প্রকাশ: সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৮:০৬ PM
সম্পত্তির লোভে শিশু ঐশী (৬) কে হত্যার পর লাশ বস্তাবন্ধি করে পুকুরে নিক্ষেপ করে আপন মামা ও খালু। সন্তানের হত্যাকান্ডের ঘটনা জেনেও ভাই ও বোন জামাইকে রক্ষা করতে ঐশীর মা বাদী হয়ে সাবেক স্বামী ও শ্বশুড়ের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। আদালতের নিদের্শে পুলিশ তদন্তে নেমে ঐশীর বাবা ও দাদাকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদের পর অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে ছেড়ে দেয়। পরে থানা এলাকা থেকে একটি অজ্ঞাত পরিচয়ের লাশ উদ্ধার হলে পুলিশ সনাক্ত করার জন্য ঐশীর মা, বাবা, দাদা, মামা ও খালুকে থানায় ডেকে নেয়। মৃত সন্তানের লাশ চিনতে পেরেও মা অস্বীকার করলে পুলিশ কৌশলে ঐশীর মায়ের ডিএনএ নিয়ে লাশের ডিএনএ’র সাথে ম্যাচ করার জন্য ল্যাবে প্রেরণ করে। দীর্ঘ ছয় মাস পর ডিএনএ টেষ্টে বেরিয়ে আসে ঐশীর পরিচয় ও হত্যার মূল রহস্য। এ ঘটনায় পুলিশ নিহত ঐশীর মামা ও খালুকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে।
থানা সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৮ বছর পূর্বে নরসিংদী সদরের পূর্ব ব্রাক্ষন্দীর কাঠাল বাগান এলাকার মন্টু বিশ্বাসের পুত্র সেন্টু বিশ্বাসের সাথে গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার মোক্তারপুর ইউনিয়নের ধনপুর গ্রামের মৃত দূর্গাচরণ বিশ্বাসের কন্যা রিমা রানীর বিবাহ হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে ঐশী নামে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। এক বছর পরে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে শিশু ঐশীকে নিয়ে তার মা পিতার বাড়ীতে চলে আসে এবং অন্যত্র বিবাহ করে সংসার করতে থাকে। ঐশীর মা রিমার নিঃসন্তান ফুফু অঞ্জলী রানী ঐশীর ভবিষ্যত চিন্তা করে তার সমস্ত সম্পত্তি লিখে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। এতে ঐশীর মামা বিজয় চরণ বিশ্বাস বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এতে কাজ না হলে গত ২২ মার্চ সকালে মামা বিজয় চরণ বিশ্বাস নিজ ঘরে গলা টিপে ঐশীকে হত্যা করে। পরে লাশ গুম করতে বিজয় চরণ তার অপর বোন জামাই ও ঐশীর খালু অসীত চরণ মিস্ত্রির সহযোগীতায় লাশ বস্তাবন্ধি করে সিএনজি (নং গাজীপুর মেট্রো-থ-১১-১৪০২) করে পার্শ্ববর্তী জামালপুর ইউনিয়নের মেন্দিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন পুকুরে ফেলে দেয়।
পরে নিজ সন্তানের নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনা জেনেও ভাই এবং বোন জামাইকে বাঁচাতে রিমা নিজে বাদী হয়ে ঐশীর বাবা ও দাদার নামে গত ২৩ মার্চ গাজীপুরের বিজ্ঞ আদালতে একটি মিথ্যা পিটিশন মামলা (নং ৩৮৮/২৩) দায়ের করে। ২৫ মার্চ মেন্দিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন পুকুরে একটি অজ্ঞাত লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা থানায় খবর দিলে পুলিশ ক্ষত বিক্ষত লাশটি উদ্ধার করে। পরে পুলিশ লাশের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য ঐশীর মা, বাবা, দাদা, মামা, খালু ও নানীকে থানায় ডেকে আনে। এক বছর বয়সে ঐশী তার মায়ের সাথে নানার বাড়ীতে চলে যাওয়ায় দীর্ঘদিন না দেখার কারণে তার বাবা ও দাদা লাশ দেখেও তাকে সনাক্ত করতে পারেনি। কিন্তু ঐশীর মা লাশ দেখে চিনতে পারলেও লাশটি তার মেয়ের নয় বলে জানায়। ২৬ মার্চ পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করে কালীগঞ্জ থানায় একটি ক্লু-লেস হত্যা মামলা (নং ১৬/২৩) দায়ের করে এবং আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম লাশটি বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করে। অধিকতর তদন্ত ও ময়নাতদন্তে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, অজ্ঞাত লাশটি ঐশীর এবং তাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু তার মা, মামা ও খালু বারবার অস্বীকার করায় পুলিশ বিপাকে পড়ে। পরে কৌশলে ঐশীর মায়ের ডিএনএ সংগ্রহ করে পুলিশ ঐশীর ডিএনএ’র সাথে মিলিয়ে দেখার জন্য ল্যাবে প্রেরণ করে। দীর্ঘ ছয় মাস পর ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল মিলে গেলে জানা যায় অজ্ঞাত লাশটি ঐশীরই ছিল। ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল হাতে পেয়ে পুলিশ পুনরায় ঐশীর মা, মামা, খালু ও নানীকে থানায় ডেকে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঐশীর মামা বিজয় চরণ বিশ্বাস সম্পত্তির লোভে ঐশীকে হত্যার পর লাশ গুম করার ঘটনা সবিস্তারে বর্ণনা করে। নিহত ঐশী ধনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ফায়েজুর রহমান জানান, ছয় মাস পূর্বে পুকুর থেকে এক অজ্ঞাত শিশুর লাশ উদ্ধার করি। পরে ঐশী নামে এক শিশু নিখোঁজের বিষয়ে থানায় একটি অভিযোগের সূত্র ধরে বাদীকে ডেকে এনে উদ্ধারকৃত লাশটি সনাক্ত করতে বলি। বাদী লাশটি ঐশীর নয় বলে জানায়। পরে আমরা ঐশীর মায়ের ডিএনএ সংগ্রহ করে ঐশীর ডিএনএসহ ল্যাবে পাঠাই। ল্যাব থেকে পাঠানো ফলাফলে জানতে পারি লাশটি ঐশীর। পরে ঐশীর মা, মামা, খালু ও নানীকে থানায় ডেকে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা ঐশী হত্যার ঘটনা স্বীকার করে। এ ঘটনায় নিহত ঐশীর মামা বিজয় চরণ বিশ্বাস ও খালু অসীত চরণ মিস্ত্রিকে আটক করে সোমবার দুপুরে গাজীপুর জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।