় ভোট দেবে : তথ্যমন্ত্রী        ড. মঈন খানের সঙ্গে এনডিআই-আইআরআই পর্যবেক্ষক দলের বৈঠক        ‘অসুস্থ’ রিজভীকে খুঁজছে ডিবি, শিগগিরই গ্রেপ্তার        সবার আগে নিউজিল্যান্ড ও কিরিবাতিতে নববর্ষের উল্লাস শুরু       


বেঁচে থাকলে শেখ হাসিনার প্রেরণার উৎস হতেন শেখ রাসেল
মানিক লাল ঘোষ
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৩, ৫:৪৪ PM

বঙ্গবন্ধুর অতি আদরের নিষ্পাপ দুরন্ত প্রাণবন্ত শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে আজ  পিতার মতোই  বাঙালি জাতির ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতেন। নেতৃত্ব দিতেন পৃথিবীর নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের মুক্তির দূত হয়ে। আর  উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় ছায়াসঙ্গী হয়ে বড়বোন শেখ হাসিনার স্বজন হারা কষ্ট ও দেশের মানুষ নিয়ে তার রাতজাগা চিন্তার সহযোদ্ধা হতেন।  
শেখ রাসেল শুধু আজ এক আবেগ ও অনুভূতির নাম। এক মায়াবী মুখের প্রতিচ্ছবি। ফোটার আগেই ঝরে যাওয়া এক রক্ত গোলাপের কলি। ঝরে না গেলে আজ যে গোলাপ গন্ধ বিলাতো। দেশ ও সমাজ গঠনে বোনের পাশে থেকে রাখতেন ইতিবাচক ভূমিকা। অনুপ্রেরণার উৎস হতেন বড় বোনের সকল মানবিক কর্মকান্ডের। সেই হতভাগ্য শিশুটি জন্মের সময় পাশে পায়নি পিতাকে। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার আগেও দেখা পায়নি পিতার।

১৯৬৪ সাল। এক অস্থির সময় পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে। লড়াই আর যুদ্ধের উত্তেজনামুখর চারদিক। সমগ্র পাকিস্তান জুড়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ডামাডোল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আইয়ুব খানের বিরূদ্ধে অংশ নেয়া প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ফাতেমা জিন্নাহর নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত। ১৯৬৪ সালে ১৮ অক্টোবর নির্বাচনী প্রচারণায় চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু। ঐ দিনই ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বাড়িটি আলোকিত করে পৃথিবীর বুকে এক নতুন অতিথির আগমন। রাজনৈতিক ব্যস্ততায় প্রিয় সন্তানের জন্মদিনেও পাশে থাকতে পারেননি বঙ্গবন্ধু। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রিয় লেখক ছিলেন বার্ট্রান্ড রাসেল। পৃথিবীর বিখ্যাত দার্শনিক, সাহিত্যে নোবেল পাওয়া বার্ট্রান্ড রাসেল পারমাণবিক যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলনের একজন বড় ধরনের নেতাও ছিলেন। বিশ্বশান্তি রক্ষায় বিশ্ব মানবতার প্রতীক হয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন এই মানবিক নেতা। বড় হয়ে নিজ শিশু পুত্র এমন মানবিকতার আলোয় আলোকিত হবে এই মহৎ আশায় বঙ্গবন্ধু তার কনিষ্ঠ সন্তানের নাম রেখেছিলেন শেখ রাসেল। শিশু রাসেলের জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে বাবাকে ছাড়া। রাজনৈতিক কারণে পিতা বঙ্গবন্ধুর জীবনের অধিকাংশ সময়ই কেটেছে কারাগারে। তাই পিতাকে বেশি সময় কাছে পায়নি শেখ রাসেল। বাবাকে কাছে না পেয়ে মা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকেই আব্বা বলে ডাকতেন শিশু রাসেল।

আদরের ছোট ভাই শেখ রাসেলকে নিয়ে অনেক বেদনাময় স্মৃতি এখনো দুচোখে অশ্রু ঝড়ায় বড় বোন শেখ হাসিনার দু’চোখে। নিজের লেখা ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’ বইয়ের ২১ পৃষ্ঠায় কারাগারে পিতার সাথে সাক্ষাত করতে যাওয়ার বিষয়ে শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘আব্বার সঙ্গে প্রতি ১৫ দিন পর আমরা দেখা করতে যেতাম। রাসেলকে নিয়ে গেলে ও আর আসতে চাইতো না। খুবই কান্নাকাটি করতো। ওকে বোঝানো হয়েছিলো যে আব্বার বাসা জেলখানা আর আমরা আব্বার বাসায় বেড়াতে এসেছি। আমরা বাসায় ফেরত যাব। বেশ কষ্ট করেই ওকে বাসায় ফিরিয়ে আনা হতো। আর আব্বার মনের অবস্থা কী হত তা আমরা বুঝতে পারতাম। বাসায় আব্বার জন্য কান্নাকাটি করলে মা ওকে বুঝাতেন এবং মাকে আব্বা বলে ডাকতে শেখাতেন। মাকেই আব্বা বলে ডাকতো।’ শিশু রাসেলের দুরন্তপনা, বাইসাইকেলে ঘুরে বেড়ানো, নানান আবদার এখনো কাঁদায় বড় বোন শেখ হাসিনাকে।

