প্রকাশ: বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৭:০০ PM
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সংবিধান সমুন্নত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সদ্য নিয়োগ পাওয়া প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। তিনি বলেন, সব বিভাগকে সক্রিয় রাখা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের লক্ষ্য। প্রধান বিচারপতি হিসেবে আমি সংবিধান সমুন্নত রাখার প্রতিজ্ঞা করেছি।
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মিলনায়তনে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতি ঢাকার আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল স্তম্ভ ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত, ন্যায়বিচার ও সামাজিক সমতার বাংলাদেশ। হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ থেকে শুরু করে পরবর্তী সব ধাপ এবং সর্বশেষ প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে সেই চেতনা রক্ষার প্রতিজ্ঞা করেছি। অতীতে নানা দায়িত্ব পালনকালে ন্যায়বিচার ও সমতা প্রতিষ্ঠায় এবং সংবিধান সমুন্নত রাখায় কাজ করেছি। প্রধান বিচারপতি হিসেবেও নিষ্ঠার সাথে সেই দায়িত্ব পালন করে যেতে চাই।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনানে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে জাতি দায়মুক্ত হয়েছে। আমি সেই বিচারে অংশ নিয়েছিলাম। তাদের সবধরনের আইনি সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে স্বচ্ছতার সাথে সেই বিচার সম্পন্ন করেছি। তাদের প্রত্যেকেই সেই সাজা ভোগ করেছে বা করছে। ১৯৭১ সালে ১২ বছর বয়সে যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখেছি। তাদের বিচার করতে গিয়ে ইতিহাস আরও নিবিড়ভাবে জেনেছি। ওবায়দুল হাসান তার বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও বীরদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। একইসঙ্গে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের কৃতি ব্যক্তিদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং ৫২ এর ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ সকল ইতিহাসে বৃহত্তর ময়মনসিংহবাসীর অবদান তুলে ধরেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, হাওর, জঙ্গল মইষের সিংয়ের ময়মনসিংহ থেকে একজন মানুষের প্রধান বিচারপতি পদে আসীন হওয়া অত্যন্ত গর্বের৷ কেননা অন্য অঞ্চলের মতো এই হাওর অধ্যুষিত অঞ্চলে শিক্ষা গ্রহণ সহজ ছিল না। কাঁদা, জঙ্গল, পানি পার হয়ে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়েছে। সেখান থেকে তিনি বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়েছেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চল একটি কৃষিনির্ভর এলাকা। কিন্তু আমাদের মেধা রয়েছে, যা ময়মনসিংহের মানুষ বারবার প্রমাণ করছে।
এ সময় তিনি আদালতের অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে বাংলা প্রচলনের দাবি জানান। একইসঙ্গে ভার্চুয়াল কোর্ট চালুতে প্রধান বিচারপতিকে উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে যেন ময়মনসিংহ অঞ্চলের উন্নয়ন সমুন্নত রাখতে পারি সেই লক্ষ্য রাখতে হবে। বৃহত্তর ময়মনসিংহের মানুষ গুণীজনকে সম্মানিত করে৷ আমরা আশা করি ভবিষ্যতে আরও কীর্তিমান মানুষ বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে দেশের সেবায় এগিয়ে আসবেন। সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফুল হাসান খসরু বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় যখন আসে তখন ওবায়দুল হাসান হাইকোর্টের আইনজীবী ছিলেন। সেই সরকারের নির্যাতন ও মামলার খড়গে যখন আমরা নিষ্পেষিত ছিলাম তখন তিনি বিনামূল্যে আওয়ামী লীগের নেতাদের মামলা লড়েছেন। প্রধান বিচারপতি হিসেবে তিনি বিচার বিভাগে নতুন যোগের সূচনা করবেন বলে আমার বিশ্বাস।
সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রধান বিচারপতি হিসেবে বৃহত্তর ময়মনসিংহের কৃতি সন্তান ওবায়দুল হাসানের নিয়োগ পাওয়া আমাদের জন্য গর্বের। তার জীবন অসংখ্য মহান কাজে পরিপূর্ণ। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে একাত্তরের দালালদের বিচারে কাজ করেছেন। তিনি ট্রাইবুনালে মোট ১১টি মামলার রায় দিয়েছেন। এসময় তিনি আদালতে মামলার জট কমাতে নতুন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। বাংলাদেশ পুলিশের ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হারুন উর রশীদ তার বক্তব্যে প্রধান বিচারপতিকে অভিনন্দন জানান। ময়মনসিংহের ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরে বৃহত্তর ময়মনসিংহের সন্তান ওবায়দুল হাসানের বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ পাওয়াকে পুরো এলাকাবাসীর গর্ব বলে উল্লেখ করেন।