ইন্টারনেট প্রটোকল টেলিভিশনের (আইপি টিভি) নিবন্ধন ও নবায়ন ফি নির্ধারণ করেছে সরকার। নিবন্ধনের জন্য একবার ৫০ হাজার আর নবায়নে প্রতি বছর সরকারকে দিতে হবে ১৫ হাজার টাকা করে। অতিরিক্ত সময় নিলে গুনতে হবে বিলম্ব ফি।
সম্প্রতি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে আদেশ জারি করা হয়েছে। আদেশে জানানো হয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের আলোকে এক মাসের মধ্যে নিবন্ধন সম্পন্ন হলে নিবন্ধন ফি ৫০ হাজার টাকা। প্রতি বছর নিবন্ধন নবায়ন ফি ১৫ হাজার টাকা।
মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর তিন মাসের মধ্যে নিবন্ধন করা হলে দিতে হবে ১৫ হাজার টাকা বিলম্ব ফি। সেক্ষেত্রে মোট খরচ পড়বে ৬৫ হাজার টাকা। ছয় মাসের মধ্যে নিবন্ধন করা হলে গুনতে হবে ৩০ হাজার টাকা বিলম্ব ফি। সব মিলিয়ে খরচ পড়বে ৮০ হাজার টাকা। আর ছয় মাসের মধ্যে নিবন্ধন করা না হলে নিবন্ধনের অনুমোদন বাতিল হয়ে যাবে।
জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা-২০১৭ (সংশোধিত-২০২০) এ নিবন্ধনের জন্য একটি কমিশন গঠন করার কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, সব অনলাইন গণমাধ্যমকে কমিশনের কাছে নিবন্ধিত হতে হবে। তবে কমিশন গঠন না হওয়া পর্যন্ত সরকার বা সরকার থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো সংযুক্ত সংস্থা নিবন্ধনের দায়িত্ব পালন করবে। নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট বিধিবিধান অনুসরণ করে অনলাইন গণমাধ্যমকে নিবন্ধিত করবে।
জানা গেছে, এখন পর্যন্ত কোনো কমিশন গঠন করা হয়নি। সেজন্য নিবন্ধন সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করার জন্য তথ্য অধিদপ্তরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আদেশে জানানো হয়, জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা-২০১৭ (সংশোধিত-২০২০) অনুসারে সম্প্রচার কমিশন গঠন না হওয়া পর্যন্ত তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অনুমতিক্রমে তথ্য অধিদপ্তর আইপি টিভির নিবন্ধন কার্যক্রম (আবেদন গ্রহণ, নিবন্ধন ফি ও নবায়ন ফি আদায়) পরিচালনা করবে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আইপি টিভির অনুমোদনের জন্য ছয় শতাধিকের বেশি আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর প্রথম পর্যায়ে ১৪টি আইপি টিভিকে শর্ত সাপেক্ষে নিবন্ধনের অনুমতি দেয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।
নিবন্ধনের অনুমোদন পাওয়া ১৪টি আইপি টিভি হলো– মুভিবাংলা টিভি, জাগরণ টিভি, রূপসীবাংলা টিভি, হার্নেট টিভি, মাটি এন্টারটেইনমেন্ট টিভি, ফ্লিক্সআরকে টিভি, রাজধানী টিভি, ভয়েস টিভি, জেএটিভিবিডি, নিউজ ২১ বাংলা টিভি, জাগরণী টিভি, শোবাইপ্রাইম টিভি, দেশবন্ধু টিভি এবং সিএইচডিনিউজ ২৪ টিভি। নিবন্ধনের শর্ত হিসেবে বলা হয়, অনুষ্ঠান তৈরি ও প্রচারের ক্ষেত্রে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা, জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য আইন, বিধিমালা, নীতিমালা, পরিপত্র, নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।
বিদ্যমান কপিরাইট আইনের সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান মেনে চলতে হবে। এসব আইনের কোনো ধারা যাতে লঙ্ঘিত না হয়, সেদিকে বিশেষভাবে সচেতন থাকতে হবে। বাংলাদেশে বিদ্যমান সেন্সরশিপ কোড যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। সরকার প্রবর্তিত আইন বা বিধিবিধান অনুসরণ করে নিবন্ধনের জন্য কমিশন–নির্ধারিত নিবন্ধন ফি ও বার্ষিক নবায়ন ফি জমা দিতে হবে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (প্রেস-১) ড. ভেনিসা রড্রিক্স গণমাধ্যমকে বলেন, আগে আইপি টিভির নিবন্ধন ফি নির্ধারণ ছিল না। এবার নির্ধারণ করা হয়েছে। যারা নিবন্ধিত তাদের দিতে হবে। নতুন করে কেউ নিবন্ধন পেলে তাদেরও দিতে হবে।
তথ্য অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য অফিসার মো. শাহেনুর মিয়া বলেন, ১৪টি আইপি টিভি নিবন্ধনের জন্য অনুমোদন পেয়েছে তবে নিবন্ধন নেয়নি। তারা তথ্য অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নেবে। তিনি বলেন, এখন নতুনভাবে নির্দেশনা জারি হয়েছে, তথ্য অধিদপ্তর থেকে ফি দিয়ে নিবন্ধন নিতে হবে। যেভাবে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধন নিচ্ছে সেভাবে নিবন্ধন নেবে। নতুন করে কোনো আইপি টিভি অনুমোদন পেলে তাদেরও এ প্রক্রিয়ায় নিবন্ধন নিতে হবে। আইপি টিভি হলো একটি ডিজিটাল টেলিভিশন পরিষেবা; যা ব্যবহারকারীর ডিভাইসে ভিডিও সরবরাহ করে। কেবল বা স্যাটেলাইটের মতো প্রথাগত সম্প্রচার পদ্ধতি ব্যবহার করার পরিবর্তে আইপি টিভি বিষয়বস্তু পাঠানোর জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এটি ব্যবহারকারীদের তাদের পছন্দের শো এবং চলচ্চিত্রগুলো চাহিদা অনুযায়ী যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় দেখতে দেয়। আইপি টিভি পরিষেবা স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, স্মার্ট টিভি, এমনকি গেমিং কনসোলসহ বিভিন্ন ডিভাইসে অ্যাক্সেস করা যায়।