শেখ রাসেলের জন্মের যেমন ইতিহাস আছে, আছে নাম রাখারও ইতিহাস। তার চেয়ে করুণ ও বেদনার ইতিহাস আছে মাত্র ১১ বছর বয়সে মা বাবার লাশের পাশে ঘাতকের বুলেটে ঝাঝরা হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে সপরিবারে প্রাণ হারায় বঙ্গবন্ধু। ঘাতকদের নৃশংসতা থেকে রক্ষা পায়নি বঙ্গবন্ধুর শিশুপুত্র শেখ রাসেলও। নিজেকে বাঁচাতে সেন্টিপোস্টের পিছনে লুকিয়ে ছিলো ১১ বছরের এই শিশু। পরিবারের সবাইকে হত্যা করে ঘাতকরা খুঁজে বেড়ায় শেখ রাসেলকে। ঘাতকরা যখন তাকে খুঁজে পায় তখনও শেখ রাসেল জানেনা পৃথিবীতে আর বেঁচে নেই তার বাবা-মা। ভয় পেয়ে রাসেল কাঁদতে থাকে আর বলে ‘আমাকে মেরোনা, আমাকে মায়ের কাছে নিয়ে যাও’। ঘাতকরা টানতে টানতে নিয়ে যায় দোতলায়। বাবা মায়ের রক্তাক্ত লাশ দেখে চমকে উঠে সে, কাঁদতে থাকে অঝোরে। নিষ্ঠুর ঘাতকরা মায়ের কাছে নিয়ে গুলি করে ঝাঝরা করে দেয় শেখ রাসেলকে। রাসেলের নিথর দেহ ঢলে পড়ে মৃত মায়ের লাশের উপর। এমন নিষ্ঠুর হত্যাকান্ড পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। কী অন্যায় ছিলো শেখ রাসেলের? সেই দিন কোথায় ছিলো মানবতা? রাসেলের বুক ফাটা চিৎকার ও আর্তনাদের কোনো মূল্য ছিলোনা ঘাতকদের কাছে। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিশুপুত্র শেখ রাসেলের এই মৃত্যুর বেদনার ইতিহাস এখনো ঘাতক ও তাদের রাজনৈতিক উত্তরসূরীদের মনে কোনো রেখাপাত করতে পারেনি। বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করে ইনডেমিনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধের নামে শিশু রাসেল হত্যার বিচারও বন্ধ ছিলো।

মানবাধিকার রক্ষার নামে যারা বিভিন্ন সময়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরূদ্ধে আঙ্গুল তুলেন। সমালোচনায় তুলেন বিতর্কের ঝড়। আজ পর্যন্ত সেই সুশীল সমাজের কয়জন শিশু রাসেল হত্যাকারীদের বিরূদ্ধে কথা বলছেন? বিচার চেয়েছেন সেই হত্যাকান্ডের?
ইতিহাসের খলনায়ক জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা করে বিভিন্ন দূতাবাসে পদায়ন করেছেন খুনিদের। সেই জিয়াউর রহমানের বিচার দাবি করেছেন বা সমালোচনা করেছেন ক’জন মানবাধিকার নেতা? সেই দিন মানবাধিকার ছিলো প্রশ্নবিদ্ধ। বঙ্গবন্ধুর হত্যার নীল নকশাকারী ও নেপথ্য কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচনের আজ সময়ের দাবি, ঠিক তেমনি শিশু রাসেলের হত্যাকারীদের মুখোশ উন্মোচন করা হোক।
শিশু রাসেল আজ শিশু অধিকার আদায়ের প্রতীক। যখনই গণমাধ্যমে শিশু নির্যাতন বা হত্যার খবর প্রকাশিত হয়, আমাদের চোখে ভেসে ওঠে রাসেলের প্রতিচ্ছবি। আমরা চাই শিশুর অধিকার, তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য ও বাসযোগ্য পৃথিবীর নিশ্চিত করার পাশাপাশি শিশু নির্যাতন বন্ধের কার্যকরী পদক্ষেপ  নেবে সরকার। শিশুদের অধিকার আদায়ের প্রতীক হয়ে সবার মাঝে বেঁচে থাকুক শেখ রাসেল। শেখ রাসেলের শুভ জন্মদিনে এমন প্রত্যাশা সকলের।

মানিক লাল ঘোষ : ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-এর সহ সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য







আরও খবর


 সর্বশেষ সংবাদ

বিদায় ২০২৩ স্বাগত ২০২৪
নতুন বইয়ের ঘ্রাণে মাতবে ৩ কোটি ৮১ লাখ শিক্ষার্থী
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে বিএনপির চিঠি
আগৈলঝাড়ায় বই উৎসবে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই বিতরণ
কালিহাতীর আফজালপুর চরে নৌকার বিশাল সভা
আরো খবর ⇒


 সর্বাধিক পঠিত

কালীগঞ্জে ২ ভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা
স্বাধীনতার গান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে দিতে চান লেনিন
গাজীপুরে প্রেমিকাকে গলা কেটে হত্যা প্রেমিক আটক
এই প্রথম মৃত্যুবরণ কারী সকল ইপিএসকর্মী সহ প্রবাসীদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল
প্রবাসী ভিআইপি ক্লাবের বিলেতে পথযাত্রা : পিঠা উৎসব ও সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান
প্রকাশক: এম এন এইচ বুলু
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মাহফুজুর রহমান রিমন  |   উপদেষ্টা সম্পাদক : রাজু আলীম  
বিএনএস সংবাদ প্রতিদিন লি. এর পক্ষে প্রকাশক এম এন এইচ বুলু কর্তৃক ৪০ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বুলু ওশেন টাওয়ার, (১০তলা), বনানী, ঢাকা ১২১৩ থেকে প্রকাশিত ও শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ফোন:০২৯৮২০০১৯-২০ ফ্যাক্স: ০২-৯৮২০০১৬ ই-মেইল: spnewsdesh@gmail.com