প্রকাশ: শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৫:০১ পিএম |
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে হতদরিদ্র গৃহহীন ও ভূমিহীনদের মাঝে বিতরন করা আশ্রয়ন প্রকল্পের অধিকাংশ ঘরই নিম্নমানের। ইতিমধ্যে বেশ কিছু ঘরে ফাটল ধরেছে। ঘর ভেঙে পড়ার ভয়ে অনেকেই বসবাস করতে চাচ্ছে না। মঠবাড়ীয়া উপজেলা গুইলশাখালী ইউনিয়নের হোতখালী আশ্রয়ন প্রকল্টে মৃত্যু আবদুল কাদের মুন্সির ছেলে সেকান্দার মুন্সি উঠতে পারেনি।এ ছাড়া মছঠবাড়ীয়া র্নিমিত আশ্রয়ন প্রকল্পের অধিকাংশ ঘর এক নামে বরাদ্দ নিয়ে অন্যের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মঠবাড়ীয়া খেতা চিরা প্রকল্পের ৪/৫ টি ঘর বিক্রি করা হয়েছে। চেরাগ গাছিয়া ২০ নম্বর ঘরটি বিক্রি করা হয়েছে ঝালকাঠি নিবাসী একজন ব্যক্তির কাছে।
সর্বশেষ আজ শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেকান্দার মুন্সির জন্য নির্মিত ঘরটির সামনের বারান্দার খুটির (পিলার) মাঝখানে ফাটল। ঘরের সামনের অংশের দেয়াল আধা ইঞ্চি থেকে দুই ইঞ্চি ফাটল রয়েছে। এর ফাকা দিয়ে ঘরের ভেতর অংশ দেখা যায়। একই দেয়ালের উপরের অংশে অনেকখানি যায়গা নিয়ে ফাটল দেখা গেছে। অনুমান হচ্ছে ঘরের সামনের দেয়ালটি যেকোন সময় ভেংগে পরবে। এসব আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মান করো হয় সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঊর্মি ভৌমিকের আমলে।
মঠবাড়ীয়া উপজেরা তুষখালী ইউনিয়নে আশ্রয়ন পকল্প নির্মান কাজ চলছে। স্থানীয়রা জানিয়েছে নির্মানের ক্ষেত্রে ইট বালু সঠিক ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। তারা আশ্রয়ন প্রকল্প সঠিক ভাবে নির্মাণ এবং বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। একই সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হঠাৎ করে তদন্ত করলেই ধরা পরে যাবে।

ভুক্তভোগী সেকান্দার মুন্সি বলেন, বসত ঘর না থাকায় স্ত্রী, প্রতিবন্ধি ছেলে ও স্বামী পরিত্যাক্ত মেয়ে নিয়ে পৌর শহরে ভাড়া বাসায় বসবাস করি। পত্রিকা বিক্রির কাজ করি, সেই সুবাদে সাংবাদিকদের সুপারিশে প্রায় দুই বছর আগে আশ্রয়ন প্রকল্পের একটি ঘর পাই। কিন্তু ঘর নির্মানের কিছুদিন পরেই ঘরে বড় রকমের ফাটল দেখা দিয়েছে। ভেঙে পড়ার ভয়ে ঘরে উঠতে পারিনি। বাসা ভাড়া দিতে গিয়ে প্রায় সময়ই অর্ধহারে থাকতে হয়। সেকান্দার মুন্সির স্বামী পরিত্যাক্ত মেয়ে লিলি বেগম বলেন, ঘর নির্মাণের সময় আমি তদারকিতে ছিলাম। নিজস্ব ঘর মজবুদ করার জন্য ব্যক্তিগত ভাবে ইট ও সিমেন্ট কিনে দিয়েছি। কিন্তু যখনই একটু দেখা-শুনা করতে দেরি হয়েছে, ঠিকাদার তখনই মানহীন মসলা ব্যবহার করেছে। বিষয়টি শুরু থেকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে (পিআইও) অবহিত করেছি। কিন্তু সে কার্যকরী কোন ব্যবস্থা নেয়নি। নির্মানের কিছুদিন পরেই ঘরে বেশ কয়েকটি স্থানে বড় ধরণের ফাটল দেখা দিয়েছে। ভেঙে পড়ার ভয়ে ঘরে উঠতে পারিনি। অপরদিকে গাছের সাথে তালা লাগানো টিউবয়েলটিও চুরি হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, আমার বাবা এমনকি সাংবাদিকরা ঘরটি মেরামতের জন্য পিআইওকে একাধিক বার বললেও তিনি মেরামতের উদ্যোগ নেয়নি। আমারা মানবেতর জীবন-যাপন করছি।
এসব বিষয় নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল কাইয়ূম বলেন, আমি মঠবাড়ীয়া উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে অল্প কয়েকমাস আগে এসেছি। বিগত সময় যিনি( ঊর্মি ভৌমিক) উপজেলা নির্বাহূ কর্মকর্তা ছিলেন তার আমলেই আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মাণ করা হয়।
তিনি বলেন, যখনই আশ্রয়ন প্রকল্পের কোন অনিয়মের খবর আসে তখনই সরেজমিনে চলে যাই। সম্প্রতি আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বিক্রি হয়েছে এমন তথ্য পেয়ে তৎক্ষনিক ভাবে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করা হয়েছে। তদন্তে পেয়েছি যার নামে বরাদ্দ সে ঘরে নেই অন্য একজন থাকেন। এর মানে এই নয় যে সঘরটি বিক্রি করেছে। তারপরও আমরা এই অভিযোগ গুরুত্বের সাথে নিয়ে তদন্দ করছি।
মঠবাড়ীয়া উপজেলার আশ্রয়ন প্রকল্পের অনিয়ম সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ন প্রকল্পের উপ পরিচালক মাহামুদুল হক ইতিমধ্যে অবহিত হয়েছেন। তিনি জানান, শিগগিরিই খোজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।